Advertisement

খ্যাতির দায়িত্ব

কোনও পণ্যের প্রচারে নাম লেখানো বা চুক্তি করার আগে বিজ্ঞাপনে সেই পণ্য সম্পর্কে কী দাবি করা হচ্ছে, তাঁরা যেন তা খতিয়ে দেখে নেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২২ ০৫:৪৬
Share:

বিজ্ঞাপনের মুখ হিসেবে বিখ্যাত ব্যক্তিদের, বিশেষত চিত্রতারকা ও খেলোয়াড়দের এ দেশে বিশেষ সুনাম রয়েছে, এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা বিজ্ঞাপনে যে পণ্য বা পরিষেবাগুলির হয়ে প্রচার করেন, তার সঙ্গে তাঁদের পেশার বড় একটা সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের নির্দেশিকায় সম্প্রতি তাঁদের সতর্ক করে বলা হল, কোনও পণ্যের প্রচারে নাম লেখানো বা চুক্তি করার আগে বিজ্ঞাপনে সেই পণ্য সম্পর্কে কী দাবি করা হচ্ছে, তাঁরা যেন তা খতিয়ে দেখে নেন। চিত্রতারকা পান মশলা বা ক্রিকেটার গৃহনির্মাণসামগ্রীর বিজ্ঞাপন করতেই পারেন, কিন্তু বিজ্ঞাপনে এই পণ্যগুলি সম্পর্কে তাঁর মুখ দিয়ে যে কথাগুলি বলানো হচ্ছে তার দায় তাঁরা এড়াতে পারেন না, ‘এই বিস্কুট সবার সেরা’ বা ওই নরম পানীয় খেলে দুঃসাহসিক সব কাজ করে ফেলাও অসম্ভব নয়— সরাসরি বা ঘুরিয়ে এই জাতীয় বার্তার দায় স্রেফ বিজ্ঞাপন সংস্থা বা নির্মাতাদের নয়, বার্তাবহেরও।

Advertisement

অর্থাৎ সার কথা, রুপোলি পর্দা বা খেলার মাঠের মতো বিজ্ঞাপনও স্রেফ ‘সেলেব্রিটি’দের ‘এলাম েদখলাম জয় করলাম’-এর মঞ্চ নয়। বরং যে দায়বদ্ধতা নিয়ে তাঁরা নিজেদের পেশাগত কাজ করেন, বিজ্ঞাপনী পণ্য বাছাই এবং তার সপক্ষে বলা প্রতিটি শব্দের ক্ষেত্রেও সেই দায়বদ্ধতা তাঁদের কাছ থেকে প্রার্থিত। কেন্দ্রীয় উপভোক্তা মন্ত্রক নির্দেশিকায় এই ভূমিকাই স্পষ্ট করে দিয়েছে, এবং তা অত্যন্ত সঙ্গত। সাধারণ মানুষের উপর নামী চিত্রতারকা বা খেলোয়াড়দের খ্যাতির মাহাত্ম্য বলে বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না— স্বপ্নের মানুষটি বিজ্ঞাপনে পান মশলা, সাবান বা স্বাস্থ্যবর্ধক পানীয় যা কিছুরই হয়ে সওয়াল করুন, তার গ্রহণযোগ্যতা ও ক্রয়বিক্রয় বাড়তে বাধ্য, কারণ সাধারণ মানুষটির কাছে তখন সেই পণ্যটি ভাল, অমুক তারকা বিজ্ঞাপনে বলেছেন বলে। বিজ্ঞাপনকে আকর্ষক ও বিচিত্র করে তুলতে বিজ্ঞাপন নির্মাতারা নানা কৌশলের সাহায্য নেন: অতিকথন, সমধর্মী অন্য পণ্যকে ছোট করে বিশেষ একটির প্রশংসা, অবাস্তব দৃশ্য ও শব্দকল্প ইত্যাদি। এই সব কিছুই সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে, তাঁরা মনে করেন এই সবই সত্য কারণ ওই পণ্যের সঙ্গে বিখ্যাত মানুষটির প্রত্যক্ষ সংযোগ, পর্দায় তাঁর সহাস্য উদার অনুমোদন।

পণ্যের প্রচারে বিখ্যাত মানুষদের বিজ্ঞাপন সংস্থার তৈরি করা বুলি আওড়ানো, নিজে সেই পণ্য ব্যবহার না করা, পর্দায় নিজের বলা কথা বাস্তবে অস্বীকার— এ নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক তারকা ঘোষণাও করেছেন, ত্বক ফর্সা করে এমন প্রসাধনী বা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর পণ্যের বিজ্ঞাপন তাঁরা করবেন না। কিন্তু সাধারণ ভাবে এই প্রবণতা বহমান, কারণ সরকারের তরফে এ ক্ষেত্রে যথাযথ আইন বা দণ্ডবিধানের অভাব। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় সতর্কবার্তার পাশাপাশি বিখ্যাত ব্যক্তিদের জরিমানার কথাও বলা হয়েছে। সামান্য অর্থদণ্ডের মাধ্যমে এই অসঙ্গতির সুরাহা হবে না, কারণ মহাতারকাদের কাছে কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানাও কিছু নয়। প্রয়োজন কঠোর দণ্ডবিধান, এমন ভর্ৎসনা যার সামাজিক দৃশ্যমানতা আছে। আইনের চোখে তত্ত্বত সবাই এক, কিন্তু তারকারা অনেক সময়েই খ্যাতির গুরুত্বে ছাড় পেয়ে যান। তা হলে চলবে না। খ্যাতির এক বিরাট দায়বদ্ধতা আছে, বিখ্যাত মানুষদের সেই দায়বদ্ধতা েদখাতে হবে। তাঁরা নিজেরা তা বুঝেও না বুঝলে, সুমতি ফেরাতে হবে সরকারকেই, প্রয়োজনে ‘শাসন’ করে।

Advertisement

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement