Gender Inequality

বৈষম্যের ব্যাধি

শিশুকন্যার শরীরে রোগলক্ষণ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তাদের চিকিৎসকের কাছে বা রোগনির্ণয় কেন্দ্রে নিয়ে আসাই হয় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:০১
Share:

লিঙ্গবৈষম্যের চিত্রটি উত্তর ভারতে অধিক প্রকট। প্রতীকী ছবি।

ভারতে লিঙ্গবৈষম্যের শিকড়টি কত গভীরে প্রোথিত, তা বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট। তবে, সর্বাপেক্ষা মর্মান্তিক বৈষম্যের চিত্রটি বোধ হয় চিকিৎসা বিষয়ে। শিশুদের ক্যানসার সংক্রান্ত এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ভারতে অল্পবয়সি মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ক্যানসার নির্ণয়ের সংখ্যা বেশি। এমন নয় যে, শিশুকন্যাদের তুলনায় শিশুপুত্ররা অধিক হারে ক্যানসার আক্রান্ত হয়। প্রকৃত সত্য, শিশুকন্যার শরীরে রোগলক্ষণ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তাদের চিকিৎসকের কাছে বা রোগনির্ণয় কেন্দ্রে নিয়ে আসাই হয় না। অর্থাৎ, ছেলেদের প্রতি পক্ষপাতের সূচনা হয় একেবারে গোষ্ঠীস্তর থেকেই। স্বাভাবিক ভাবেই, মেয়েদের ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ে কম। চিকিৎসার সুযোগও তারা কম পেয়ে থাকে। সমীক্ষায় স্পষ্ট, লিঙ্গবৈষম্যের এই চিত্রটি উত্তর ভারতে অধিক প্রকট। এবং সমীক্ষকদের পর্যবেক্ষণ, গ্রামের চিত্রটি এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে মলিন। ক্যানসার চিকিৎসার ব্যয় যত বৃদ্ধি পায়, রোগ-চিকিৎসার কেন্দ্র থেকে বাড়ির দূরত্ব যত বৃদ্ধি পায়, বৈষম্যও তত পাল্লা দিয়ে বাড়ে।

Advertisement

অবশ্য, এই সমীক্ষার ফল অপ্রত্যাশিত ছিল না। বহু আগে থেকেই ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া এবং সার্বিক ‘ভাল থাকা’-র ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা যে অনেকটাই পিছিয়ে, সেই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন স্বাস্থ্য এবং জনতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। বহু পরিবারে আজও পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান থেকে শুরু করে রোগ নিবারক এবং রোগ নিরাময়কারী সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পুত্রসন্তানরাই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। যেমন— পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, জন্মের পর প্রাথমিক টিকাকরণ কর্মসূচিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কম নিয়ে আসা হয়। একই ভাবে, সন্তান অসুস্থ হলে ছেলেদের ক্ষেত্রে যত দ্রুত মা-বাবা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন, মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হয় না। এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালাতে পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে মা-বাবা প্রয়োজনে সম্পত্তি বন্ধক বা বিক্রয় করতে চাইলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে সেই প্রবণতা তুলনায় কমই দেখা যায়। গ্রামীণ ভারত নিয়ে একটি সমীক্ষা থেকে একদা জানা গিয়েছিল, যে সব অসুস্থ সদ্যোজাতকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়, তাদের মধ্যে কন্যাসন্তানের হার মাত্র ২৮.১ শতাংশ। ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও চিত্রটি ব্যতিক্রম হয়নি।

নিঃসন্দেহে এই বৈষম্যের প্রধান কারণ, সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র, যা আজও পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী হিসাবে পুত্রকেই প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, তাকে সুস্থ এবং সবল রাখার তাগিদে অর্থব্যয়ে কার্পণ্য করা হয় না। এবং মেয়েদের অসুখ বিষয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও সামগ্রিক উদাসীনতাকে সযত্নে লালন করা হয়। এই মানসিকতার কারণেই ক্যানসারের মতো মারণরোগের ক্ষেত্রে মেয়েদের রোগনির্ণয়ে বিলম্ব ঘটে, যা পরিণামে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। অবিলম্বে এই মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এর জন্য শুধু কন্যাসন্তানকে বাঁচানোর প্রচারই যথেষ্ট নয়। অন্য পথগুলিও ভাবতে হবে। ক্যানসারের মতো চিকিৎসায় আর্থিক চাপটি কম নয়। মা-বাবার উপর থেকে এই চাপ লাঘব করা জরুরি। শিশুকন্যার ক্যানসার চিকিৎসা স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে করা সম্ভব কি না, অবিলম্বে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করুক সরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement