— ফাইল চিত্র।
মস্কোর ভয়ঙ্কর বন্দুক-সন্ত্রাসে একশো সাঁইত্রিশটি প্রাণের নিধন (শেষ খবর অনুযায়ী) এবং অগণ্য আহতের সামনে দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে স্তব্ধ পৃথিবী। এই ঘৃণ্য অমানবিক হত্যাকাণ্ডের দায় কার, তা এখনও স্পষ্ট ভাবে নিরূপিত হয়নি। ইসলামি গোষ্ঠী আইএস-এর উপর সন্দেহ সবচেয়ে বেশি: ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ জানিয়েছেন, তথ্যপ্রমাণ এখনও যেটুকু মিলেছে, তার অভিমুখ এই দিকেই। আমেরিকা থেকে নাকি এই মর্মে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল রাশিয়াকে। কিন্তু একটি সংশয় এখনও মিটছে না, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংগ্রহ যতটুকু, তাতে আইএস-এর পক্ষে এত ভয়াল আক্রমণ পরিকল্পনা করার শক্তি ও সংগঠন আছে কি না, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই দিক দিয়ে, সন্দেহের তিরের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠছে ইউক্রেনও— খাস ক্রেমলিন সেই সম্ভাবনাটির কথা বিশেষ জোরের সঙ্গে বলে চলছে। তবে, নিরাপত্তার ফস্কা গেরো ইত্যাদি কথা তুলে লাভ নেই। কেননা, রুশ সরকার ঠিকই বলেছে, কোনও দেশ, কোনও রাষ্ট্রের পক্ষে সম্পূর্ণ ভাবে ২৪x৭ সন্ত্রাস-প্রতিরোধী হয়ে থাকা সম্ভব নয়। নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিকদের এ ভাবে ‘টার্গেট’ করতে চাইলে শত রাষ্ট্রিক প্রস্তুতি সত্ত্বেও সন্ত্রাসীদের পক্ষে তা ভেদ করা মোটেই কঠিন নয়, সুতরাং সে দিক থেকে এই প্রশ্ন অর্থহীন যে ‘কেন এমন হতে পারল’।
বরং জরুরি প্রশ্ন এই হওয়া উচিত যে— কেন রাশিয়ার সাধারণ মানুষের দিকে এই আঘাত হানার কথা ভাবতে পারছে কিছু কিছু গোষ্ঠী। অসহায় মানুষদের পিছনে লুকিয়ে রাষ্ট্র কী এমন ভয়ানক কাজ করছে যাতে সেই মানুষগুলির উপর শোধ তুলছে কতিপয় ‘শত্রু’। রাষ্ট্রের তরফে এমন কোনও কাজ করা হচ্ছে না তো, যাতে অদৃশ্য জিঘাংসু প্রতিপক্ষকে এ কাজে ‘উৎসাহ’ দিতে হয়? প্রশ্নগুলি অতীব প্রয়োজনীয়। বিশেষত যখন ভোটের নামে সে দেশে একটি অতিকায় প্রহসন চলছে বছরের পর বছর। গণতান্ত্রিক পথে যখন কিছু আর করার থাকে না, তখনই অন্য পথের খোঁজ পড়ে কি? এই আত্মজিজ্ঞাসা ক্রেমলিনের জন্য জরুরি। ইসলামি সন্ত্রাসের ভয়াবহতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না, কিন্তু কিছু কিছু দেশের দিকে কেন ইসলামি সন্ত্রাসের আক্রমণ ধাবিত হচ্ছে, তার উত্তরটি খোঁজা ভাল। মস্কোয় হিংসার ঘটনাটি ঘটার এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে সে দেশে পঞ্চম বারের জন্য ‘জিতে’ এসেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই বছরের বেশি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অজস্র প্রাণ ও অপর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার পরও তাঁর জিততে অসুবিধা হয়নি। দুই ঘটনার মধ্যে কোনও যোগ আছে কি না, বলা সম্ভব নয়। তবে যোগ যে নেই, তা-ও কি বলা সম্ভব?
সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সঙ্কটের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শক্তি রাশিয়া এখন নিমজ্জিত। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের কথা, এই সঙ্কটের দায় কোনও ভাবে যাঁরা বহন করেন না, সেই অগণিত সাধারণ আবালবৃদ্ধবনিতা নাগরিকের জীবনেই নেমে আসছে শোকের হাহাকার। তবে এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই পুতিন সরকার ততটা ভাববে না, কেননা যে কোনও সন্ত্রাসকাণ্ডই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতি ধাবিত ধরে নিয়ে রাষ্ট্রই তার উত্তর তৈরি করে। এ দিকে মানবিক জীবনগুলি যে তার মূল্য চোকাতে ধ্বস্ত হয়ে যায়, সামান্য ক্ষতিপূরণ ধরে দেওয়া ছাড়া তার খবর রাষ্ট্রের রাখার প্রয়োজন পড়ে কই!