grant

সুরক্ষার পথ

ভারতের ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার উপায় দেশের নাগরিক সমাজের আর্থিক অথবা বৌদ্ধিক বিচ্ছিন্নতা নহে, ভারত সরকার তাহা কবে বুঝিবে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৯
Share:

ভারতে বিদেশি অনুদান আসিবার পথটি অতিশয় সঙ্কীর্ণ করিয়াছে সরকার। সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানাইয়াছে, বিদেশি অর্থ যাহাতে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ককে প্রভাবিত করিতে না পারে, তাই আইন সংশোধন করিয়া (ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট, ২০২০) সরকার ভুল করে নাই। ইহাতে বিপাকে পড়িয়াছে অসরকারি সংস্থাগুলি। তাহাদের অভিযোগ, নূতন আইনের ফলে তাহাদের সংগঠিত হইবার অধিকার, জীবিকা অর্জনের অধিকার খর্ব হইয়াছে। কেন্দ্রের দাবি— অবাধ, অনিয়ন্ত্রিত বিদেশি অনুদান প্রাপ্তি মৌলিক অধিকার নহে। দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ঐক্যের স্বার্থে এই আইন প্রয়োজন, এবং ইহার প্রধান উদ্দেশ্য জনজীবনে বিদেশি অনুদানের প্রভাব না পড়িতে দেওয়া। সরকার ইহাও জানাইয়াছে যে, যাহা ‘জাতীয় স্বার্থ’ অথবা ‘জনস্বার্থ’ পরিপন্থী, তেমন কোনও কাজের জন্য বিদেশি অনুদান, বা আতিথ্য গ্রহণ নিষিদ্ধ। সরকারের এই বক্তব্যে ন্যায্য ও অন্যায্য নানা দাবি জড়াইয়া গিয়াছে। ইহা অনস্বীকার্য যে, সকল অসরকারি সংস্থার উদ্দেশ্য সাধু নহে। অতীতে দেখা গিয়াছে, জনসেবাকে উপলক্ষ করিয়া অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ করিয়াছে। কেহ বিপজ্জনক ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক অথবা রাজনৈতিক মতবাদ ছড়াইয়াছে। এমনকি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য অসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বিদেশি অর্থ পাইবার দৃষ্টান্তও আছে। নাশকতা এবং দুর্নীতির উপর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সরকারের কর্তব্য। কিন্তু তাহার যথোচিত ব্যবস্থা কি নাই? অবৈধ অর্থ আটকাইতে অনুদানের পথ রুদ্ধ করিতে হইবে কেন?

Advertisement

ভারতের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখিতে হইবে, কিন্তু ভারতের নাগরিক যে বিশ্বনাগরিক, সেই সত্যকেও সম্মান করিতে হইবে সরকারকে। বিশেষত মানবাধিকার, নারী অধিকার, স্বচ্ছ প্রশাসন, নারী ও প্রান্তবাসীর অধিকারের সুরক্ষা, দারিদ্র দূরীকরণ ইত্যাদি আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি বিবিধ দেশের সরকারকে মনোযোগী ও দায়বদ্ধ করিবার কাজ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি করিয়া থাকে। ভারতেও তাহার প্রয়োজন যথেষ্ট। সন্ত্রাস নিবারণ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য— তাহার অনেক উপায় সরকারের হাতে আছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি অত্যন্ত শক্তিশালী। দেশদ্রোহিতা, সাম্প্রদায়িক সংঘাত নিবারণ আইনগুলিও দুর্বল নহে। বিদেশি মুদ্রার ব্যবহারে বিধি লঙ্ঘনকারীদের সরকার চিরকাল কঠোর ভাবে দমন করিয়াছে। এই সকল আইন ও বিধি যথাযথ প্রয়োগ করিলে অনুদানের অবৈধ ব্যবহার প্রতিহত করা সম্ভব। দরিদ্র, প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে নিয়োজিত কয়েক সহস্র অসরকারি সংস্থার অনুদান রুদ্ধ করা সরকারি নীতি হইতে পারে না।

আন্তর্জাতিক নানা সংগঠনের অঙ্গ হইয়া, এক উদ্দেশ্যে, একত্রে কাজ করিবার অধিকার ভারতীয়দের রহিয়াছে। কোনও কাজ জাতীয় স্বার্থ বা জনস্বার্থকে লঙ্ঘন করিতে পারে, এই আশঙ্কায় সকল কাজ রুখিবার প্রবণতা স্বৈরাচারের লক্ষণ। ভারতের বিশাল, বিচিত্র রাজনৈতিক বিতর্ককে কেবল বিদেশি মুদ্রার শক্তিতে প্রভাবিত করা কি সম্ভব? আর, অনুদানের পথ বন্ধ করিলেই কি ভিন্ন ধারণার আগমন রুদ্ধ হইবে? ভারতের ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার উপায় দেশের নাগরিক সমাজের আর্থিক অথবা বৌদ্ধিক বিচ্ছিন্নতা নহে, ভারত সরকার তাহা কবে বুঝিবে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement