Suicide

চরম পথে

সমাজে অন্তর্নিহিত লিঙ্গ বৈষম্যই হয়তো মহিলাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি এবং শেষ পর্যন্ত এমন কঠিন পদক্ষেপ করতে প্ররোচিত করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৫:১৮
Share:

আত্মহত্যার পথ।

হিউম্যান ডেভলপমেন্ট রিপোর্ট (এইচডিআর) ২০২১-২২ আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর একটি বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরেছে। বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ আত্মঘাতী হন। চিন্তার বিষয় এই যে, মাঝারি ও নিম্ন আয়ের দেশগুলিতেই আত্মহননের কারণে মৃত্যুহার বহুলাংশে বেশি। অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে আত্মহনন এবং দারিদ্রের মধ্যে এক পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, মেয়েরাই আত্মহননের চেষ্টা বেশি করেন, যদিও মারা যান পুরুষরা বেশি। সমাজে অন্তর্নিহিত লিঙ্গ বৈষম্যই হয়তো মহিলাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি এবং শেষ পর্যন্ত এমন কঠিন পদক্ষেপ করতে প্ররোচিত করে। আর, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মানসিক সমস্যার প্রতি সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব শেষ পর্যন্ত পুরুষদের আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়।

Advertisement

এ ক্ষেত্রে ভারতের চিত্রটি কেমন? কিছু দিন আগে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো (এনসিআরবি)-র প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-র তুলনায় ২০২১-এ দেশে আত্মহত্যা ৭.২ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর আত্মহত্যার কারণে মারা গিয়েছেন ১,৬৪,০৩৩ জন। রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে মহারাষ্ট্রে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশ। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। মোট মৃত্যুর মধ্যে দিনমজুরদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালেও এই একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। এর পরে যথাক্রমে রয়েছেন স্বনির্ভর এবং বেকার মানুষেরা। এই বছর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও আত্মহত্যার হার লক্ষণীয় ভাবে বাড়তে দেখা গিয়েছে। তথ্যে প্রকাশ, বিশেষত ১৫-২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। সার্বিক ভাবে, অবসাদ, আর্থিক অনটন, সাইবার বুলিং, পারিবারিক সমস্যা, অসুস্থতার মতো নানা সামাজিক ও আর্থিক কারণে আত্মহননের মতো চরম পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অতিমারি কালে প্রিয়জনের মৃত্যু ও কাজ হারানোও আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। সুতরাং, আত্মহত্যা রোধে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির প্রকল্পগুলির উন্নয়নের আশু প্রয়োজন।

ভারতে এমনিতেই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের অভাব প্রকট। তথ্য বলছে, দেশে প্রতি দশ লক্ষ মানুষের জন্য মাত্র তিন জন করে মন চিকিৎসক রয়েছেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যাটা আরও কম। পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতা সংক্রান্ত সামাজিক বিরূপ মনোভাবও বহু মানুষকে এর নিরাময়ের পথ থেকে বিরত রাখে। প্রসঙ্গত, কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে মেন্টাল হেলথকেয়ার অ্যাক্ট, ২০১৭ তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করতে বাধা দিলেও ইন্ডিয়ান পিনাল কোড-এর সেকশন ৩০৯ অন্তর্গত এটি এখনও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা ছাড়া অনেক রাজ্যে মেন্টাল হেলথকেয়ার অ্যাক্ট, ২০১৭-র নির্দেশাবলি ঠিকমতো বাস্তবায়িত করা হয়নি। ফলে যত ক্ষণ না আত্মহত্যার চেষ্টাকে ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা বন্ধ হবে, তত ক্ষণ আইনের ভয়ে এই ধরনের ঘটনার তথ্য ঠিকমতো সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না, যা পরোক্ষে নীতি-নির্ধারকদেরও ঠিকমতো পদক্ষেপ করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহানুভূতির চোখে দেখতে হবে। আগামী দিনে সমাজ এঁদের থেকে মুখ ফেরালে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement