—প্রতীকী চিত্র।
অকৃতকার্য এক-চতুর্থাংশ। সম্প্রতি ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা এবং মান বিষয়ক কর্তৃপক্ষ (এফএসএসএআই) জানিয়েছেন, গোটা দেশে তাঁরা ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সাল জুড়ে যে ৪,২৯,৬৮৫টি খাবারের নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন, তাদের মধ্যে ১,০৫,৯০৭টি নমুনাই নিরাপত্তাসূচক মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শতাংশের বিচারে তা প্রায় ২৫ শতাংশের কাছাকাছি। এফএসএসএআই বিজ্ঞান বিষয়ক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এ-যাবৎ খাদ্যের নিরাপত্তাসূচক ৭০০টি মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে নমুনাগুলি উত্তীর্ণ হতে পারল না, তার বিস্তারিত বিবরণ অবশ্য জানা যায়নি। কিন্তু পরিসংখ্যান সেচে যে নির্যাস উঠে আসে তা হল— বেঁচে থাকার প্রাথমিক শর্ত খাদ্যও ভারতে বিপন্মুক্ত নয়। বরং প্রতি দিনের খাবারই হয়ে উঠতে পারে তার অসুস্থতার অন্যতম কারণ। এই চিত্র আশঙ্কাজনক।
অবশ্য এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত নয়। ভারতীয় খাদ্যপণ্যের মান বিষয়ে বিদেশের মাটিতে দুশ্চিন্তা বেশ কিছু দিন ধরেই ঘনীভূত হচ্ছিল। ইতিপূর্বে ভারত থেকে রফতানি করা কাশির সিরাপ খেয়ে আফ্রিকায় বহু শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি এ দেশের দু’টি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের কিছু মশলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সিঙ্গাপুর এবং হংকং। অভিযোগ উঠেছে, সেগুলিতে মাত্রাতিরিক্ত হারে এথিলিন অক্সাইড মেশানো আছে, যা দীর্ঘ দিন খেলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। অনেকটা একই সুরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগও জানিয়েছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারত থেকে রফতানি করা অন্তত ৫২৭টি খাদ্যপণ্যে ‘বিষ’ পেয়েছে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযোগ উঠেছিল, মশলা এবং ভেষজ খাদ্যপণ্যে অনুমোদিত সীমার ১০ গুণ অধিক কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থাকলেও সেগুলিকে অনুমতি দিচ্ছে এফএসএসএআই। কিন্তু এমন সমস্ত অভিযোগই এত দিন নাকচ করেছে তারা। উল্টে দাবি করেছে, কীটনাশকের সর্বোচ্চ সীমা মেনে চলার ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যতম কঠোর নিয়ম ভারতেরই। কিন্তু যেখানে নিজের দেশে ব্যবহৃত খাবারের এক লক্ষণীয় অংশ অ-নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে, সেখানে অন্য দেশের দাবিকে উড়িয়ে দেওয়া যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য কি? বরং, খাবারের মতো এমন বিষয়, যার সঙ্গে অসংখ্য মানুষের স্বাস্থ্য এবং বেঁচে থাকার বিষয়টি নির্ভরশীল, তার উপর এত দিন কেন উপযুক্ত নজরদারি করা হল না, সেই জবাব কে দেবে?
ভারতে খাদ্যপণ্যের মান পরীক্ষার যখন এক সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, তখন সেই পদ্ধতি কঠোর ভাবে মেনে চলার উপর গুরুত্বদান একান্ত আবশ্যক ছিল। তা যে হয়নি, এই বিশাল পরিমাণ নমুনার অনুত্তীর্ণ হওয়া সেটাই প্রমাণ করে। যারা উত্তীর্ণ হল না, সেই পণ্য প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা করা হবে, প্রশ্ন সেটা নিয়েও। মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলে, এবং তার বিনিময়ে নিজেদের ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়ে তোলে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আবশ্যক। কিছু অর্থদণ্ড আর দুঃখপ্রকাশেই যাতে তাদের শাস্তি সীমিত না হয়, সে বিষয়টিও সুনিশ্চিত করা জরুরি। প্রশ্ন হল, ঘণ্টা বাঁধার কাজটি করবে কে? যে দেশে ক্ষমতাসীনের কল্যাণহস্ত মাথায় থাকলে, অথবা কাঞ্চনমূল্যে উত্তীর্ণ হওয়ার চাবিকাঠিটি অনায়াসে ক্রয় করা যায়, সেখানে সাধারণের জীবন-মূল্য তো কানাকড়ি।