Onion Price

দামের ঝাঁঝ

বাংলার চাষিরা দীর্ঘ কাল পেঁয়াজের চাষ করেছেন শীতকালে— সুখসাগর পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজ তোলা হয় চৈত্র-বৈশাখ মাসে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:২২
Share:

—ফাইল চিত্র।

পেঁয়াজি, পেঁয়াজ-পোস্ত কিংবা নিরীহ আলুসেদ্ধয় পেঁয়াজকুচি-কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে দেওয়ার বাঙালি-বিলাসিতাটুকু ফের বন্ধ হওয়ার মুখে। প্রায় প্রতি বছরের মতো এ বারও দামের নিরিখে পেঁয়াজ মধ্যবিত্ত বাঙালির হেঁশেল-ছাড়া হওয়ার উপক্রম। অক্টোবরের শেষেও যে পেঁয়াজ কলকাতার বাজারগুলিতে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, নভেম্বরের গোড়াতেই তার দাম দ্বিগুণ বেড়ে ছাড়িয়েছিল ৭০-৮০ টাকার গণ্ডি। পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজের জোগান আসে মূলত মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক থেকে। এই বছর মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে অনাবৃষ্টির কারণে বর্ষাকালীন পেঁয়াজের চাষে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া অভিযোগ, উৎসবের মরসুমে ভিন রাজ্য থেকে আসা পেঁয়াজভর্তি গাড়ি কলকাতার বাইরে আটকে দেওয়ায় অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। রাজ্যের জেলাগুলিতে যে পেঁয়াজের চাষ হয়, তার মজুতও শেষ। শীতের পেঁয়াজ এখনও বাজারে আসেনি। এর সম্মিলিত প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের দামে।

Advertisement

বাংলার চাষিরা দীর্ঘ কাল পেঁয়াজের চাষ করেছেন শীতকালে— সুখসাগর পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজ তোলা হয় চৈত্র-বৈশাখ মাসে। পূর্বে এ রাজ্যে যে পরিমাণ সুখসাগর পেঁয়াজ উৎপন্ন হত, তা বাজারে সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা সামাল দিতে পারত না বলেই ভিন রাজ্যের উপর নির্ভর করতে হত। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের পর পেঁয়াজ-চিত্রে কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পেঁয়াজে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে বর্ষাকালীন এডিআর প্রজাতির পেঁয়াজের চাষ শুরু হয় এই রাজ্যে, তাতে উৎপাদনও বাড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সমস্যা যথেষ্ট। এডিআর পেঁয়াজের বীজ তৈরি হয় শুধুমাত্র নাশিকে। সেই বীজ পেতে বিস্তর অসুবিধা। অতীতে দেখা গিয়েছে, কখনও সময়ে বীজ না পাওয়ায় চাষ শুরু করাই যায়নি, কখনও আবার বীজ এসেছে চাহিদার ঢের কম। ফলে, ভিন রাজ্যের উপর নির্ভরতা কমেনি। তদুপরি, এই বছর বাঁকুড়ায় বর্ষার পেঁয়াজের চাষ হয়নি। এবং মেদিনীপুরে টানা বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। ফলে, শহরের পাশাপাশি জেলাতেও দামের ঊর্ধ্বগতি বজায় থেকেছে।

একদা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মন্তব্য করেছিলেন, পেঁয়াজের দাম তাঁকে বিশেষ প্রভাবিত করে না, কারণ তাঁর খাদ্যতালিকায় এই বস্তুটি থাকে না। মনে রাখা ভাল, ১৯৯৮ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে তাঁর দলেরই সরকারের পতন ঘটলে কথা উঠেছিল, পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা ছাড়ানোই এ-হেন পতনের কারণ। বাস্তবে পেঁয়াজ সঙ্কট দূর করতে প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারকে নানাবিধ পদক্ষেপ করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। দাম নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স আছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন সামান্যই। অবৈধ মজুতদারি তো বটেই, বহু জায়গায় সংরক্ষণের যথাযথ পরিকাঠামো না থাকাও দাম বৃদ্ধির অনুঘটক হয়ে উঠেছে। সংরক্ষণের সুযোগের অভাবে মার খাচ্ছেন চাষিও। উপরন্তু মুনাফালোভী ফড়েদের উপদ্রব বিক্রেতা এবং ক্রেতা— উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। খাবারের পাতে পেঁয়াজ ‘অত্যাবশ্যক’ কি না, তা মানুষের রুচি স্থির করবে। কিন্তু প্রতি বছর দামের ঝাঁঝে মানুষ বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবে, এমনটাও মেনে নেওয়া মুশকিল। পেঁয়াজের চাষ ও আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য, জোগান বাড়াতে দু’দিক থেকেই চেষ্টা দরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement