তাইওয়ানকে ‘শাস্তি’ দিল চিন। শাস্তিস্বরূপ দ্বীপরাষ্ট্রটির চার পাশে জলপথ ও আকাশপথে সম্প্রতি দু’দিনব্যাপী ‘জয়েন্ট সোর্ড ২০২৪এ’ নামক সামরিক মহড়া চালাল লাল ফৌজ। কেন এই শাস্তি? বেজিং-এর দাবি, স্বাধীনতার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ চলছে তাইওয়ানে। তাই কঠোর শাস্তি হিসেবে চালানো হয় এই মহড়া। একই সঙ্গে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ এবং উস্কানির বিরুদ্ধে কড়া সতর্কবার্তা দেওয়াও ছিল তাদের লক্ষ্য। তাইওয়ান তো বটেই, আমেরিকার উপরে নিজেদের সামরিক চাপ বজায় রাখতেই হয়তো তাইওয়ান প্রণালী এবং তার সংলগ্ন এলাকায় প্রভাব বাড়াতে চাইছে শি জিনপিং সরকার। প্রসঙ্গত, মে-র তৃতীয় সপ্তাহের শেষে পালাবদল হয় তাইওয়ানে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন লাই চিং-তে। এমনিতেই ওয়েনের শাসনকালে চিনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় তাইওয়ানের। তিনি বরাবরই গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষে সরব ছিলেন। লাই-ও যে সেই পথেরই পথিক, তা তাঁর উদ্বোধনী ভাষণেই স্পষ্ট করে দেন তিনি। ফলে, তাঁর জমানাতেও তাইওয়ানের উপরে চিনের কর্তৃত্ব শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বেজিং-এর।
১৯৪৯ সাল থেকেই তাইওয়ান স্বশাসিত থেকেছে, যখন মূল ভূখণ্ডের গৃহযুদ্ধে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)-র কাছে হেরে জাতীয়তাবাদীদের একাংশ এই দ্বীপে পালিয়ে আসেন। বহু কাল যাবৎ দ্বীপরাষ্ট্রটিকে তাদের অংশ হিসেবেই গণ্য করে আসছে বেজিং। প্রয়োজনে সেটিকে বলপূর্বক কুক্ষিগত করতেও বদ্ধপরিকর তারা। গত কয়েক বছরে তাইওয়ানের চার পাশে ‘জয়েন্ট সোর্ড ২০২৪এ’-র অনুরূপ মহড়া দিতে দেখা গিয়েছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-কে। লক্ষণীয়, সাম্প্রতিক কালে দ্বীপরাষ্ট্রটির উপরে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে চলেছে চিন, সময়ে সময়ে সম্ভাব্য আক্রমণের উদ্বেগ উস্কে দিয়ে। এবং এ-হেন মহড়াগুলির অন্যতম উদ্দেশ্য তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ে তোলা। তাইওয়ানের দক্ষিণে অবরোধ গড়ে তুললে প্রভাবিত হবে কাওশিউং বন্দর, যেটি শুধু দেশের বৃহত্তম বন্দরই নয়, নৌসেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিও। তেমনই, পূর্ব দিকে কোনও
বাধা আটকে দেবে রফতানি, ‘তাইওয়ান ইনডিপেনডেন্স পার্টি’ দলের পালানোর পথ এবং আমেরিকা ও তার মিত্ররাষ্ট্রগুলির তাইওয়ানকে সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টা। দেশের অর্থনীতি অনেকাংশেই রফতানি-ভিত্তিক। অন্য দিকে, তার শক্তি-সংরক্ষণের অনেকটাই নির্ভর করে আমদানির উপরে। ফলে যে কোনও প্রকারের বাহ্যিক অবরোধ ধ্বংস করে দিতে পারে দেশের অর্থনীতিকে।
চিনের নিয়ন্ত্রণে গণতন্ত্রের কী হাল হয়, হংকং-এ তা ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের উপরে চিন আগ্রাসনের সম্ভাবনা কম। কিন্তু দ্বীপরাষ্ট্রের পাশে সামরিক মহড়া অব্যাহত থাকলে শান্তি এবং যুদ্ধের মধ্যেকার রেখাটি ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হতে বাধ্য। আগ্রাসনের অজুহাতও সহজেই উঠে আসা সম্ভব। যদিও এ-যাবৎ চিনের অনুশীলনে রাজনৈতিক বার্তাই বেশি, তবু ক্রমাগত চাপ দিয়ে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে ফেলা— এই কৌশলের সঙ্গে বিশ্বপৃথিবী যথেষ্ট পরিচিত।