Ghughumari

কোনও প্রশ্ন নহে

প্রশ্ন হইল, যদি ‘টিকা হইয়াছে’ বলিয়া কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিকতায় ফিরিবার ব্যবস্থা হয়, তবে ‘টিকা হয় নাই’ যাহাদের, তাহাদের অফলাইন পদ্ধতিতে দুই-দুই বার পরীক্ষা কেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২০
Share:

প্রতীকী ছবি

পরিকল্পনাবিহীন কাজ কখনও কখনও কেবল অদক্ষ বা অগোছালো হয় না, রীতিমতো বিপজ্জনক হইয়া উঠে। আর, পরিকল্পনাবিহীনতা বস্তুটি যখন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা-প্রসূত হয়, তখন তো আর কথাই নাই। বর্তমান ভারত বহু ক্ষেত্রে এই ভয়ঙ্কর অপরিণামদর্শী পরিকল্পনাবিহীনতার দৃষ্টান্ত-স্বরূপ। সম্প্রতি সিবিএসই ও সিআইএসসিই দুই কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা বোর্ড এই বৎসর দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা লইয়া যাহা করিতেছে, তাহা সেই দৃষ্টান্তসমূহের মধ্যেও শীর্ষরত্ন হইবার দাবিদার। আঠারো বৎসরের তলায় দেশব্যাপী বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে সাক্ষাৎ বিপদ ও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলিয়া দিয়াছে এই বোর্ডগুলির পরিকল্পনাহীন ব্যবস্থা। প্রথমে বলা হইয়াছিল, এই বৎসর দুই ভাগে বোর্ড পরীক্ষা হইবে। প্রথমটি অনলাইন, পরেরটি অফলাইন। প্রথমটি এমসিকিউ, পরেরটি ঐতিহ্য-অনুসারী। শেষ বেলায় সেই সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষিত হইল। নূতন সিদ্ধান্ত ধ্বনিত হইল: দুইটি পরীক্ষাই অফলাইন। কেন প্রথমে অনলাইন ভাবা হইয়াছিল? অবশ্যই কোভিড সংক্রমণের বিপদের কথা মাথায় রাখিয়া— বিশেষত যখন পরীক্ষার্থীদের বয়স আঠারো কিংবা তাহার নীচে, অর্থাৎ এই দেশে তাহাদের কোভিড সংক্রমণ নিরোধক টিকার কোনও ব্যবস্থা এযাবৎ হয় নাই। প্রশ্ন: তাহা হইলে সিদ্ধান্ত পাল্টাইয়া অনলাইন আবার অফলাইন হইল কেন? পরিস্থিতি কি পাল্টাইয়াছে? সংক্রমণের ভয় কি কমিয়াছে? দুইটি প্রশ্নের উত্তরই সদর্থক হওয়া মুশকিল, বিশেষত টিকাবিহীন মানুষের জন্য। সম্ভবত অন্য কিছু পরিকাঠামো-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিয়াছে বলিয়াই এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে দুই-দুই বার অফলাইন পরীক্ষার পিছনে যুক্তিটি কী? উত্তর নাই। টিকা দেওয়া যায় নাই যে বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়েদের, তাহাদের দুই বার পরীক্ষার জন্য বাহির করা কি উচিত? উত্তর নাই।

Advertisement

ভয়ঙ্কর এই উত্তরহীনতা, বিশেষত যখন ভারতে এখনও অবধি অনূর্ধ্ব-আঠারো বয়সের ছেলেমেয়েদের টিকাদানের ব্যবস্থা করিতে অপারগ দেশের সরকার। ইহা ছেলেমেয়েদের দোষ নহে যে তাহারা টিকা পায় নাই। অভিভাবকদেরও দোষ নহে। প্রসঙ্গত, অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাজকর্ম এত দিনে খুলিবার প্রস্তুতি চলিতেছে, ‘অধিকাংশেরই টিকা হইয়াছে’ এই যুক্তিতে। টিকা-সংখ্যা দেখাইয়া প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তাঁহার সরকার হর্ষোৎফুল্ল বোধ করিতেছেন। প্রশ্ন হইল, যদি ‘টিকা হইয়াছে’ বলিয়া কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিকতায় ফিরিবার ব্যবস্থা হয়, তবে ‘টিকা হয় নাই’ যাহাদের, তাহাদের অফলাইন পদ্ধতিতে দুই-দুই বার পরীক্ষা কেন? এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কি কেবল এ জন্যই যে, আঠারোর নীচে এখনও ভোটাধিকার নাই, সুতরাং বলিবারও কিছু নাই?

অভিভাবক সমাজের অবশ্য ভোটাধিকার আছে, বলিবারও কিছু আছে। তাহাতে কী আসে যায়। অভিভাবক সমাজ আজকাল কিছু বলেন না, প্রশ্ন করেন না। ঠিক যেমন, তাঁহারা প্রশ্ন করেন নাই— পুরাতন পদ্ধতিতে না হইলেও স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা কেন এই ভাবে দেড় বৎসর ধরিয়া শিকায় তুলিয়া দেওয়া হইল। অন্য কোনও বন্দোবস্ত কি ভাবা যাইত না? স্থানীয় কোনও উদ্যোগ কি সম্ভব ছিল না? শিক্ষাব্যবস্থা যে আসলে রাজনীতির কাছে গুরুত্বহীন, এবং ভারতীয় সমাজ যেমন প্রশ্নহীন ভাবে তাহা মানিয়া লইতে অভ্যস্ত হইয়াছে, দেখিলে তাজ্জব বনিতে হয়। এই সামূহিক প্রশ্নহীনতার অবকাশে যে যে সঙ্কট ঘটিতে পারে, সকলই ঘটিতেছে। বাস্তবিক, শাসক সমাজ যে শিক্ষাক্ষেত্র লইয়া যথাযথ মনোযোগ ও দায়িত্ব সহকারে ভাবিতেছে না— তাহাতে নাগরিক সমাজের দায়ই সর্বাধিক। সমাজ সেই শাসকই পাইয়া থাকে যেমনটি তাহার পাইবার কথা: বহুশ্রুত এই বচন। আজ ভারতে তাহা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তব।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement