Cyclone Amphan

চক্রবৎ

আক্ষেপের বিষয়, বর্তমানে আবহবিদ্যার অগ্রগতির ফলে ঝড়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ পূর্বাভাস মিলিলেও তাহার প্রস্তুতি যথোচিত হয় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২১ ০৬:০৯
Share:

আমপানের পর এক বৎসর কাটিয়া গেল। ক্ষত এখনও শুকাইল না। প্রায় তিন শতকের রেকর্ডভাঙা ঝড়ে পশ্চিমবঙ্গ যে ক্ষতির মুখে পড়িয়াছিল তাহা আজও মেরামত হয় নাই, কর্মহারা পেশায় ফিরিতে পারেন নাই, বাস্তুহারা গৃহে। সুন্দরবনের বিস্তৃত চাষজমি লবণাক্ত জলে নিমজ্জিত হইয়াছিল, অদূর ভবিষ্যতে চাষযোগ্য হইবার আশাটুকুও নাই। পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামাঞ্চলের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ধ্বংসলীলা যে ধাক্কা দিয়াছিল, তাহা পূরণ বা সংস্কার হওয়া বৎসরকালের কাজ নহে। আমপানের বর্ষপূর্তির দিনে আরও এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আগমনের খবর শুভ ইঙ্গিত বহন করিতেছে না। আশঙ্কা হয়, বহু বাধা পার করিয়া ক্ষত সারাইবার কাজটি যতখানি হইয়াছে, সেইটুকুও ভাসিয়া যাইবে না তো? আয়লা সামলাইয়া পূর্ববৎ জীবনযাপনে ফিরিতে তিন-চার বৎসর— কোথাও তাহারও অধিক— পার হইয়াছিল। এগারো বৎসর পর আমপান আসিয়া ফের সব লন্ডভন্ড করিয়াছিল— ভয়াল স্মৃতি ফিরাইয়াছিল। বৎসর ঘুরিতেই আরও এক ঘূর্ণিঝড় আসিলে সেই ধাক্কা ভয়াবহ হইবে।

Advertisement

আক্ষেপের বিষয়, বর্তমানে আবহবিদ্যার অগ্রগতির ফলে ঝড়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ পূর্বাভাস মিলিলেও তাহার প্রস্তুতি যথোচিত হয় না। আমপানের সময়ে ঝড়ের অভূতপূর্ব ভয়াবহতার অনুমান থাকিলেও প্রশাসনের তরফে সর্বত্র উপযুক্ত বন্দোবস্ত ছিল না। উপকূলবাসী মানুষকে অন্যত্র সরাইয়া লওয়া, কিংবা মৎস্যজীবীদের সমুদ্র হইতে ফিরাইয়া আনিবার কাজটি সুষ্ঠু ভাবেই হইয়া থাকে। ইহার ফলে প্রাণক্ষয়ের আশঙ্কা হ্রাসপ্রাপ্ত হইলেও সম্পদ ও সম্পত্তিক্ষয় রোধ করা যায় না। প্রশাসনের তরফে ধ্বস্ত গৃহ পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থসহায়তা কিছু মানুষ পাইলেও বহু জনের নিকট অদ্যাবধি তাহা পৌঁছায় নাই, ফসল বিমার অর্থ আরও অমিল। সমস্যা নীতির নহে, প্রক্রিয়ার— প্রশাসনের উচ্চমহলে পরিকল্পনার অভাব না হইলেও তৃণমূল স্তরে দুর্নীতি ও অদক্ষতায় সেই লাভ গরিব মানুষ অবধি পৌঁছাইতেছে না। একাধিক স্থলে স্থানীয় মানুষের দুর্গতি বিষয়ে পঞ্চায়েত বা জেলা প্রশাসন অবগতও নহে। অব্যবস্থার কারণও অতএব অনুমেয়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সাগরের উষ্ণতা বাড়িতেছে, ঝড়ের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান, ভবিষ্যতে আরও বাড়িবে। বিগত দুই বৎসরে বঙ্গোপসাগরে তৈয়ারি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ভিতর তিনটি— ফণি, বুলবুল ও আমপান— স্থলভাগে প্রবল আঘাত হানিয়াছে; এক্ষণে অপেক্ষা ‘ইয়াস’-এর। অব্যবস্থার কারণ যাহাই হউক, ফলাফল ভবিতব্য বলিয়া গ্রহণ করিলে নানা প্রশ্ন উঠিবে। যে ঝড়ের পূর্বাভাস উপস্থিত এবং যাহা প্রায় নিয়মে পর্যবসিত, তাহার মোকাবিলা আপৎকালীন ভিত্তিতে হইবে কেন? কেন মানুষকে স্বেচ্ছাসেবীগণের উদ্যোগে এত দূর ভরসা করিতে হইবে? কেন প্রশাসনিক পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও দুর্দশার পূর্বানুমান থাকিবে না? এই বারের ঝড় সামলাইতে আগাম বৈঠক সারিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝড়ের পরে কে কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হইল সেই হিসাব মিলাইয়া দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন। এবং, যে বিপদ বৎসরান্তে ফিরিয়া আসিতেছে তাহার জন্য এক দক্ষ, স্বচ্ছ ও উদ্যোগী ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত করা আবশ্যক। ঝড় বৎসরকালে চক্রাকারে আসিলে তার মোকাবিলাও সুস্থায়ী হইতে হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement