Working Women

শক্তিরূপেণ

নারী নিজের শক্তিতে নিজের প্রাপ্য আদায় করিবেন, এই প্রত্যয় হইতেই নারী দিবসের সূচনা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ০৬:২০
Share:

আফগানিস্তানে গুলি করিয়া হত্যা করা হইল তিন তরুণী সাংবাদিককে। বিস্ফোরণে নিহত হইলেন এক মহিলা চিকিৎসক। তালিবানের চোখে তাঁহাদের অপরাধ, তাঁহারা মহিলা। নারী হইয়াও পেশাদার কর্মী হইয়াছেন, চলাফেরা, কথাবার্তায় তাঁহারা স্বাধীন, এমন স্পর্ধা কি ক্ষমার যোগ্য? আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনতিপূর্বে এই তালিবানি ‘শাসন’ যেন অশনিসঙ্কেত। কর্মজগতে, সমাজজীবনে মেয়েরা প্রায় সর্বত্রই প্রান্তিক। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান তাঁহাদের বঞ্চনা বাড়াইয়াছিল। সম্প্রতি অতিমারি আরও বিপন্ন করিয়াছে। সমীক্ষায় প্রকাশ, একক উদ্যোগে পরিচালিত ৩৫০টি ব্যবসার কর্ণধার মহিলারা জানাইয়াছেন, চাহিদায় হ্রাস যেমন তাঁহাদের ক্ষতির একটি কারণ, তেমনই পরিবারের সদস্যদের পরিচর্যা এবং গৃহকর্মের পরিমাণে বৃদ্ধিও কারণ। এই সঙ্কট নূতন নহে। দীর্ঘ দিনের বৈষম্য এবং সম্পদ-বঞ্চনা মেয়েদের আর্থ-সামাজিক ভাবে দুর্বল করিয়াছে, অতিমারি তাহাকে আরও তীব্র করিয়াছে মাত্র। গৃহ তাঁহার নিকট নিরাপদ নহে, আবার কাজে যোগদানের সুযোগও প্রতি দিন আরও সঙ্কীর্ণ হইতেছে। অতিমারি দেখাইল, এক প্রকার পরিকল্পিত, নীরব হিংসা জনজীবনে মেয়েদের অংশীদারিকে ক্রমেই সঙ্কুচিত করিতে পারে। তালিবানি পদ্ধতি প্রয়োজন নাই, সেই মানসিকতাটি থাকিলেই চলিবে। তাহার অন্যতম উদাহরণ ভারত। ভারতের শ্রমশক্তিতে মেয়েদের যোগদান ক্রমেই কমিতেছে। নব্বইয়ের দশকে কর্মক্ষম মেয়েদের ত্রিশ শতাংশের অধিক রোজগারে নিযুক্ত ছিলেন। অতঃপর ক্রমাগত কমিয়া তাহা লকডাউনের পূর্বে দাঁড়াইয়াছিল এগারো শতাংশ। শহরের শিক্ষিত তরুণীরা কাজের ক্ষেত্র হইতে কেন দূরে সরিয়া আছেন, তাহার উত্তর কাহারও নিকটে নাই।

Advertisement

একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে নিয়মিত রোজগারে নিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মহিলাকর্মী অতি সামান্য, কিন্তু লকডাউনে যত কর্মী কাজ হারাইয়াছেন তাঁহাদের প্রায় অর্ধেকই মেয়ে। সঙ্কুচিত হইয়াছে শিক্ষার ক্ষেত্রটিও। স্কুল খুলিলেও বহু মেয়ে আর ফিরিবে না। সুযোগ বুঝিয়া নাবালিকা বিবাহ বাড়িয়াছে, নাবালিকা পাচারের সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী। লকডাউনে বাড়িয়াছে নারী হিংসা। লকডাউনের প্রথম ছয় মাসে অতিরিক্ত অন্তত তিন কোটি গার্হস্থ হিংসার ঘটনা ঘটিয়াছে বিশ্বে, এবং তাহার পরে প্রতি লকডাউনের মাসে অন্তত দেড় কোটি। লকডাউনের দিনগুলিতে যত নিগৃহীত মহিলা সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছেন, বহু দেশে তাহা অতীতের সকল হারকে ছাপাইয়া গিয়াছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ গার্হস্থ হিংসাকে ‘ছায়া অতিমারি’ বলিয়া অভিহিত করিয়াছে। শিক্ষাহীন, কর্মহীন, নিরাপত্তাহীন জীবন— ইহাই কি প্রাপ্য একবিংশ শতকের নারীর?

নারী নিজের শক্তিতে নিজের প্রাপ্য আদায় করিবেন, এই প্রত্যয় হইতেই নারী দিবসের সূচনা। তাহার পর শতাধিক বৎসর কাটিয়াছে, নারী আন্দোলনের অভিঘাতে বার বার কাঁপিয়াছে বিশ্ব। বহু বিধি বদল হইয়াছে, বহু রীতি আবর্জনায় নিক্ষিপ্ত হইয়াছে। কিন্তু রক্তবীজ দানবের ন্যায়, পরাভূত পুরুষতন্ত্র বার বার পুনরুজ্জীবিত হইয়াছে। পুরুষের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতি প্রজন্মের নারীকে সাম্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ লড়িতে হয়। প্রহরণ বদল হয় শুধু। আজ অতিমারিকে পরাভূত করিবার যুদ্ধও নারীর আপন ভাগ্য জয় করিবার যুদ্ধ হইয়া দেখা দিয়াছে। লড়াই চলিতেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement