Lionel Messi

অর্থমনর্থম্‌

মেসি এবং রোনাল্ডোর বিত্তের তুলনা যুগোপযোগী। আজিকে অর্থের স্থান সবার উপরে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১ ০৫:২৪
Share:

লিয়োনেল মেসি এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড় কি না, এই বিষয়ে তর্ক উঠে। রেডিয়ো, টেলিভিশন বা সংবাদপত্রে; সমাজমাধ্যমেও। মানুষ তুলনা পছন্দ করেন। এই ক্ষেত্রে তুলনা করিবার খেলোয়াড় আর এক জন মজুত আছেন, তিনি হইলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এখন জুভেন্টাসের হইয়া খেলিলেও রোনাল্ডো একদা রিয়াল মাদ্রিদ দলে খেলিতেন। মেসি খেলিতেন সে দেশেরই বার্সেলোনা দলে— এখনও তিনি সেই দলেরই সদস্য। রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা দল দুইটি চিরশত্রু। রোনাল্ডো যখন রিয়াল মাদ্রিদে খেলিতেন, তখন মেসির সহিত তাঁহার তুলনা সহজতর ছিল। এক্ষণে দুই ভিন্ন দেশে খেলিয়াও উহাদের তুলনা অব্যাহত। একই মরসুমে মেসি বার্সেলোনার হইয়া কতগুলি গোল করিলেন, আর রোনাল্ডো জুভেন্টাসের হইয়া কতগুলি, সেই চর্চা এখনও শুনা যায়। দুই জনের আয়ের তুল্যমূল্য বিচারও চলে। ফুটবলের দুনিয়ার আরও একটি কালজয়ী তুলনা আর্জেন্টিনার দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা এবং ব্রাজিলের এডসন আরান্টেস ডো নাসিমেন্টোর— দ্বিতীয় জনকে সারা গ্রহ চিনে পেলে নামে। ফুটবল-উন্মাদ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দুই দেশ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা চিরশত্রু। তবে উল্লেখ্য যে, পেলে এবং মারাদোনার তুলনায় কিন্তু দুই খেলোয়াড়ের উপার্জনের অঙ্ক আসে না। বরং ইহা চর্চার বিষয় যে, ফুটবলে কাহার ড্রিবল কত মনোমুগ্ধকর ছিল, মারাদোনা অপেক্ষাকৃত খর্বকায় হইয়াও বিপক্ষ দলের কত জন খেলোয়াড়কে কী রূপে কাটাইতেন ইত্যাদি। পেলে খেলিতেন স্বদেশি স্যান্টোস দলের হইয়া, আর মারাদোনা ইটালির নাপোলি দলের পক্ষে। উক্ত দুই দলই আজিকার ফুটবল দলের তুলনায় দরিদ্র। সুতরাং, খেলোয়াড় জীবনে ধনকুবের হইবার সম্ভাবনা কম। পক্ষান্তরে, মেসি এবং রোনাল্ডোর বিত্তের তুলনা যুগোপযোগী। আজিকে অর্থের স্থান সবার উপরে। ইংরেজিতে বলিলে বলিতে হয়, উহাই অর্ডার অব দ্য ডে।

Advertisement

মেসির সহিত অবশ্য মারাদোনারও তুলনা হইয়াই থাকে। মারাদোনার নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা দল বিশ্বকাপ জিতে ১৯৮৬ সালে। ব্যক্তিগত ক্রীড়ানৈপুণ্য বাদ রাখিয়া এই সত্য অনস্বীকার্য যে, স্বদেশের নেতা হিসাবে এত দিন পর্যন্ত সাফল্যের নিরিখে মেসি মারাদোনার তুলনায় পিছাইয়া ছিলেন। বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, মেসির অধিনায়কত্বে আর্জেন্টিনা কোনও কাপই জিতে নাই। অবশেষে এই বৎসরে কোপা আমেরিকা। ফাইনালে প্রতিপক্ষ চিরশত্রু ব্রাজিল। যে মেসি বার্সেলোনার হইয়া ক্লাব ফুটবলে সফল, কিন্তু দেশের হইয়া চূড়ান্ত অসফল, এহেন অপবাদে অভিযুক্ত তিনি পাপক্ষালন করিলেন। তাঁহার অধিনায়কত্বে এই প্রথম আর্জেন্টিনা কোনও কাপ জিতিল। চিরশত্রু ব্রাজিলকে হারাইয়া। কোপা আমেরিকা ফাইনালের পূর্বে ব্রাজিলে সংবাদপত্রের কোনও কোনও ক্রীড়াসাংবাদিক মেসির নামে অপবাদ স্মরণ করিয়া আর্জেন্টিনার জয় চাহিয়াছিলেন। ব্রাজিলের খেলোয়াড় নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র উক্ত সাংবাদিকগণের নিন্দা করিয়াছিলেন এই বলিয়া যে, উহারা ব্রাজিল দেশের হিতাকাঙ্ক্ষী নহেন। এতৎসত্ত্বেও নেমার ব্রাজিলকে জিতাইতে পারিলেন না।

কোপা আমেরিকা ফাইনাল হইয়াছিল বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে। দূরদর্শন মারফত বিশ্ববাসী খেলাটি অবলোকন করিয়াছেন। দর্শকবৃন্দ খুশি হইতে পারেন নাই। যাঁহারা ভাবিয়াছিলেন দুই প্রতিপক্ষ যখন ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা, তখন না-জানি ফুটবলের কী জাদু দেখা যাইবে। সময়ের পার্থক্যহেতু পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধে উক্ত খেলার ক্ষণ ধার্য হইয়াছিল প্রত্যুষকালে। সুতরাং, এই গোলার্ধে যাঁহারা খেলাটি চলাকালীন দেখিয়াছেন, তাঁহারা যৎপরোনাস্তি হতাশ। খেলায় ফাউল বেশি হইয়াছে, পায়ের জাদু কম দেখা গিয়াছে। প্রতিপক্ষ দুই দলে মেসি এবং নেমারের মতো দুই জগদ্বিখ্যাত খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও। আসলে, প্রতিযোগিতায় জয়লাভ দুই দলেরই লক্ষ্য ছিল। প্রতিযোগিতা যখন, তখন জয় সকলের লক্ষ্য থাকিবেই। মূল কথা তাহা নহে, মূল কথা হইল যেন তেন প্রকারেণ জয়লাভ। ফুটবলের নৈপুণ্য জলাঞ্জলি যায় তো যাউক। ইহা এই কালের সমস্যা। এই কাল মনে করে, পথ বড় নহে, গন্তব্যই শ্রেষ্ঠ। মিনস অপেক্ষা এন্ডসই অগ্রগণ্য। রেকর্ডে লিপিবদ্ধ হইবে যে, কোপা আমেরিকার ফাইনালে মেসির অপবাদমুক্তি ঘটিয়াছিল। সুতরাং, রোনাল্ডো না মেসি, কে বড় খেলোয়াড় বুঝাইতে যে কালে তাঁহাদের বিত্তের তুলনা করা হয়, সেই কালে কোপা আমেরিকার ফাইনাল দেখিয়া দর্শকবৃন্দের হতাশ হইবার কারণ নাই।

Advertisement

যৎকিঞ্চিৎ

‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’-এর বিপরীত শব্দ কী? চাইলেও যারে পাওয়া যায় না, কিংবা এক কথায়, ইলিশ। দিঘা-ডায়মন্ড হারবারে মাঝে মাঝে তার দেখা মেলে বটে, বাঙালির কপাল বা পাত অবধি পৌঁছয় না। বাজারে বিরল রুপোলি ঝলক দেখে এগিয়ে গেলে দাম শুনেই ছিটকে ফেরত: ওই দামে অক্সিমিটার কিনে রাখি বরং। চেঁচিয়ে ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’ গাইলেও কাজ হচ্ছে না, বাংলাদেশ বলছে, ‘যেতে নাহি দিব’। একটা আশা ছিল, তা সেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেও ডামাডোল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement