Coronavirus in India

পিছাইয়া মেয়েরা

অতিমারির গতি প্রতিহত করিতে প্রতিষেধক ভিন্ন উপায় নাই। অথচ, ভারতে সেই প্রতিষেধক বণ্টনে অসাম্য লইয়া একাধিক অভিযোগ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৫:৪১
Share:

ভারতে নারী-পুরুষ বৈষম্যের চিত্রটি টিকাকরণকেও ছাড়িল না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সেই সাক্ষ্যই দিতেছে। জানা গিয়াছে, এই দেশে জানুয়ারি মাস হইতে গণ টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হইবার পর যত জন পুরুষ টিকা পাইয়াছেন, নারীর সংখ্যা তাহার তুলনায় কম। জুন মাসের গোড়া অবধি দেশে প্রতি ১০০০ জন পুরুষ পিছু মাত্র ৮৬৭ জন মহিলা টিকা লইয়াছেন। অর্থাৎ, অন্তত এক বার টিকাপ্রাপকদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা মহিলাদের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। ইহা সমগ্র দেশের চিত্র। ব্যতিক্রমও আছে। কেরলে যেমন পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অধিক টিকা পাইয়াছেন। ছত্তীসগঢ় এবং হিমাচলপ্রদেশেও সংখ্যাটি প্রায় সমান। কিন্তু বহু পিছনে পড়িয়া আছে জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ। পশ্চিমবঙ্গের ছবিটিও আশাপ্রদ নহে।

Advertisement

অতিমারির গতি প্রতিহত করিতে প্রতিষেধক ভিন্ন উপায় নাই। অথচ, ভারতে সেই প্রতিষেধক বণ্টনে অসাম্য লইয়া একাধিক অভিযোগ। জেলা-গ্রাম, সরকারি-বেসরকারি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বিভাজনরেখা বর্তমান। অতঃপর এই ক্ষেত্রে যদি লিঙ্গবৈষম্য দেখা যায়, তবে মূল উদ্দেশ্যটি ব্যর্থ হইতে বাধ্য। মনে রাখিতে হইবে যে, টিকাকরণ এক জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি। সেই কারণেই লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অর্থ— কোনও প্রকার বিভাজনের কোনও স্থান নাই এখানে। কেন কেরল পারিল, অথচ অন্য অনেক রাজ্য পারিল না— সেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখিতে হইবে। কেরল কেন পারে, তাহা বুঝা কঠিন নহে। দক্ষিণের এই রাজ্যটিতে নারী-পুরুষ সংখ্যার অনুপাত সমগ্র দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। সাক্ষরতার হার ৯৬.২ শতাংশ, ইহাও ভারতে সর্বোচ্চ। লিঙ্গ-নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য প্রতিষেধক সুনিশ্চিত করিবার কার্যে রাজ্যটির ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু, কেন এই বিপর্যয়ের দিনেও কেরল ব্যতিক্রম হইয়াই থাকিল, অন্য বহু রাজ্য সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করিতে পারিল না, তাহা জানা প্রয়োজন বইকি; তদনুসারে ব্যবস্থাও গ্রহণ করিতে হইবে।

তবে, এই বৈষম্য কি খুব অপ্রত্যাশিত? ভারতে সামাজিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্যের অনুপাতটি এমন গভীর ভাবে প্রোথিত যে, প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে অন্য রকম হওয়া অসম্ভব। লক্ষণীয়, পিছাইয়া পড়া রাজ্যগুলিতে, বিশেষত, উত্তরপ্রদেশের সমাজে মেয়েদের অবস্থা ভয়াবহ। অন্য অনেক রাজ্যে, বিশেষত, অনুন্নত অঞ্চলের পরিবারগুলিতে শিক্ষার প্রশ্নে মেয়েরা বহু পিছাইয়া। নানাবিধ সরকারি প্রকল্পের কল্যাণে পরিসংখ্যানে উন্নতি দেখা দিলেও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় বিশেষ পরিবর্তন আসে নাই। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনুরূপ চিত্র। যত ক্ষণ না রোগ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছাইবে, তত ক্ষণ অবধি মেয়েদের চিকিৎসকের নিকট যাইবার প্রয়োজন নাই— এখনও এমত ভাবেন অনেকে— মেয়েরা নিজেরাও সেই ভাবনা হইতে মুক্ত নহেন। অতিমারিতে ইহার সঙ্গে যুক্ত হইয়াছে ‘কোভিডে মেয়েদের মৃত্যুহার কম’, ‘প্রতিষেধক লইলে সন্তান ধারণে সমস্যা হয়’-এর ন্যায় প্রচার, যাহার কোনওটাই বিজ্ঞানসম্মত নহে। হয়তো এই ভাবনা হইতেই মেয়েরা পিছাইয়া পড়িতেছেন। এহেন অপপ্রচার দূর করিয়া সকলকে প্রতিষেধকের আওতায় আনিবার দায় সরকারের। যত দ্রুত সরকার তাহা উপলব্ধি করিবে, তত মঙ্গল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement