Buses in Kolkata

বিভীষিকা

কেন ট্র্যাফিক পুলিশের অভিযান, কড়াকড়ি ও জরিমানাও বাসের বেপরোয়া গতিতে রাশ টানতে পারছে না, তা খতিয়ে দেখলে বেরিয়ে পড়বে ভিতরের বহুবিধ অনিয়ম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ ০৬:২৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কলকাতার রাস্তায় যথেষ্ট বাস নেই, এ অনেক দিনের অভিযোগ। তা বলে বাস-দুর্ঘটনার কমতি নেই। কখনও খাস টার্মিনাস থেকে চুরি হয়ে যাওয়া বেসরকারি বাস গভীর রাতে ট্র্যাফিক সিগন্যাল ভেঙে পিষে দিচ্ছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ও তার আরোহীদের, কখনও সরকারি বাস হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ছে রিকশা স্ট্যান্ডে। শহর জুড়ে বাসের রেষারেষি রোজকার ঘটনা, বাস চলার পথে যে কোনও জায়গাই প্রায় যাত্রী তোলার অঘোষিত ‘স্ট্যান্ড’, এবং যাত্রী তোলার টক্করে আরোহীদের ‘প্রাণান্ত’— অনেক সময়ই আক্ষরিক অর্থে। কলকাতার বাস দিনের ব্যস্ততম সময়ে জনবহুল রাস্তাতেও ট্র্যাফিক বিধি মানে না, হলুদ সিগন্যাল দেখেও গতি বাড়িয়ে দেয়, পথচারী পারাপারের জ়েব্রা ক্রসিং জবরদখল করে দাঁড়িয়ে থাকে— অভিযোগের ফিরিস্তি শেষ হওয়ার নয়।

Advertisement

কেন ট্র্যাফিক পুলিশের অভিযান, কড়াকড়ি ও জরিমানাও বাসের বেপরোয়া গতিতে রাশ টানতে পারছে না, তা খতিয়ে দেখলে বেরিয়ে পড়বে ভিতরের বহুবিধ অনিয়ম। প্রথম ও প্রধান অব্যবস্থাটি বাসকর্মীদের উপার্জন সংক্রান্ত। কলকাতায় বেসরকারি বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের রোজগার কমিশনভিত্তিক, সারা দিনের টিকিট বিক্রির টাকার একাংশ পান তাঁরা। স্বভাবতই তাঁদের লক্ষ্য হয়ে ওঠে যত বেশি সম্ভব যাত্রীকে বাসে তোলা, তাতে দিনশেষে কমিশন বেশি আসে। আর এই করতে গিয়েই যাবতীয় রেষারেষি, নিয়ম ভাঙা, দুর্ঘটনা। রাজ্য সরকারের তরফে মাঝেমধ্যে কমিশনভিত্তিক ব্যবস্থায় দাঁড়ি টেনে চালক-কন্ডাক্টরদের বাঁধা মাইনের কথা ঘোষণা হয়, কাজের কাজ হয় না। কাজ হওয়ার কথাও নয়: সব রুটে সরকারই বাস চালাতে পারে না, মহানগর ও শহরতলি জুড়ে বহু রুটে বাস চালানোর পারমিট দিতে হয় বেসরকারি বাসকেই, যার পরিণতি— বেশি যাত্রী তোলা ও বেশি কমিশনের সেই ঘূর্ণায়মান বৃত্তটি। বেসরকারি বাসের ভাড়ার বিষয়টিও এক বিষম সমস্যা, কোভিড-উত্তর আবহে এবং বিশেষত ডিজ়েলের মহার্ঘতার জেরে বাসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বেসরকারি বাস মালিক সংগঠন ও রাজ্য সরকারের মনান্তর নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, অথচ স্থায়ী সমাধান মেলেনি। শহরে বহু রাস্তায় অটো এমনকি ই-রিকশার বাড়বাড়ন্তও বাসের ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করছে, দুর্ঘটনাপ্রবণ বাস থেকে মুখ ফিরিয়ে বহু যাত্রী অটো বেছে নেওয়ায় অনেক রুটে মুছে যেতে বসেছে বাসের অস্তিত্ব।

ঝাঁ-চকচকে বাড়িঘর, উজ্জ্বল আলো আর শপিং মল কোনও মহানগরের আসল পরিচয় নয়, সে পরিচয় তার নাগরিক পরিবহণ ব্যবস্থায়। একে তো পথে প্রায় বাসই নেই, যে ক’টি দৌড়চ্ছে সেগুলিও নিয়মভাঙা নিয়মের পন্থী, এই অবস্থায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ— বাসের মতো গণপরিবহণ ছাড়া যাঁদের গতি নেই। কলকাতায় বাসের সমস্যাটি কেবল বাসের নয়, বাস মালিক সংগঠন বা কর্মীদেরই নয়। ট্র্যাফিক পুলিশ, সিগন্যালিং, জরিমানা ব্যবস্থার অনিয়ম-বেনিয়ম, পরিবহণ দফতর তথা সরকারের দেখেও না-দেখার উদাসীনতা ও অক্রিয়তাও এই সমস্যার বড় অংশ। মাঝেমধ্যে এক-একটি বড় পথ-দুর্ঘটনায় একটু নড়েচড়ে বসা, একটু কড়াকড়ি, আবার ফিরে যাওয়া বেপরোয়া গতিতে— এই কি মহানগরের ভবিতব্য? পথচারী ও আরোহীদের প্রাণের মূল্যে এই বিভীষিকা চলতেই থাকবে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement