Taxi

পরিষেবার স্বার্থে

শুধু হলুদ ট্যাক্সির ক্ষেত্রেই নহে, প্রত্যাখ্যানের রোগটি ছড়াইয়াছে অ্যাপ ক্যাবগুলির মধ্যেও। অথচ, শুরুর দিনগুলিতে যাত্রিস্বাচ্ছন্দ্যের অন্য রূপ দেখাইয়াছিল ক্যাবগুলি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলিকাতা শহরের হলুদ ট্যাক্সিচালকদের যাত্রী-প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি বহু কালের। অপছন্দের গন্তব্যে ‘না’ বলা ছাড়াও মিটারে কারচুপি; জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখাইয়া বাড়তি টাকা চাওয়া; অসময়ে তো বটেই, হাসপাতাল, বিমানবন্দর এমনকি দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের অসহায়তার সুযোগ লইয়া অধিক ভাড়া আদায় করিবার মতো অসংখ্য অভিযোগও তাহাদের বিরুদ্ধে। অতিমারি কালে ব্যবসা মার খাইলেও এই সংস্কৃতিতে তেমন ভাটা পড়ে নাই। অভিযোগের ভিত্তিতে তাই হলুদ ট্যাক্সির বিরুদ্ধে তৎপর হইয়াছে কলিকাতা পুলিশ। বেশ কিছু দিন ধরিয়াই লালবাজারের ট্র্যাফিক পুলিশের বিশেষ তল্লাশি বাহিনী হাসপাতাল-সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযান চালাইতেছে। ইতিমধ্যেই শতাধিক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে যাত্রী প্রত্যাখ্যান বা অতিরিক্ত ভাড়া চাহিবার মামলা রুজু কিংবা জরিমানা আদায় করা হইয়াছে।

Advertisement

ট্যাক্সিচালকদের ‘জুলুম’-এর বিরুদ্ধে পুলিশি তৎপরতা পূর্বেও হইয়াছিল। ২০১৪ সালে এমন অভিযান চলে। সেই সময়ে যাত্রী প্রত্যাখ্যান করিলে মোটা টাকা জরিমানা করা হইত। তাহাতে সাফল্যও মিলিয়াছিল। কিন্তু, সেই অভিযান বন্ধ হইবার পর পরিস্থিতি আবার পূর্ববৎ হইতে বেশি সময় লাগে নাই। প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, এত বৎসরেও এই সংস্কৃতির পরিবর্তন হইল না কেন? পরিষেবা প্রদানের যে কাজটির সঙ্গে তাঁহারা যুক্ত, সেই কাজটি তো যথাযথ ভাবে করিতে হইবে। সেখান এমন ঔদ্ধত্য বা অনৈতিকতার কোনও স্থান নাই। প্রকৃতপক্ষে উপভোক্তাদের অধিকারগুলি এই দেশে যথেষ্ট সুরক্ষিত না হইবার ফলে এবং উপভোক্তারা নিজেরাও সেই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন না হওয়ায়, তাঁহাদের বারংবার এই ধরনের হয়রানির শিকার হইতে হয়। সেই ক্ষেত্রে প্রশাসনকেই কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করিবার দায়িত্ব লইতে হইবে। যেমন এখন হইতেছে। তবে অভিজ্ঞতা বলে, এই ক্ষেত্রে কিছু দিন কড়া নজরদারি চলিবার পরই, তাহা শিথিল হইতে শুরু করে। নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের দায়িত্ব যে হেতু প্রশাসনের, তাই সময়ে সময়ে এই বিষয়গুলির উপরে নজরদারি বজায় রাখিতে হইবে। শুধু জরিমানা বা মামলা নহে, কোনও ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে বারংবার প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ মিলিলে লাইসেন্স বাতিল করিবার মতো কড়া পদক্ষেপও করিতে হইবে।

তবে শুধু হলুদ ট্যাক্সির ক্ষেত্রেই নহে, প্রত্যাখ্যানের রোগটি ছড়াইয়াছে অ্যাপ ক্যাবগুলির মধ্যেও। অথচ, শুরুর দিনগুলিতে যাত্রিস্বাচ্ছন্দ্যের অন্য রূপ দেখাইয়াছিল ক্যাবগুলি। প্রকৃত অর্থেই গাড়িবিহীনদের ব্যক্তিগত যানসফরের সুখ আনিয়া দিয়াছিল তাহারা। তীব্র গরম বা দূষণে নাজেহাল হইবার হাত হইতে মুক্তি, ভাড়া লইয়া চালকের সহিত বচসা বন্ধ। গভীর রাত্রিতে হাসপাতাল, বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে ছুটিতে হইলে দুয়ারে ঠিক সময়ে হাজির হইত অ্যাপ ক্যাবগুলি। এখনও যে মিলে না, তাহা নহে— তবে প্রত্যাখ্যানের উদাহরণ সেখানেও বিস্তর। ক্ষেত্রবিশেষে সাধারণ ট্যাক্সিচালকদের মতো তাঁহারাও যাত্রীদের সহিত দুর্ব্যবহারে লিপ্ত হইতেছেন। সুতরাং, অ্যাপ ক্যাবের বিরুদ্ধেও অভিযানে নামিতে হইয়াছে পুলিশকে। প্রত্যাখ্যানের এই সংস্কৃতি ভাঙিবার আশু প্রয়োজন। তাহা কী ভাবে সম্ভব, সেই বিষয়ে প্রশাসনকেই অগ্রণী ভূমিকা লইতে হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement