—প্রতীকী ছবি।
গত বছরের জুলাই থেকেই জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে এখনও অবাধে এককালীন ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদন, সরবরাহ এবং বিক্রি চলছেই। বেআইনি প্লাস্টিক প্রস্তুতকারকের সংখ্যার নিরিখে বিহার ও দিল্লিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে এই রাজ্য। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সম্প্রতি সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছে রাজ্য। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অভিযান চালিয়েছে বেআইনি প্লাস্টিক কারখানা চিহ্নিত করে। নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও করা হয়েছে। এই সক্রিয়তা সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞা জারির পর এক বছর চার মাস অতিক্রান্ত— এত কাল প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বেআইনি প্লাস্টিক কারখানাগুলি চলছে কী করে? তবে কি এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের নজরদারি এবং সদিচ্ছা, কোনওটিই যথেষ্ট পাকাপোক্ত নয়?
নজরদারির এ-হেন ফাঁক আরও প্রকট হয়ে উঠেছে সদ্যসমাপ্ত উৎসবের মরসুমে। এক দিকে প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে চলেছে প্রচার, পুর প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী নিয়মিত অভিযানও চলেছে দোকান-বাজারে। অথচ অন্য দিকে খালি চোখেই নজরে পড়েছে জলাশয়ে, রাস্তার ধারের আবর্জনায় প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর স্তূপ। প্রায় প্রতি বছর শহরের ডেঙ্গি মানচিত্রে অন্যতম শীর্ষ স্থানটি দখল করে থাকা দমদম ও দক্ষিণ দমদম এলাকায় পুজোর কারণে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। সেখানে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর জলাশয় পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে, অথচ পুজোয় ব্যবহৃত ফুল, মালা প্লাস্টিকে মুড়ে জলাশয়ে ফেলে দেওয়া সম্পূর্ণ ঠেকানো যায়নি। সর্বোপরি, উৎসবের দিনে একত্র খাওয়াদাওয়ার নিদর্শনস্বরূপ যত্রতত্র ফেলা হয়েছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক, থার্মোকলের থালা, বাটি, কাপ। ডেঙ্গির মরসুম এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ফলে, সেগুলিতে জল জমে ফের মশার আঁতুড়ঘর তৈরির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তা ছাড়া পুজোর সময় প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার কেনার প্রবণতাতেও রাশ পরানো যায়নি।
অর্থাৎ, ত্রুটি সীমাহীন। ত্রুটি যেমন প্রশাসনিক তরফে, তেমনই নাগরিক তরফেও। প্লাস্টিক ব্যবহার প্রসঙ্গে কিছু দিন পূর্বেই দক্ষিণ দমদম পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ, বর্জ্য পৃথকীকরণ, প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ অভিযানের ফলে আগের থেকে অনেকটাই বেশি সাড়া মিললেও তা পর্যাপ্ত নয়। প্রশ্ন হল, কেন নয়? যাঁরা এতবিধ সতর্কীকরণের পরেও যথাযোগ্য সাড়া দিচ্ছেন না, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে কি? ‘ইয়ার বাডস’, বেলুন, লজেন্স, আইসক্রিমে প্লাস্টিক স্টিকের ব্যবহার, প্লাস্টিকের কাপ, গেলাস, চামচ, ছুরি প্রভৃতি নিষিদ্ধ হলেও এখনও এগুলি নির্বিচারে চলছে কোন মন্ত্রে, তা খুঁজে বার করতে হবে বইকি। এ-হেন প্রচারে যাতে জনগণ সাড়া দেন, তার জন্য সুলভ বিকল্প খোঁজার কাজটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেই কাজেও রাজ্য বিশেষ এগোয়নি। সর্বোপরি, প্লাস্টিকের মতো বিপুল জনপ্রিয় বস্তুর ব্যবহার ঠেকাতে এক সুসংহত পরিকল্পনা প্রয়োজন। কেন্দ্রের হুঁশিয়ারির পর কিছু কালের সক্রিয়তা সেই অভাব পূরণ করতে পারবে না।