Supreme Court of India

দীর্ঘসূত্র

দু’বছরের অধিকাংশ সময়েই ৩৪ জন বিচারক কর্মরত থাকা অবস্থাতেও, শীর্ষ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮২ হাজার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জনপ্রিয় এক হিন্দি ছবিতে বিচারকের উদ্দেশে আইনজীবীরূপী নায়কের আবেগী সংলাপে উঠে এসেছিল, কী ভাবে আদালতে দিনের পর দিন শুনানির পরবর্তী তারিখই মেলে শুধু, বিচার মেলে না। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সত্য অনেক সময়ই অতিনাটকীয়, তবে অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবানুগও। ভারতের নানা আদালতে যে মামলার পাহাড় জমে আছে, বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রায়-অঙ্গাঙ্গি হয়ে উঠেছে এক ক্লান্তিকর দীর্ঘসূত্রতা, এই সত্যটি সেখানে কোনও ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি এক সম্মেলনে জেলাস্তরের বিচার-প্রতিনিধিদের সামনে আহ্বান জানালেন, বিচারব্যবস্থায় ঢুকে পড়া ‘মুলতুবি সংস্কৃতি’তে বদল আনার। দেশের প্রথম নাগরিকের মুখে ধ্বনিত উদ্বেগ যদি বিচারব্যবস্থার সমস্যাটি কত গভীর তার পরিচায়ক হয়, তা হলে ‘ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড’-এর এই তথ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে সমস্যা কোন সীমায় পৌঁছেছে তার আভাস— দেশের হাই কোর্টগুলিতে বিচারের অপেক্ষায় পড়ে আছে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলিয়ে প্রায় ৫৮.৫৯ লক্ষ মামলা! এদের মধ্যে প্রায় ২.৪৫ লক্ষ মামলার বয়স কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর, প্রায় ৬২ হাজার মামলা ত্রিশ বছরের বেশি পুরনো, তারও মধ্যে তিনটি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষা করছে ১৯৫২ সাল থেকে।

Advertisement

শুধু হাই কোর্টই নয়, সুপ্রিম কোর্টেও জমে আছে অজস্র মামলা। গত দু’বছরের অধিকাংশ সময়েই ৩৪ জন বিচারক কর্মরত থাকা অবস্থাতেও, শীর্ষ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮২ হাজার। পূর্ণশক্তি নিয়োগ করেও জমে থাকা কাজ সামলানো যাচ্ছে না, এ-হেন পরিস্থিতিই বুঝিয়ে দিচ্ছে— সমস্যাটি আসলে একরৈখিক নয়, বহুস্তরীয়। নিম্ন আদালত ও হাই কোর্টগুলিতেও সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে বিচারকের অভাব তার একটি দিকমাত্র। বিচার-পরিকাঠামোতেও রয়ে গিয়েছে নানা অভাব ও অসঙ্গতি, দিনের শেষে যা বিচারের গতি মন্থর করে তুলছে, ফলস্বরূপ দীর্ঘায়িত হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়াটিই। আবার সমস্ত দোষ কেবল আদালতের ঘাড়ে চাপানোও মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়; মামলার স্তূপ কেন হালকা হচ্ছে না সেই কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে, বহু ক্ষেত্রেই বাদী বা বিবাদী পক্ষের জড়িতরা হয় নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত থাকছেন না, কিংবা মামলা চালিয়ে যেতে খোদ মামলাকারীরাই অনিচ্ছুক। কিছু আদালত এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপও করেছে— মামলার ‘এজিং অ্যানালিসিস’, বা একই ধরনের নানা মামলা এক সঙ্গে জুড়ে বিবেচনা করায় গতি এসেছে বিচারে।

প্রয়োজনের নিরিখে এ যে একেবারেই যথেষ্ট নয়, ভারতীয় বিচারব্যবস্থার তা বিলক্ষণ জানা। বিচারে বিলম্ব আসলে অবিচারেরই নামান্তর— এই সত্যও তার অজানা নয়। দেড়শো কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে এই মুহূর্তে জেলা আদালত, হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট মিলিয়ে জমে থাকা মামলার সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি, এই তথ্যের গভীরে আসলে লুকিয়ে আছে এক গভীর অসুখ— বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে গর্ব করা রাষ্ট্রে নাগরিকের বিচার চাওয়ার ও বিচার পাওয়ার অধিকার ক্রমাগত লঙ্ঘিত হয়ে চলার অন্যায়। এই অসুখ নিরাময়ে পূর্ণ দায়বদ্ধতায় এগিয়ে আসতে হবে বিচারপ্রার্থী ও বিচারদাতা, দুই পক্ষকেই।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement