Hindi film screened in Manipur

ছবির আড়ালে

কুকিদের যৌথ মঞ্চ বলেছে, এই ১৫ অগস্ট তাঁদের কাছে মেইতেইদের বশ্যতা থেকে স্বাধীন হওয়ার দিন, হিন্দি ভাষার ও দেশপ্রেমের ছবি দেখানো তারই উদ্‌যাপন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৩৬
Share:

হিন্দি ছবি দেখছেন কুকি-জো-মারেরা। —নিজস্ব চিত্র।

দেশপ্রেম বোঝানো যায় কী দিয়ে? আজকের বহু ভারতবাসী বলবেন, ১৫ অগস্ট প্রাণপণে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, তারস্বরে দেশাত্মবোধক গান চালিয়ে, টিভিতে দেশপ্রেমের সিনেমা দেখিয়ে। এই সবই নতুন নয়, তবে মণিপুরের ক্ষেত্রে নতুন। দুই দশকেরও বেশি সময় পরে, এ বছর স্বাধীনতা দিবসে সেখানে প্রকাশ্যে আয়োজন হল একটি হিন্দি ছবির প্রদর্শন— উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। এই সে দিনও যে রাজ্যটি ছারখার হচ্ছিল কুকি ও মেইতেই জনজাতি-দ্বন্দ্ব ও বিদ্বেষে, যে হিংসার জেরে হাজার হাজার কুকি মানুষ এখনও রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরে শরণার্থী শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন, সেই মণিপুরের জন্য এ এক ‘ঘটনা’ বটে— হিন্দি ছবির প্রকাশ্য প্রদর্শন। শুধু তা-ই নয়, অগণিত কুকি মানুষ এ বছর নিজেদের ঘরবাড়ি সাজিয়েছেন জাতীয় পতাকায়, নকল রাইফেল নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ করেছেন কুকি গ্রামরক্ষীরা।

Advertisement

এই সব কি সত্যিই নিজেদের স্বদেশপ্রেম ও ভারতীয়ত্ব প্রমাণের আন্তরিক তাগিদে? মণিপুরে গত কয়েক মাসের হিংসা, ধর্ষণ, হত্যা, সম্পদহানি, এবং কুকি মহিলাদের চূড়ান্ত অসম্মানের নির্মম ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত কেন্দ্রের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। তা এই: মণিপুরবাসী, বিশেষত কুকি-জ়ো-মার গোষ্ঠীর অগণিত মানুষের প্রথম ও প্রধান কাজ এই মুহূর্তে প্রাণরক্ষা— জীবন বাঁচানোর তাগিদেই তাঁরা জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকার আড়াল ও আশ্রয় খুঁজছেন, সেই একই কারণে নিজভূমে প্রদর্শন করছেন ‘হিন্দি’ ছবি, ভারতের অনেকাংশে যা দেশপ্রেমের অন্যতম প্রকাশমাধ্যম। মনে রাখা দরকার, ২০০০ সালে মণিপুরে হিন্দি ছবি নিষিদ্ধ হয় মেইতেই জঙ্গি সংগঠন পিএলএ-র নিষেধাজ্ঞায়। জঙ্গিরা রাজ্যের সব সিনেমাহল বন্ধ করে দেয়, ভিডিয়ো-অডিয়ো ক্যাসেট ও সিডি পুড়িয়ে দেয়। তার পর দুই দশক পেরিয়েছে, কিন্তু মণিপুরে হিন্দি ছবি ফেরেনি। আবার কুকি ও অন্য জনজাতিরা মেইতেইদের সঙ্গে এত কাল পাশাপাশি বসবাস করে এলেও মাঝে-মাঝেই তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরেছে: কুকিরা মনে করেছেন মেইতেই ‘শাসন’-এ তাঁরা সর্বদা লাঞ্ছিত, মেইতেইরা বলে এসেছেন কুকি-অধ্যুষিত পাহাড়ে জমিজমা ও সম্পত্তিক্রয় বিষয়ে তাঁরা সর্বদা অবহেলিত।

সাম্প্রতিক কালে এই দ্বন্দ্বের যে হিংস্র বহিঃপ্রকাশ মণিপুর দেখল, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ বারের ১৫ অগস্টের ‘শান্ত’ মণিপুর এক ভিন্ন ও জটিল বার্তা দেয়। কুকিদের যৌথ মঞ্চ বলেছে, এই ১৫ অগস্ট তাঁদের কাছে মেইতেইদের বশ্যতা থেকে স্বাধীন হওয়ার দিন, হিন্দি ভাষার ও দেশপ্রেমের ছবি দেখানো তারই উদ্‌যাপন। মণিপুরের বিজেপি-সমর্থিত বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেইতেই জনজাতির, এবং সাম্প্রতিক কুকি-মেইতেই সংঘর্ষে ‘রাজধর্ম’ পালনে তাঁর ভূমিকা সকলেই দেখেছেন। ঘরছাড়া, স্বজনহারা কুকি জনজাতির মানুষেরা এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই, নিজেদের স্বার্থেই একাধারে মেইতেই-বিরোধিতা ও কেন্দ্রের শাসকদের মন জয় করতে চাইবেন। কিছু সংশয় তবু রয়ে গেল। কুকি-মেইতেই বিরোধ অদূর ভবিষ্যতেও না মেটার সংশয়, দেশপ্রেম ও ভারতীয়ত্বকে ‘অস্ত্র’ করে জনজাতি-রাজনীতির আবারও ফুলেফেঁপে ওঠার সংশয়। অন্য দিকে, সুযোগ বুঝে কেন্দ্রের হিন্দি আধিপত্যবাদের কুমির মণিপুরে ঢুকে পড়বে না তো?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement