Climate Change

দুর্যোগলিপি

বিশ্ব জুড়িয়াই জলবায়ু পরিবর্তনের আবহে এখন প্রতিরোধের পাশাপাশি অভিযোজনের তত্ত্বটিও বহুচর্চিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৪৪
Share:

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। নদিয়া ও বীরভূমে খরা, কেবল হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা ব্যতীত বাকি রাজ্যে বর্ষায় অতিবৃষ্টি। এমনই হইবে ভবিষ্যতের পশ্চিমবঙ্গের দুর্যোগচিত্র, জানা গেল কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের সদ্যপ্রকাশিত ‘হ্যাজ়ার্ড অ্যাটলাস’ বা দুর্যোগ-মানচিত্রে। ১৯৬১ হইতে ২০২০, ছয় দশকের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য বিশ্লেষণ করিয়াই এই ভবিষ্যসঙ্কেত দেখাইতেছেন বিশেষজ্ঞগণ, বলিতেছেন, উর্বর গাঙ্গেয় বঙ্গে খরা, উপকূলবর্তী জেলায় ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাস বা সমগ্র বঙ্গেই অল্প সময়ে অতিবৃষ্টির প্রকোপকে অবিশ্বাস্য বোধ করিবার কারণ নাই। আলাদা করিয়া বলা হইয়াছে সুন্দরবনের কথা, যুগ যুগ ধরিয়া ম্যানগ্রোভ-প্রাচীরে ঘূর্ণিঝড় আটকাইয়া তাহা হইয়া পড়িয়াছে কমজোরি। এখনই কিছু না করিলে চলিবে না।

Advertisement

উদ্বেগ-আশঙ্কার কারণ থাকিলেও, শুধু উদ্বেগ বাড়াইতেই এই রিপোর্টের অবতারণা নহে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বঙ্গের দুর্যোগলিপি কেমন হইবে তাহার চেতাবনি ইহা বটেই, কিন্তু তাহারও বেশি— দুর্যোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সহযোগ ও দিগ্‌দর্শন দান, যাহাতে ভবিষ্যতে দুর্বিপাকের প্রতিরোধ করা যায় বা তাহার সহিত খাপ খাওয়ানো যায়। বস্তুত বিশ্ব জুড়িয়াই জলবায়ু পরিবর্তনের আবহে এখন প্রতিরোধের পাশাপাশি অভিযোজনের তত্ত্বটিও বহুচর্চিত। একটি তত্ত্ব বলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলির ‘মিটিগেশন’ বা হ্রাসের কথা: গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাইতে হইবে, জীবনযাত্রায় প্লাস্টিক-সহ অপচনশীল বস্তুর ব্যবহার হ্রাস করিতে হইবে ইত্যাদি। অন্য তত্ত্বটি বলে ‘অ্যাডাপ্টেশন’ বা সমঝোতার ধারণার কথা: জলবায়ু পরিবর্তন হইবেই, তাহার ফলস্বরূপ বন্যা খরা জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড় আদি দুর্যোগেও ভুগিতে হইবে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব বা পরিণতিসমূহকে বিশ্লেষণ করিয়া বরং দেখা যাইতে পারে, স্থান বা অঞ্চল ধরিয়া ধরিয়া কোথায় কী পদক্ষেপ করিলে দুর্বিপাকগুলি একেবারে এড়ানো না যাক, অন্তত তাহাদের প্রকোপ নিয়ন্ত্রিত করা যাইবে। দুর্যোগের কারণগুলি যখন হাতের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে, তখন ফলাফলকেই বিশ্লেষণ করিয়া কাজে লাগিয়া পড়া।

কাজে লাগিয়া পড়িবে কে? প্রশাসন বা সরকার। ‘হ্যাজ়ার্ড অ্যাটলাস’ যে ভারতের জেলাগুলিকে ভিত্তি করিয়া হইয়াছে, তাহাতেই উদ্দেশ্যটি স্পষ্ট, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলি যে যে রাজ্যে পড়িয়াছে, তাহার প্রশাসন যেন অবিলম্বে ইহা হইতে শিক্ষা লয় ও উপযুক্ত পদক্ষেপ করিতে পারে। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের প্রযুক্তিগত পূর্বাভাস পাইয়া উপকূলীয় মানুষের সাময়িক নিরাপদ আশ্রয় বা অতিবৃষ্টিতে বানভাসি মানুষের ত্রাণের ব্যবস্থা মাত্রই যথেষ্ট নহে, রাজ্য প্রশাসনকে বুঝিতে হইবে, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তাহার অধিক কিছু দাবি করে— যখন বন্যা খরা ঘূর্ণিঝড় নাই, তখনও সে ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলা লইয়া কী ভাবিতেছে ও কী করিতেছে, তাহাও। সুন্দরবনের আশু বিপদ বা গঙ্গাবিধৌত বঙ্গেও খরার ভ্রুকুটিকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না করিয়া, প্রশাসক বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের লইয়া কমিটি গড়িয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য লইয়া কাজে নামিতে হইবে। রাজ্য সরকারকে বুঝিতে হইবে, ইহা একাধারে প্রকৃতি ও মানবসম্পদ রক্ষার ব্যাপার। জীবনসম্পদের রক্ষণ সুপ্রশাসনেরই অচ্ছেদ্য অঙ্গ।

Advertisement

1

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement