—ফাইল চিত্র।
কমলাকান্ত আফিম খেয়ে ঢুলছিলেন, এমন সময় মৃদুস্বরে ‘ম্যাও’ শুনে তাঁর চটকা ভাঙল। কমলাকান্ত দেখলেন, যে বিড়ালটি এক দিন তাঁর দুধ চুরি করে খেয়েছিল এবং তাঁকে তর্কে পর্যুদস্ত করে গিয়েছিল, সেটিই ফিরে এসেছে। আজও দুধ চাই, না কি আফিমের দাবি, কমলাকান্তের প্রশ্নের উত্তরে মার্জারী মহাশয়া জানালেন, এ বার সমস্যা অন্য রকম। বিজেপি নেতা সমাজমাধ্যমে ছবি দিয়েছেন যে, এসএসকেএম-এর ওয়র্ডে বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে পুরসভা, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর সকলেই জানিয়েছে যে, হাসপাতাল থেকে বিড়াল স্থানান্তরিত করার, অথবা তাদের নির্বীর্য করার কোনও ব্যবস্থা তাদের নেই, তবুও এই হট্টগোল বিড়ালদের পক্ষে ক্ষতিকর। কমলাকান্ত বিড়ালকে খানিক চটিয়ে দেওয়ার জন্যই প্রশ্ন করলেন, হাসপাতালে বিড়ালদের থাকতে দিতে হবে, এ কেমন দাবি? বিড়াল প্রশ্নটি প্রত্যাশাই করছিলেন। মুচকি হেসে বললেন, কেন? এসএসকেএম-এ কুকুরের ডায়ালিসিস হতে পারে, আর বিড়ালদের ঠাঁইটুকুও হতে পারে না কেন? কুুকুরের মালিক আছে, আর বিড়াল স্বশাসিত বলে? নিজের গলায় বকলস পরিয়ে কারও হাতে তার রাশ তুলে দেয়নি বলেই কি বিড়ালের প্রতি এই বৈষম্য? এই এসএসকেএম-এই যখন নেতারা এসে ঘাপটি মেরে থাকতেন, তখন তো কই আপত্তি শোনা যায়নি? বিড়ালরা কারও আশীর্বাদী হাতের তোয়াক্কা করে না, তাই কি বিড়ালের প্রতি ক্রোধ? যে নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিয়ে হল্লা বাঁধাচ্ছেন, হাসপাতালের ভিতরে যে কোনও চারপেয়েকে নিয়েই কি তাঁর সেই আপত্তি? এই সমাজকে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, বিড়াল কারও মা না হতে পারে, স্বয়ং বাঘের মাসি। তার অসম্মান হলে কি দেশের অসম্মান নয়?
কমলাকান্ত বললেন, পশ্চিমবঙ্গে থেকে থেকে তুমি বড় পলিটিক্যাল হয়ে গিয়েছ। সবেতে রাজনীতি টেনে এনো না। নেতা আর নেতার কুকুরদের ব্যতিক্রমগুলো বাদ দিলে হাসপাতাল অসুস্থ মানুষের জন্য— তুমি কি অসুস্থ মানুষ? প্রশ্ন শুনে বিড়াল এক চোখ বন্ধ করে একটু ফ্যাচফ্যাচ করে হাসলেন— ভূয়োদর্শী কমলাকান্তের বুঝতে বাকি রইল না যে, এই বিড়ালই মহামতি সুকুমার রায়কেও দেখা দিয়েছিল। হাসি থামিয়ে বিড়াল বললেন, মানুষ? রোগীর বাড়ির লোকদের ইচ্ছামতো পিটিয়ে দিচ্ছে পুলিশ, মানুষের সঙ্গে কি এমন আচরণ চলে? প্রসূতিমৃত্যুতে কলকাতার সরকারি হাসপাতাল সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে; আবার, জেলা হাসপাতালে মাঝেসাঝে খুঁজলে স্যালাইনের বোতলটুকুও মেলে না— হাসপাতাল যদি মানুষের জন্যই হত, তা হলে কি তার এই অবস্থা হত? সরকারি হাসপাতাল আসলে গরিব মানুুষের জন্য। সৈয়দ মুজতবা আলীর নাম শুনেছ, কমলাকান্ত? আলীসাহেব এক স্কুলপণ্ডিতের গল্প লিখেছিলেন, যিনি হিসাব করে দেখেছিলেন যে, ইনস্পেক্টর সাহেবের কুকুরের একটা ঠ্যাঙের দাম তাঁর গোটা পরিবারের দামের সমান। সরকারি হাসপাতাল সেই সব মানুষের জন্যই। এখন তোমাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয়েছে, গরিবরাও কর্পোরেট হাসপাতালে দেখাতে যাবে— সরকারি হাসপাতাল তবে কার জন্য? তাদের জন্যই, যাদের সঙ্গে যা খুশি করা যায়। তাদেরও কি তোমাদের সরকার ‘মানুষ’ ভাবে? মার্জারী মহাশয়ার প্রশ্ন শুনে কমলাকান্ত আরও এক দলা আফিম মুখে দিলেন— এ সব প্রশ্নের মুখোমুখি পড়ার চেয়ে ঝিম মেরে থাকাই ভাল।