Gujarat Assembly Election 2022

অভিভাবকহীন

স্বাধীন দেশে নির্বাচনপর্ব শুরু হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে আদর্শ ব্যবহার বিধি বা মডেল কোড অব কনডাক্ট প্রথম চালু হয় ১৯৬০ সালে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৩১
Share:

গুজরাটে ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

ভোট আসে, ভোট যায়, নতুন কিছু নয়। গুজরাত নির্বাচনের ফল বার হওয়ার সময় আসন্ন, জয়-পরাজয় ধার্য হবে সত্বর। তবে ফল বেরোনোর আগে একটি পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে ইতিমধ্যেই, সেটি গণতান্ত্রিক ভোটশৃঙ্খলার। স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে যে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বে এই শৃঙ্খলা রক্ষার ভার রাখা আছে, তার পরাজয় এক রকম স্পষ্ট হয়ে গেল এ বার। মডেল কোড অমান্য করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ভোটের দিনেও পদযাত্রা ও প্রচার করলেন, তাতে দেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নির্ধারিত নীতিপদ্ধতি চরম বলিষ্ঠতায় উপেক্ষিত হল। এবং নির্বাচন কমিশন যখন এমত ঘটনায় মৌখিক আপত্তিটুকুও করল না, তখন সেই নীতিপদ্ধতির অসারতাই দ্বিগুণ জোরে ঘোষিত হল, প্রমাণিত হল গণতন্ত্রের কাঠামোর অলক্ষ্য কিন্তু অবধারিত পশ্চাদপসরণ। মনে পড়তে পারে, ২০১৭ সালে গুজরাত বিধানসভার ভোটের সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজের ভোটটি দিয়ে বেরিয়ে এসে প্রচারে হেঁটেছিলেন। অভিযোগ সেই সময়েও তোলা হয়েছিল: নিষ্ফল অভিযোগ। তবে বিরোধী নেতাদের আপত্তি ও প্রতিবাদ বিষয়ে একটি কথা বলতেই হয়। ভারতীয় রাজনীতির চালচলন এত দিনে যথেষ্ট পরিচিত, বাবু যা করেন, বাবুর বিরোধীরা কিছু কাল পরেই তা করেন। সকলে না হলেও, অনেকেই। আজ প্রধানমন্ত্রী মোদী বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, কাল সেই একই বিধিভঙ্গের অভিযোগ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল বিষয়ে বিজেপি দলের মুখ থেকে ধ্বনিত হচ্ছে। সুতরাং সম্ভবত মূল প্রশ্নটি এখন আর ‘কে’ নয়— বরং ‘কী’ এবং ‘কেন’। নির্বাচনী বিধি ভাঙার, বিধিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার স্পর্ধাটি প্রতিষ্ঠা করার এই সংস্কৃতিটিই কেন দেশে এই ভাবে চালু হয়ে গেল, এবং কেন কোনও প্রতিষ্ঠানের তরফে ভর্ৎসনা বা পদক্ষেপের ব্যবস্থা হল না, এটাই ভাবার বিষয়।

Advertisement

ইতিহাস বলছে, স্বাধীন দেশে নির্বাচনপর্ব শুরু হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে আদর্শ ব্যবহার বিধি বা মডেল কোড অব কনডাক্ট প্রথম চালু হয় ১৯৬০ সালে। এবং তার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে কেরল রাজ্য, যেখানে ওই বছর বিধানসভা ভোটে এই ব্যবহারবিধি সযত্নে অনুসরণ করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী বিধিগুলি গ্রথিত হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের নিজেরই ভাষায়, এই ব্যবহারবিধির মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলির, এবং প্রার্থীদেরও। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় সমাজমাধ্যমের ব্যবহারকেও এর আওতায় আনার চেষ্টা করে কমিশন, কিন্তু বহু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।

নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তার নিজের ব্যবহারবিধি, এবং উদ্দেশ্য-বিধেয় সংবিধানেই নির্দেশিত। মুশকিল হল, বর্তমান ভারতে কোনও ক্ষেত্রেই যে কমিশন সেই উদ্দেশ্য-বিধেয় মানে না, তা অবশ্যই বলা যাবে না। গুজরাতেই বিরাট পরিমাণ নেশাদ্রব্য আটক হয়েছে ভোটপ্রচার কালে। বহু বেআইনি ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং নামাতে বাধ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ কমিশন সম্পূর্ণ উদাসীন নয়, ক্ষেত্রবিচারে উদাসীন। এই পরিস্থিতি কি আরও উদ্বেগ ও আশঙ্কার জন্ম দেয় না? জনমানসে কি তবে কমিশন এই বার্তা পৌঁছতে চায় যে কিছু ক্ষেত্রে, কারও কারও ক্ষেত্রে কোনও বাধা দেওয়া যাবে না, সেটাই নতুন দস্তুর? বিশেষ করে যখন গুজরাত থেকে শোনা যায়, জনজাতিভুক্ত প্রার্থী কান্তিভাই খারাডিকে এমন আক্রমণ করেছে বিজেপির দুর্বৃত্তরা যে তিনি প্রাণভয়ে জঙ্গলে লুকোতে বাধ্য হয়েছেন, কমিশনের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন তাঁর প্রাণসুরক্ষার আর্জি জানিয়ে, এবং তেমন কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি— কী বলে এই সংবাদ ভারতের ভোটব্যবস্থা বিষয়ে? এই কি গণতন্ত্রের নমুনা? যে গণতন্ত্রের গৌরবে আন্তর্জাতিক সভায় দেশের জয়গান গাওয়া হয়?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement