প্রতীকী ছবি।
এমন নহে যে সংবাদমাধ্যমে আর্থিক জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হয় না। ব্যাঙ্কের তরফেও নিয়মিত বার্তা পাঠাইয়া সন্দেহজনক লিঙ্কে সাড়া না দিবার বিষয়ে গ্রাহকদের সতর্ক করা হয়। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও মানুষের যেন শিক্ষা হয় না। সম্প্রতি খবর মিলিল ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিনিয়োগ করিতে গিয়া বিপুল পরিমাণ টাকা হারাইয়াছেন এই রাজ্যের একাধিক মানুষ। শুধু নিজে নহে, ডুবাইয়াছেন আত্মীয় পরিজনদেরও। মোবাইলে পাঠানো লিঙ্কের সূত্র ধরিয়া নির্দিষ্ট পেজ-এ পৌঁছিয়া ভার্চুয়াল টাকা ভার্চুয়াল তহবিলে জমা হইলেও শেষ পর্যন্ত সেই অর্থ আমানতকারীর ব্যাঙ্কে ঢোকে নাই। আচমকা বন্ধ হইয়া গিয়াছে সংশ্লিষ্ট লিঙ্কটিও। বাজারের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সুদ মিলিবার লোভে ঝুঁকি লইতে গিয়াই ঘটিয়াছে এমন বিপত্তি। প্রতারিতদের অনেকেরই দাবি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ভাবিয়াই তাঁহারা ওই ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ করিয়াছিলেন। আর্থিক জালিয়াতির এমন ঘটনা ফিরাইয়া আনে চিটফান্ডের স্মৃতি। সে ক্ষেত্রে অপরাধীরা ধরা পড়িয়াছিলেন বটে, কিন্তু বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হইয়াছিলেন। এখনও অনেকেরই টাকা উদ্ধার হয় নাই। আর, ভার্চুয়াল দুনিয়ার অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের হদিস মেলাই ভার। টাকা ফেরত পাইবার আশা দূর অস্ত্।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় হামেশাই নূতন কিছু না কিছু আবিষ্কৃত হইতেছে। আর তাহা লইয়া মানুষের উৎসাহের অন্ত নাই। কখনও মোবাইলে গেম খেলিয়া টাকা মিলিতেছে তো কখনও কোনও লেনদেন করিতে গিয়া লাভ হইতেছে ক্যাশব্যাক। বর্তমান হুজুগ ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ ক্রয় করিয়া নিমেষে বড়লোক হইবার। সংবাদমাধ্যমে এই নূতন সম্পদের বিপুল সম্ভাবনার কথা পড়িয়া অনেকেই আগ্রহী হইতেছেন সেই সোনা খুঁজিবার দৌড়ে যোগ দিতে। সমস্যা হইল, সাধারণ মানুষের অধিকাংশের নিকটই সম্পদটির চরিত্র সম্পূর্ণ অচেনা। তাহার লেনদেনের পদ্ধতি, ব্যবসার ধরন, সবই অজানা। অস্পষ্ট ভাবে জানা শুধু এই কথাটি যে, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করিলে রাতারাতি ধনকুবের হওয়া সম্ভব। এই অজ্ঞানতা-আবৃত লোভেরই সুযোগ লইয়া প্রতারণার ফাঁদ পাতিতেছে অপরাধীরা।
এখানেই প্রশ্ন আসে বিবেচনা বোধের। সরকারের দায়িত্ব নিশ্চয়ই আছে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিরও দায়িত্ব আছে। কোনও সংস্থা লোক ঠকাইলে তাহাকে শাসন করিবার দায়িত্ব অবশ্যই প্রশাসনের। কিন্তু, প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককেও নিজের আচরণের দায়িত্ব লইতেই হইবে। বুঝিতে হইবে, সম্পদের চরিত্র না বুঝিয়া, লগ্নির ধরন না বুঝিয়া, ঝুঁকির মাপ না বুঝিয়া টাকা ঢালিয়া দিলে সেই টাকা মার যাইবার সম্ভাবনা বিপুল। কে কতখানি ঝুঁকি লইতে প্রস্তুত, সেই সিদ্ধান্ত একান্ত ভাবেই নাগরিকের ব্যক্তিগত। কিন্তু, ঝুঁকির মাত্রা না বুঝিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িলে, এবং সর্বস্বান্ত হইলে অন্য কেহ বিপত্তারণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হইবেন, এমন আশা ভয়ঙ্কর। বিশেষত, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বারংবার প্রতারণার সংবাদ মিলিবার পরও যদি কেহ সেই বিপদের মুখে নিজেকে সঁপিয়া দেন, তাহা হইলে সেই ক্ষতি হইতে রক্ষা করিবে কে? প্রতারিত হইবার বৃহত্তম কারণ অসচেতনতা। চতুর্দিকে যখন সাবধানবাণী ধ্বনিত হইতেছে, তখন সে দিকে কান দেওয়া জরুরি, এই কথাটি বুঝিয়া লওয়া চাই।