Teachers

শিক্ষার ব্যাধি

নিয়ম ভাঙার তদন্ত হচ্ছে, তা কেবল ন্যায্য নয়, অত্যন্ত জরুরি। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার যোগ্য শাস্তিবিধান নিশ্চয়ই আবশ্যক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সম্প্রতি মু্র্শিদাবাদে বিভিন্ন স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষকশিক্ষিকা গৃহশিক্ষকতাও করছেন, এই অভিযোগ পেয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ খোঁজখবর করছে— এই সংবাদটি এক বহুলপ্রচলিত বেনিয়মের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলের শিক্ষকরা (অর্থের বিনিময়ে) গৃহশিক্ষকতা করবেন না, এটা তাঁদের চাকরির শর্ত। কিন্তু অনেকেই সেই নিয়ম মানেন না, এ-কথা কারও অজানা নয়। এই অনাচার কোনও বিশেষ জেলার সমস্যা নয়। মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে সংগঠিত প্রতিবাদ এবং অভিযোগের সূত্রে সেই জেলার নাম সংবাদে এসেছে, এইমাত্র। নিয়ম ভাঙার তদন্ত হচ্ছে, তা কেবল ন্যায্য নয়, অত্যন্ত জরুরি। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার যোগ্য শাস্তিবিধান নিশ্চয়ই আবশ্যক। তার ফলে যদি নিয়ম ভাঙার প্রবণতা অংশতও কমে, ভাল।

Advertisement

কিন্তু যথার্থ প্রতিকার বা সংশোধনের বাস্তব সম্ভাবনা কতটুকু? বামফ্রন্ট আমলে স্কুলশিক্ষকদের বেতন কাঠামোয় বড় রকমের সংশোধনের পরবর্তী কালে তাঁদের গৃহশিক্ষকতায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের কথা জানা গিয়েছে, সরকারি কর্তাদের তিরস্কার ও তর্জনগর্জন শোনা গিয়েছে, আবার অচিরেই শোরগোল স্তিমিত হয়েছে। বর্তমান জমানায় গৃহশিক্ষকতা নিয়ে শোরগোল দূরে থাকুক, কোনও অভিযোগও আর বিশেষ শোনা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতির মাত্রা এবং চরিত্র এমনই ভয়াবহ যে, তার দাপটে শিক্ষা ও শিক্ষকতার পরিসরে অন্য নানা বেনিয়ম ইদানীং কার্যত আর কারও চোখেই পড়ে না। লক্ষণীয়, মুর্শিদাবাদের সংশ্লিষ্ট অভিযোগটিও দাখিল করেছে গৃহশিক্ষকতার পেশায় নিযুক্তদের একটি সংগঠন। স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকারা তাঁদের বাজার কেড়ে নিচ্ছেন বলে তাঁরা আপন স্বার্থের তাড়নায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শিক্ষা প্রশাসন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনিয়মের প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি, সমাজের মধ্যে থেকেও কোনও প্রতিবাদ ওঠেনি। স্বভাবতই আশঙ্কা হয়, তদন্ত ইত্যাদি সবই সাময়িক এবং লোকদেখানো প্রকরণ।

এই আশঙ্কার প্রধান কারণ: বেনিয়ম গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে স্কুলের পড়াশোনার দুরবস্থা কার্যকারণসূত্রে গভীর ভাবে জড়িয়ে আছে। বহু সরকারি বা সরকার-পোষিত স্কুলেই পঠনপাঠনে বিপুল ঘাটতি। ঘাটতির নানা কারণ আছে, কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ: অনেক শিক্ষকশিক্ষিকা নিজের কাজে ফাঁকি দেন। এই পরিস্থিতিতেই দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রছাত্রীরা গৃহশিক্ষকের উপর অতিনির্ভরশীল, এই বিষয়ে গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গ বহু দিন ধরেই ‘প্রথম সারিতে’। এমনকি প্রাথমিক ও প্রাক্-প্রাথমিক স্তরেও গৃহশিক্ষক রাখার রীতি উত্তরোত্তর বাড়ছে, অথচ স্কুলের পড়াশোনা ঠিকঠাক হলে অন্তত এই স্তরে বাইরের সাহায্য সম্পূর্ণ অনাবশ্যক হওয়ার কথা। শিক্ষক স্কুলে ফাঁকি দেন বলেই এত বেশি মাত্রায় গৃহশিক্ষকের প্রয়োজন হয়। এবং এমন বহু দৃষ্টান্ত অহরহ মেলে যে, শিক্ষক স্কুলে ঠিক ভাবে পড়াচ্ছেন না এবং নিজের (বা অন্য স্কুলের) ছাত্রছাত্রীদের অর্থের বিনিময়ে বিদ্যা বিক্রয় করছেন, তারাও বাধ্য হয়ে তাঁর দ্বারস্থ হচ্ছে। অর্থাৎ, বেতন নিয়ে কাজ করছেন না, আবার সেই কাজ-না-করার সুবাদেই বাড়তি রোজগার করছেন। এই বাস্তব শিক্ষকের পক্ষেই চরম লজ্জাকর। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই লজ্জার বোধ অতি ক্ষীণ। এখন ইতস্তত তদন্ত করে সেই বোধ ফেরানো যাবে কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement