ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ফাইল ছবি।
সম্প্রতি পড়শি দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা সফরকালে মলদ্বীপে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দাবি করেছেন যে, দুই দেশের মধ্যে মৈত্রীর কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে ভারত, মলদ্বীপ— দুই দেশেরই। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতেও ওই অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘সিকিয়োরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন’ (এসএজিএআর) এবং ‘প্রতিবেশী প্রথম’ লক্ষ্যে মলদ্বীপের বিশেষ স্থান অধিকার করার কথা উল্লিখিত হয়েছে। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কথাগুলি জরুরি, বিশেষত গত এক দশকে জলদস্যু হামলা প্রতিরোধের নামে চিন ভারত মহাসাগরে নৌসেনার গতিবিধি বাড়ানোর পর থেকে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে দ্বীপদেশটির গুরুত্ব বৃদ্ধির পর। দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরে চিনের আধিপত্য প্রশমিত করতে মলদ্বীপের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রাখা ভারতের কাছে কতখানি প্রয়োজনীয়, তা মাথায় রেখেই এই সব ঘোষণা।
সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি-র এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মলদ্বীপ সফরে গেলেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। এ বছর সেপ্টেম্বরে সে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র (এমডিপি) নেতা সোলি দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেও, এর বিরোধিতা করেছেন দলেরই প্রাক্তন নেতা এবং দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ। দলের এই অন্তঃকলহ দিল্লির ক্ষেত্রে দুঃসংবাদ বটে। তবে তার সঙ্গে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ২০১৮ সাল থেকে ভারত এবং মলদ্বীপের মধ্যে সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, যখন প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মলডিভস-এর (পিপিএম) আবদুল্লা ইয়ামিন-কে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন সোলি। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইয়ামিন এমন সব বিদেশনীতি গ্রহণ করেন, যা চিনপন্থী হিসাবে গণ্য করা যায়। এর সূত্রে দেশের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ঋণ এবং অনুদান দিয়ে সাহায্য করে চিন, যা দিল্লির অলিন্দে উদ্বেগ বাড়ায়। তা ছাড়া, গত বছর তিনি ভারত বিরোধী প্রচার চালান, যেখানে বর্তমান সরকারকে দিল্লির ‘হাতের পুতুল’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এমনকি, দেশের মাটিতে ভারতীয় সেনার উপস্থিতিকে মলদ্বীপের সার্বভৌমত্ব নষ্টের মতো গুরুতর অভিযোগও তোলেন তিনি। তবে, দুর্নীতি ও টাকা তছরুপের দায়ে গত বৎসরান্তে এগারো বছরের কারাবাসের দণ্ড ইয়ামিনকে প্রেসিডেন্ট পদের দৌড় থেকে ছিটকে দিতে পারে, যা দিল্লির কাছে কিছুটা স্বস্তির।
আপাতত হানিমধু বিমানবন্দর, গুলহিফালু বন্দর, গ্রেটার মালে কানেকটিভিটি প্রজেক্টের মতো সে দেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতা ও আর্থিক সহায়তা অব্যাহত। সেই সঙ্গে সম্প্রতি দুই দেশের মৈত্রীর সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং ২০১৮ সাল থেকে উচ্চ স্তরীয় সামরিক আদানপ্রদান ভারতের সে দেশে সামরিক ঘাঁটি তৈরির জল্পনাকে জোরদার করেছে। দেশের কিছু প্রান্তে ভারতবিরোধী আন্দোলনকে উস্কেও দিয়েছে। ভূরাজনৈতিক দিক দিয়ে ভারত যে সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে আছে, তা শক্ত ভাবে ধরে রাখা জরুরি। আগামী সেপ্টেম্বরে মলদ্বীপে নতুন সরকার যাঁরাই গঠন করুন, দিল্লি তার কূটনৈতিক কৌশলে স্থিত থাকবে, এমন আশা থাকল।