Durga Puja Vacation

পাঠশালা বন্ধ

এটাও প্রশ্ন, যে সরকার পুজোর প্রকৃত নির্ঘণ্টকে তুচ্ছজ্ঞানে পিতৃপক্ষেই পুজোর উদ্বোধনে মাতে, তার কাছে পুজোর কারণে শিক্ষালয়ের পঠনপাঠন থমকে যাওয়া কখনও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে কি না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:০৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

যে  কোনও উৎসবের একটা নিজস্ব আমেজ থাকবে, এটাই সত্য, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই আমেজের সময়সীমা যদি ক্রমশ আড়েবহরে বাড়তে থাকে, এবং অসংখ্য মানুষের নিত্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে উৎসবের মাহাত্ম্যটিও শেষ পর্যন্ত ক্ষুণ্ণ হয় না কি? কলকাতার দুর্গাপুজো যেমন গত কয়েক বছরে নির্দিষ্ট চার দিনের সময়সীমা পেরিয়ে দশ দিনে এসে ঠেকেছে। দেবীপক্ষের শুরুর দিনটি থেকেই আক্ষরিক অর্থে এখন বাঙালির পুজো শুরু হয়। বড় মণ্ডপগুলি মহালয়ার পরেই খুলে যায় দর্শনার্থীদের জন্য, ভিড় করে ঠাকুর দেখা, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা চলে, এবং তীব্র যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে অন্যদের। শুধু এটুকুই নয়, পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে কার্যত অঘোষিত ছুটি শুরু হয়ে যায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কোথাও স্কুলের অদূরে মণ্ডপে তারস্বরে মাইক বাজে, কোথাও প্রবল যানজটের কারণে আটকে পড়ে স্কুলগাড়ি, কোথাও আবার বড় পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য আগত পুলিশকর্মীদের থাকার জন্য শিবির তৈরি হয় স্কুলেই। অথচ, খাতায়-কলমে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি পড়ার কথা ছিল পঞ্চমী থেকে।

Advertisement

এই অঘোষিত ছুটি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটিতে সার্বিক ভাবে শিক্ষা বিষয়টির প্রতিই এক চূড়ান্ত সরকারি উদাসীনতার টুকরো ছবি। ঠিক যে মানসিকতা নিয়ে গরমের ছুটিকে ক্রমশ দীর্ঘায়িত করা হয়, নির্বাচন উপলক্ষে দিনের পর দিন স্কুল বন্ধ রাখা হয়, দুর্গাপুজোর অজুহাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পিছনেও সেই একই নির্লিপ্তি কাজ করে। এক বারও ভাবা হয় না, এই ভাবে ক্রমশ শিক্ষাদিবসগুলির উপরে কোপ পড়তে থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ্যসূচি শেষ করা যাবে কী করে? যে সব শিক্ষার্থী গৃহশিক্ষকতার সুবিধা গ্রহণে অপারগ, পড়াশোনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপরেই নির্ভর করে থাকে, তারাই বা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে কী করে? সরকারি এবং সরকার পোষিত বহু স্কুলে পরিকাঠামোগত খামতি তীব্র। অনেক জায়গায় শিক্ষকের অভাবে সাধারণ সময়েই পঠনপাঠন ব্যাহত হয়। তার উপরে উৎসবের এই খাঁড়ার ঘা-এর খুব প্রয়োজন ছিল কি?

অবশ্য এটাও প্রশ্ন, যে সরকার পুজোর প্রকৃত নির্ঘণ্টকে তুচ্ছজ্ঞানে পিতৃপক্ষেই পুজোর উদ্বোধনে মাতে, তার কাছে পুজোর কারণে শিক্ষালয়ের পঠনপাঠন থমকে যাওয়া কখনও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে কি না। উৎসবের সঙ্গে রাজনীতি এবং ভোটব্যাঙ্কের যে সরাসরি সম্পর্ক আছে, শিক্ষার সঙ্গে তা নেই। শিক্ষা সরকারি কর্তব্যমাত্র, জনমোহিনী নীতি নয়, যাতে সরাসরি ভোটব্যাঙ্ক প্রভাবিত হবে। স্কুলে পুজোর ছুটি এগিয়ে আসা প্রসঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা জানিয়েছেন, তেমন কোনও নির্দেশিকা তাঁরা শিক্ষা দফতর থেকে পাননি। সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, পরিস্থিতিই যদি স্কুল খোলা রাখার প্রতিকূল হয়, তবে আলাদা নির্দেশিকার প্রয়োজন কী? এই বিষয়ে শিক্ষা দফতর অবগত নয়, এমনটি ধরে নিলেও প্রশ্ন থেকে যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট চৌহদ্দির মধ্যে কী করা উচিত, এবং উচিত নয়— সেই বিষয়টি তো সরকার জানে। তবে কেন বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে? উৎসব আনন্দের। কিন্তু যে উৎসব শিক্ষার অধিকারটিকে অগ্রাহ্য করে, অবিলম্বে সেই উৎসব নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement