COVID-19

অতিমারি ও তত্ত্ব

উহান শহরের হুয়ানান সি-ফুড বাজার ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ০৭:০৭
Share:

চার দিকে কনস্পিরেসি থিয়োরি কিংবা চক্রান্ত তত্ত্ব চলছে। সন্দেহ মানুষের এক বড় বাতিক। ওর প্রাবল্যে চক্রান্তের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কার্যকারণের বিচিত্র যোগসূত্র আবিষ্কৃত হয়। হাতের কাছে উদাহরণ করোনা ব্যাধি। গত দু’বছরে ওই অতিমারি কেড়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ। এখনও বলি যাচ্ছে প্রাণ। অতিমারি রোগটি এখনও দূর হয়নি। এর মধ্যে যে তত্ত্বটা উঠে এসেছে, তা হল করোনাভাইরাস নাকি চিন দেশে উহান শহরে বিশেষ একটি গবেষণাগার-প্রসূত। ওই ভাইরাস নাকি জৈব অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত। পৃথিবীতে জনসংখ্যা কমানো নাকি ওর উদ্দেশ্য। এমন তত্ত্ব করোনার টিকা সম্পর্কেও বহাল। করোনার টিকা বিক্রি করে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো যে মুনাফা করেছে, সেটা সত্যি। কিন্তু তা বলে করোনার টিকা নেওয়া মানে ওষুধ কোম্পানির মুনাফার সুযোগ করে দেওয়া, এ যুক্তিতে টিকার বিরোধিতা অর্বাচীনের কাজ। টিকা নেওয়ার পরেও মানুষ মারা গিয়েছে, কিন্তু তাতে টিকার চাহিদা কিছু কমেনি। টিকার বিশাল চাহিদা প্রমাণ করে বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর অভিযোগে টিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মূর্খামি। তেমনই পৃথিবীর জনসংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে ল্যাবরেটরি থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানো চিন্তা করাও বোকামি। যেন চিন দেশে মানুষ করোনায় মারা যায়নি, যেন অন্য দেশেই কেবল ওই ভাইরাসের বলি হয়েছে মানুষ।

Advertisement

করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ‘পেশেন্ট জ়িরো’ (প্রথম রোগী) খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে তাকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চিন দেশের যে ৪১ জন নাগরিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় করোনা উপসর্গ নিয়ে, তার মধ্যে ওই ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, উহান শহরের সি-ফুড মার্কেট হুয়ানান-এর সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না। বিশেজ্ঞদের ধারণা, ওই বাজার থেকে করোনার সূত্রপাত। ওই বাজারে বিভিন্ন জন্তু বিক্রি হয়, চিনা পরিবারে যা খাদ্যদ্রব্য। করোনাভাইরাস জন্তু থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে, এটা জানার পর চিনের সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং ন্যাশনাল হেলথ কমিশন-এর বিজ্ঞানীরা এর পর ৪২৫ জন করোনা রোগীকে নিয়ে এক সমীক্ষা চালান। দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনাভাইরাস পশু থেকে মানুষের দেহে ঢোকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে। সরকারি নথিপত্র বলছে, করোনার প্রথম প্রকোপ ধরা পড়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। পেশেন্ট জ়িরো খোঁজার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েছিলেন সে সব রোগীকে, যাঁদের নিউমোনিয়ার প্রত্যক্ষ কারণ অজানা। অর্থাৎ, যাঁদের নিউমোনিয়া হয়েছে, অথচ ভাইরাসটি নতুন ধরনের। প্রশ্ন হল: পেশেন্ট জ়িরো সন্ধান কি সত্যিই জরুরি। লন্ডনে রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজের অধ্যাপক রিচার্ড কক অবশ্য সেটাই জোর দিয়ে বলেছেন। যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই পেশেন্ট জ়িরো খুঁজে পেলে গবেষণার সুবিধা হয়। জানা যায়, কোন পথে জীবাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে।

উহান শহরের হুয়ানান সি-ফুড বাজার ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, বাদুড় থেকে নয়, বিশেষ জাতের কুকুর থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে করোনাভাইরাস। ক্যালিফর্নিয়ার লা হোয়া-য় স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন ওই মিল খুঁজে পেয়েছেন। দেখেছেন, ২০০২ সালে যেমন সার্সের ভাইরাস পশুবাজার থেকে ছড়িয়েছিল, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল চিন দেশে পশুবাজার থেকেই। ১৭ বছর পরে ওই দেশের এক পশুবাজারই আর এক অতিমারির মূলে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement