ফাইল চিত্র।
মহা ধুমধাম করিয়া যে যাত্রা শুরু হইয়াছিল, তাহা আবার আসিয়াছে আমড়াতলার মোড়ে। উজ্জ্বলা প্রকল্পে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ পাইয়াছিল যে পরিবারগুলি, তাহাদের অর্ধেকই ফিরিয়া গিয়াছে কেরোসিন, কাঠকুটা, ঘুঁটের ব্যবহারে। সাড়ে আটশো টাকা দিয়া গ্যাস সিলিন্ডার কিনিবার ক্ষমতা তাহাদের নাই। সম্প্রতি ছয়টি রাজ্যের নগরবাসী দরিদ্র পরিবারগুলিতে সমীক্ষা করিয়া এই তথ্যই মিলিয়াছে। ইহার অর্থ, এলপিজি সংযোগের পরিসংখ্যান দেখিয়া তাহার ব্যবহারের আন্দাজ করিলে ভুল হইবে। বস্তুত, ‘কাউন্সিল অন এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার’ এই সমীক্ষা এমনই তথ্য পাইয়াছে যে, গ্যাস সংযোগ সত্ত্বেও ১৬ শতাংশ পরিবার সাবেক জ্বালানিই ব্যবহার করিতেছে, এবং এক-তৃতীয়াংশ পরিবার গ্যাসের সহিত কয়লা-কেরোসিনও মজুত রাখিতেছে। এমন তথ্য ইতিপূর্বেও মিলিয়াছে। ২০১৮ সালে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মধ্যপ্রদেশে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়াছিল, উজ্জ্বলা প্রাপকদের ৮৫ শতাংশ কাঠের উনুন ব্যবহার করিতেছেন। ইহার অর্থ, উজ্জ্বলা প্রকল্পের মূল যে উদ্দেশ্য, তাহা ব্যাহত হইতেছে। কয়লার উনুন হইতে উদ্গত ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ ঘটায়, রন্ধনরত মহিলাদের স্বাস্থ্যহানি করে। তৎসহ, পূর্বে যে সকল জ্বালানি সুলভ ছিল, এখন তাহা নাই। শহরাঞ্চল তো বটেই, গ্রামগুলিতেও কাঠ, গোবর, ফসলের অবশিষ্ট প্রভৃতি দুর্লভ হইয়াছে। তাই নিরাপদ, দূষণমুক্ত জ্বালানি সুলভে মিলিবার চাহিদা তীব্র হইয়াছিল দরিদ্র পরিবারগুলিতে।
‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা প্রকল্প’ দরিদ্র মহিলাদের দূষণহীন জ্বালানি দিবার অঙ্গীকার করিয়াছিল। কার্যক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হইয়া দেখা দিল গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। সিলিন্ডার ব্যবহারের যে তথ্য মিলিতেছিল (পরিবার-পিছু বৎসরে দুই-তিনটি), তাহাতে স্পষ্ট হইয়াছিল যে, এলপিজি অপরাপর জ্বালানির স্থান অধিগ্রহণ করে নাই, একটি বিকল্প হিসাবে গৃহীত হইয়াছে শুধু। গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারীদের তথ্যে প্রকাশ, উজ্জ্বলা গ্রাহকদের পাঁচ জনে এক জন একটিও সিলিন্ডার কখনও ক্রয় করেন নাই। অর্থাৎ, গ্যাস সংযোগ বিনামূল্যে মিলিলেও গ্যাস সিলিন্ডারের দাম দরিদ্রের সাধ্যাতীত। তদুপরি, কেবল গত ডিসেম্বর মাস হইতে সাত বার দাম বাড়িয়াছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এখন গ্যাস সিলিন্ডারের দাম সাড়ে আটশো হইতে হাজার টাকা হইয়াছে। অথচ, ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ে নাই।
বিনামূল্যে (বা স্বল্পমূল্যে) খাদ্যশস্য মিলিতেছে, অথচ দুর্মূল্য জ্বালানি— ইহার কী অর্থ হয়? লকডাউনে বহু নাগরিক সংগঠন দরিদ্র এলাকাগুলিতে চাল-ডাল বিতরণ শুরু করিয়াও, অচিরে রান্না-করা খাবার বিতরণ শুরু করিতে বাধ্য হইয়াছিল। কারণ জ্বালানি মহার্ঘ, কিনিবার সাধ্য দরিদ্রের নাই। সম্প্রতি তেল সংস্থাগুলি দাবি করিয়াছে, পরিবার-পিছু গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয়ের সংখ্যা বাড়িয়াছে। কিন্তু অতিমারি-উত্তর আর্থিক সঙ্কটে তাহা এমনই অস্বাভাবিক, যে দুর্নীতির আশঙ্কা ঘনাইয়াছে। উজ্জ্বলা প্রকল্পের ‘সাফল্য’ কেবল নূতন গ্যাস সংযোগের সংখ্যা, অথবা সিলিন্ডারের সংখ্যা দিয়া মাপিলে ভুল হইবে। দরিদ্রের রসুইয়ে জ্বালানি ব্যবহার বুঝিতে নিয়মিত সমীক্ষা প্রয়োজন। দূষণকারী জ্বালানির ব্যবহার নির্মূল করিবার লক্ষ্য এখনও বহু দূর।