Gender Inequality

মেয়েদের স্থান

গত বছরের থেকে (১২৭তম) ভারত সামান্য পিছিয়েছে, তার কারণ এ দেশে বৈষম্য যতটুকু কমেছে এক বছরে (সূচকের হিসাবে এক শতাংশ বিন্দুও নয়), তাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে অন্যান্য দেশে লিঙ্গসাম্যে উন্নতির গতি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ ০৮:২৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

আগামী একশো বছরেও বিশ্বে মেয়েরা শিক্ষা, কর্মনিযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক সক্ষমতায় পুরুষের কাছাকাছি আসতে পারবে না, যদি না দেশ ও সমাজ আরও তৎপর হয়। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইন্ডেক্স ২০২৪’ অনুসারে, বৈষম্য কমার যে গতি এখন দেখা যাচ্ছে, তা বজায় থাকলে আগামী ১৩৪ বছর লেগে যাবে পুরুষ-মহিলা সাম্যের লক্ষ্যে পৌঁছতে। ছবিটা সর্বত্র ক্রমিক উন্নতির, এমনও নয়। এই সূচকের অন্তর্গত বিশ্বের ১৪৬টি দেশের অর্ধেক পুরুষ-মহিলার সক্ষমতায় ফারাক কমিয়েছে, কিন্তু প্রায় ৪৪% দেশে ফারাক বেড়েছে, বাকিগুলি অপরিবর্তিত। এই পতন-অভ্যুদয়ের পথে বিশ্বের অর্ধেক নাগরিকের সমান সুযোগ, সমান সম্পদ, সমান ক্ষমতার লক্ষ্য কবে পূরণ হবে, তা বোঝা সহজ নয়। লড়াই আরও কঠিন ভারতের মেয়েদের কাছে। একে তো দক্ষিণ এশিয়ার স্থানই বিশ্বের সাতটি প্রধান অঞ্চলের মধ্যে ষষ্ঠ; তার উপরে লিঙ্গ-অসাম্যের সূচকে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১২৯তম। প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কেবল মলদ্বীপ আর পাকিস্তান রয়েছে ভারতের পিছনে। গত বছরের থেকে (১২৭তম) ভারত সামান্য পিছিয়েছে, তার কারণ এ দেশে বৈষম্য যতটুকু কমেছে এক বছরে (সূচকের হিসাবে এক শতাংশ বিন্দুও নয়), তাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে অন্যান্য দেশে লিঙ্গসাম্যে উন্নতির গতি।

Advertisement

তুলনায় আরও সম্পদশালী বহু দেশকে পিছনে ফেলে এই সূচকের শীর্ষে বেশ কয়েক বছর রয়েছে আইসল্যান্ড। নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, জার্মানির মতো ইউরোপের দেশগুলির পাশাপাশি শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে স্থান পেয়েছে নিউ জ়িল্যান্ড, নিকারাগুয়া, নামিবিয়ার মতো দেশও। দেশে যা কিছু সম্পদ ও সুযোগ রয়েছে, তা পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করছে কি না দেশগুলি, তা দেখাই এই সূচকের প্রধান লক্ষ্য। বিংশ শতাব্দীতে নানা গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মেয়েদের শিক্ষা, রোজগার, সুস্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন যে কোনও দেশের উন্নয়নে গতি আনে, অর্থনীতির বৃদ্ধিকে সুস্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদি করে তোলে। তাই একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সুস্থায়ী উন্নয়নের যে লক্ষ্যগুলি নেওয়া হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল পুরুষ-মহিলা বৈষম্য হ্রাস। লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছিল ২০৩০ সালকে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই সময়সীমার একশো বছর পরেও বহু দেশে মেয়েরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকবে।

ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান মহিলা, এ জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সূচকে ভারতের স্থান খানিকটা উপরে উঠেছে বটে, কিন্তু সাংসদের সংখ্যা বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মহিলাদের স্থানের নিরিখে ভারতের স্থান কেবল অন্যান্য দেশের তুলনায় খারাপ নয়, নিজের অতীতের চেয়েও খারাপ। সপ্তদশ লোকসভায় মাত্র দশ জন মহিলা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদে ছিলেন, সংসদের মাত্র ১৭% আসন ছিল মেয়েদের। স্বাস্থ্য এবং আয়ুর নিরিখে ভারতের স্থান ১৪২তম। ‘অমৃতকাল’-উত্তর ভারতেও পুষ্টি ও চিকিৎসার নাগাল পাওয়া দরিদ্র পুরুষের থেকে দরিদ্র মেয়েদের পক্ষে কঠিন। সাক্ষরতায় পুরুষ-মহিলা ফারাকের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে ১১২তম— এটা কেবল দেশের সরকার নয়, জাতির লজ্জা। শিক্ষার চৌকাঠে পা রাখা যেমন কঠিন, তেমন উচ্চশিক্ষায় প্রবেশও। কলেজ শিক্ষার সুযোগে পুরুষ-মহিলার তফাত ভারতকে রেখেছে ১০৫তম স্থানে। তার প্রতিফলন পড়ে কর্মক্ষেত্রে— ভারতে প্রতি পুরুষের একশো টাকা রোজগার-প্রতি মেয়েদের রোজগার চল্লিশ টাকা। এ সব সংখ্যা ফের তা-ই দেখায়, যা খালি চোখে দেখা যায় রোজ। আক্ষেপ, ক্ষমতাসীন দলগুলি সেই অন্যায়কে অস্বীকার করতে যত উদ্যোগী, বৈষম্যকে সংশোধন করতে ততটা নয়। নানা প্রকল্পের ঘোষণা, কিছু খুচরো সাফল্যের প্রচার করেই নেতারা কাজ সারেন। লিঙ্গ-অসাম্য এক রাজনীতির পরিণাম, রাজনৈতিক উপায়েই তাকে দূর করতে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement