Firhad Hakim

পুলিশের নেপথ্যে

বুধো অবশ্য উঠিয়া দাঁড়াইয়া পাল্টা মারিয়াছিল, কিন্তু কলিকাতা পুলিশ নীরবে হজম করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৪০
Share:

ফাইল চিত্র।

কলিকাতা পুরসভার নির্বাচনের পূর্বে কলিকাতাবাসীর সম্মুখে আর এক দ্বন্দ্ব উপস্থিত হইল— ফিরহাদ হাকিমের কথা শুনিয়া তাহারা হাসিবে, না কি কাঁদিবে? পুলিশ উৎকোচ লইয়া হকার বসাইতেছে, পুরসভা বসায় নাই, বলিয়াছেন ফিরহাদ। শাসক দলের সমর্থকও এ কথা গলাধঃকরণ করিতে গিয়া বিষম খাইবেন। পুলিশকে খলনায়ক এবং পুরসভাকে অসহায় দর্শক প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা এক আজগুবির জগতে প্রবেশ করিয়াছে। অবৈধ হকার সরাইতে ব্যর্থতা, হকার নীতি রূপায়ণে বিলম্বের দায় পুরসভারই। পুলিশকে তোপের মুখে ফেলিবার চেষ্টা হ য ব র ল-র উধো এবং বুধোকে মনে করাইয়া দেয়। উধো নিজের বোঁচকা বুধোর উপর চাপাইয়া, নিজেও পোঁটলার উপর চাপিয়া বসিয়া বুধোকে ধাঁই ধাঁই করিয়া হুঁকাপেটা করিয়াছিল। বুধো অবশ্য উঠিয়া দাঁড়াইয়া পাল্টা মারিয়াছিল, কিন্তু কলিকাতা পুলিশ নীরবে হজম করিয়াছে। প্রশ্ন উঠিবে, তৃণমূল কংগ্রেস দলটিই যেখানে পুরসভা এবং সরকারে ক্ষমতাসীন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং পুলিশমন্ত্রী, এবং বিদায়ী মেয়র নগরোন্নয়ন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলাইয়াছেন, তখন হকার বসাইবার দায় পুলিশের উপর আরোপ করা চলে কি? পুলিশ দুর্নীতি করিয়া থাকিলে রাজ্য সরকার তাহা নিয়ন্ত্রণ করে নাই কেন? দশ বৎসরেরও অধিক সময় কী করিয়া কলিকাতার লক্ষাধিক হকার অবৈধ ভাবে ব্যবসা করিল?

Advertisement

২০১৮ সালে হকার নীতি গ্রহণ করিয়াও তাহা কার্যকর করে নাই রাজ্য সরকার। অভিযোগ, তাহার ফলে যে ফাঁকটি রহিয়া গিয়াছে, তাহা রাজনৈতিক ক্ষমতা-আশ্রিত অনৈতিক কার্যকলাপের বিচরণক্ষেত্র হইয়া উঠিয়াছে। অভিজ্ঞতা বলিবে, যে রাজনৈতিক নেতা যে এলাকায় ক্ষমতাশালী, তিনি সেখানে উৎকোচ গ্রহণ করিয়া হকারকে ব্যবসা করিবার অনুমতি দিয়াছেন। তাঁহার মুখ কখনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির, কখনও ইউনিয়ন নেতার, কখনও পাড়ার ক্লাবের কর্তার, কখনও বা অপর কাহারও। ক্ষমতাসীন নেতাদের হইয়া বিলিব্যবস্থা করিবার, ধমকাইবার-চমকাইবার কাজটি করিয়াছে পুলিশ। আইন-বহির্ভূত এই ব্যবস্থার অংশীদার আইনপ্রণেতা এবং আইনরক্ষক, উভয়ই। হকার এই বিস্তৃত ব্যবস্থার একটি অংশ মাত্র। রিকশা, অটো-সহ বিবিধ পরিবহণ, নানাবিধ ব্যবসা ও পরিষেবা বহু বৎসর অবৈধ, অসংগঠিত রহিয়া গিয়াছে নির্বাচনী যন্ত্রে তৈলদানের প্রয়োজনে। তাহার একটি পরিণাম আর্থিক দুর্নীতি। দ্বিতীয় পরিণাম নাগরিকের হয়রানি।

ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগটি বহু মাত্রায় হাস্যকর হইলেও তাহাতে সত্যের একটি কণা অবশ্য রহিয়াছে— এবং, তাহাও রাজ্য সরকারের পক্ষে ইতিবাচক নহে। ঘটনা হইল, পুলিশের নিচু তলার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ উপরমহলের নাই। সম্প্রতি সিভিক ভলান্টিয়ার লইয়া যে তর্ক হইল, সেই ঘটনাক্রম এই নিয়ন্ত্রণহীনতার একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ। বহু ক্ষেত্রেই নিচু তলার পুলিশকর্মীরা এলাকায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ। রাজনৈতিক অনাচারে তাঁহারা সাগ্রহে যোগদান করেন তো বটেই, স্বপ্রবৃত্ত অনাচারও নেহাত কম ঘটে না। কিন্তু, সেই অনাচার নিয়ন্ত্রণ করিতে না পারিবার দায়টি, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিসাবে, ফিরহাদ হাকিম অস্বীকার করিবেন কোন উপায়ে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement