প্রতীকী ছবি।
দেশে টিকা-উৎসবের ডাক দিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বর্তমানে অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের যে তাণ্ডব চলিতেছে, তাহার গতি রোধে টিকাকরণ কর্মসূচিটিকে জোরদার করিবার কথা বিশেষজ্ঞরাও বলিয়াছেন। বস্তুত, টিকাকরণের হার বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা ভিন্ন এই কালান্তক ব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ে সাফল্য মিলিবে না। প্রধানমন্ত্রী শব্দ লইয়া খেলিতে ভালবাসেন। তাই টিকা প্রদান এবং গ্রহণের হারকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে লইয়া যাইবার বিষয়টি তাঁহার ভাষায় ‘উৎসব’। উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু উৎসবের উপকরণ দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে তো? মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্য সম্প্রতি টিকাসঙ্কটের অভিযোগ তুলিয়াছে। বিভিন্ন স্থানে চাহিয়াও টিকা মিলিতেছে না। পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কিছু টিকাকরণ কেন্দ্র বন্ধ। এই দুরবস্থায় দেশবাসী উৎসবে মাতিবেন কী উপায়ে?
আশ্চর্য ইহাই, অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের অভিঘাত যে তীব্রতর হইবে, কেন্দ্রীয় সরকার সে বিষয়ে অবহিত ছিল। অথচ, সেই বিপদের প্রস্তুতি ভুলিয়া বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন লইয়া প্রবল মাতামাতি চোখে পড়িল। টিকাকরণ শুরুর তিন মাস পরেও জনসংখ্যার নিরিখে টিকাকরণের হার যথেষ্ট বাড়িল না, এবং টিকা বিতরণ ও মজুতের ক্ষেত্রেও বিস্তর ত্রুটি পরিলক্ষিত হইল। পরিণতি, মহারাষ্ট্রের ন্যায় একাধিক রাজ্য যখন দ্বিতীয় প্রবাহে ধরাশায়ী, তখনই তাহাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা নাই। উদ্বেগ বাড়াইয়া কেন্দ্র সম্প্রতি ইহাও জানাইয়াছে যে, ৪৫-এর কমবয়সিদের টিকাকরণের ভাবনা এখনও কেন্দ্রের নাই। অথচ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, এই পর্যায়ে আক্রান্তদের এক বৃহৎ অংশের বয়স ২৫ হইতে ৪০-এর মধ্যে। সকলের জন্য টিকা— একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এই আবেদন নস্যাৎ করিবার পশ্চাতে কেন্দ্রীয় যুক্তি— ব্রিটেন-সহ পশ্চিমের দেশগুলিতেও এই নীতি অনুসৃত হইয়াছে। ব্রিটেনই যদি কেন্দ্রের নিকট অনুকরণযোগ্য মনে হয়, তবে ইহাও বিচার্য যে, গত দুই মাসে সেই দেশে টিকাকরণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাইয়াছে। এবং টিকাকরণের কল্যাণেই পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হইয়াছে ব্রিটেনে। ভারতে সেই স্বস্তি কোথায়?
টিকাকরণের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিবার ক্ষেত্রে প্রথম অভিযুক্ত যদি কেন্দ্রীয় সরকার হয়, তাহা হইলে দ্বিতীয় অবশ্যই এক বৃহৎ সংখ্যক অ-সচেতন নাগরিক। বিপদের সম্মুখে দাঁড়াইয়াও তাঁহারা অমিত বিক্রমে করোনাবিধিকে অগ্রাহ্য করিতেছেন এবং যথেষ্ট সংখ্যায় টিকা লইতেছেন না। টিকা লইবার ক্ষেত্রে নাগরিক অনীহার বিষয়টি গোড়া হইতেই পরিলক্ষিত হইয়াছে। প্রথম দিকে প্রচুর টিকা নষ্ট হইবার কারণও ইহাই। অথচ, পোলিয়োর ন্যায় একাধিক রোগের ক্ষেত্রে দেখা গিয়াছে, সরকারি প্রচেষ্টা এবং নাগরিক সদিচ্ছা একত্রে মিলিলে তবেই সেই রোগ নির্মূল সম্ভব। টিকা শুধুমাত্র ব্যক্তিকল্যাণ নহে, সামগ্রিক ভাবে সামাজিক কল্যাণের বিষয়টিকে নিশ্চিত করিয়া থাকে। সুতরাং, ফাঁকিবাজির জায়গা নাই। সরকার যেমন কাহাকে, কখন, কী ভাবে টিকা দেওয়া হইবে তাহা দেখিবে; নাগরিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ডোজ় লইলেন কি না নজরদারি করিবে, টিকার জোগান অব্যাহত রাখিবে; তেমনই নাগরিকও সেই কর্মকাণ্ডে যোগদান করিয়া নিজ কর্তব্য পালন করিবেন— ইহাই কাম্য। অন্যথায়, অতিমারি জিতিবে।