—প্রতীকী ছবি।
কোনও দেশ বা রাজ্যের অগ্রগতির পরিমাপটি বোঝা যায়, সামগ্রিক ভাবে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য, অতীত-বর্তমান মিলিয়ে এ-যাবৎ কালে এই রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রের যে ছবিটি উন্মোচিত হয়েছে তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায়, শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে বিন্দুমাত্র সচেতনতা নেই। সম্প্রতি যেমন জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত বেসরকারি বাস পাওয়া যায়নি বলে স্কুলবাসগুলিকে সেই কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ করেছে প্রশাসন। শুধুমাত্র তা-ই নয়, অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেরার সময় প্রবল গরমের মধ্যেই রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ স্কুলবাস থামিয়ে ভোটের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পরীক্ষা করেছে পুলিশ। ভিতরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের অসুবিধার প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়নি।
সত্য যে, অধিকাংশ স্কুলে হয় গরমের ছুটি চলছে, নয়তো পঠনপাঠন চলছে অনলাইনে। সুতরাং, প্রশ্ন উঠতে পারে, স্কুলবাসগুলিকে ভোটের কাজে লাগানোয় আপত্তি কিসের। মনে রাখতে হবে, সব বিদ্যালয়ে এখনও ছুটি পড়েনি। যে স্কুল খোলা, সেখানকার শিক্ষার্থীদের প্রবল গরমে বাসে আটকে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্বপালন অ-মানবিকতার নামান্তর। সেই কাজ অন্য ভাবে, অন্য সময়েও করা যেত। শিক্ষার্থীদের সময় এবং সুস্থ থাকার মূল্য নির্বাচন অপেক্ষা কম নয়। অথচ যে কোনও সরকারি প্রয়োজনে বিকল্প উপায়ের কথা চিন্তা না করে, শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলি ধরে টান দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান প্রশাসনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং সেই অভ্যাস শুধুমাত্র স্কুলবাসই নয়, স্কুলবাড়িগুলির ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত। নির্বাচন এলে স্কুলবাড়িগুলি ভোটকেন্দ্র হিসাবে নিরাপত্তা বাহিনীর থাকার কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। ফলে, দীর্ঘ সময় পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বছর গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে এসেছে। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়ম বজায় থাকলে রাজ্যের এক বৃহৎ অংশে নির্বাচন এবং গরমের ছুটি মিলে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকত। অথচ, শিক্ষা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শুধুমাত্র পাঠ্যক্রম শেষ করাতেই তার দায়িত্ব শেষ হয় না। যে কোনও অজুহাতে মাঝেমধ্যেই এমন দীর্ঘ বিরতিতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হয়। এ কথা জেনেও শিক্ষা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত না করে নির্বাচন চালানোর কথা এত দিনেও ভাবা হয়নি।
অবশ্যই, সব স্কুলবাসকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হবে না, ঠিক যেমন সব বিদ্যালয় নির্বাচনী কেন্দ্রে পরিণত হবে না। কিন্তু শিক্ষা এক সামগ্রিক বিষয়। সমস্ত শিক্ষার্থীর চাহিদার প্রতি যাতে সমান গুরুত্ব আরোপ করা যায়, তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের প্রধান কর্তব্য। সেখানে বাস তুলে নিলে যদি অল্প শতাংশ শিক্ষার্থীও যাতায়াতের অসুবিধায় পড়ে, বা স্কুল বন্ধ থাকায় সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। শিক্ষা একটি অত্যাবশ্যক বিষয়, খেয়ালখুশি মতো তাকে চালনা করা যায় না, এই কথাটিও প্রশাসনকে বুঝতে হবে। প্রয়োজনে আপৎকালীন পরিষেবা জ্ঞানে শিক্ষা এবং তৎসংক্রান্ত বিষয়গুলি সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এই নির্বাচনই শেষ নয়, আগামী নির্বাচনগুলির দিকে তাকিয়ে এখন থেকেই ভাবা প্র্যাকটিস করাও সরকারেরই কাজ।