Communal Violence

হুঁশিয়ার

যথার্থ গণতন্ত্রকে দুর্বল করিয়া আধিপত্য বিস্তারই কুৎসিত এবং মারাত্মক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের এই আক্রমণের প্রকৃত লক্ষ্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১৫
Share:

ছবি: টুইটার।

অপরাধী সর্বদা চিহ্ন রাখিয়া যায় কি না সেই বিষয়ে তর্ক থাকিতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করিয়া সাম্প্রতিক অশান্তির সর্বাঙ্গে এক কুৎসিত ষড়যন্ত্রের দুর্লক্ষণগুলি অতিমাত্রায় প্রকট। পূজামণ্ডপে সহসা বিচিত্র দৃশ্যের জন্ম, তাহার পূর্বে ধর্মাশ্রিত বিদ্বেষ ও বিভাজনের কারবারিদের উদ্যোগে সংঘটিত সমাবেশ এবং তাহার পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অশান্তির দ্রুত বিস্তার— ঘটনাপরম্পরার কোনও অংশকেই স্বাভাবিক বা স্বতঃস্ফূর্ত বলিয়া ধরিয়া লওয়া কঠিন। বাংলাদেশের প্রশাসকরাও স্পষ্ট ভাবে এই অশান্তিকে পরিকল্পিত চক্রান্ত বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। কিন্তু সেখানে তাঁহাদের কর্তব্যের সূচনামাত্র। দ্রুত এবং যথাযথ তদন্তের পথে অপরাধের সম্পূর্ণ স্বরূপ উন্মোচন করিয়া অপরাধীদের বিচার এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করাই প্রশাসনের অবশ্যকর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট ভাষায় তেমন প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। প্রতিশ্রুতি আশাপ্রদ, কিন্তু যথেষ্ট নহে। গত কয়েক দিনের ঘটনায় কিছু কিছু প্রশাসনের এবং শাসক দলের স্থানীয় প্রতিনিধিদের ভূমিকা লইয়া সংশয় দেখা দিয়াছে। ষোলো আনা তৎপরতার সহিত রাজধর্ম পালনের মাধ্যমে এই ধরনের সংশয় নির্মূল করিবার দায়িত্ব প্রশাসনের উপরেই বর্তায়।

Advertisement

বস্তুত, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থেও এই দায়িত্ব পালন অত্যন্ত জরুরি। যথার্থ গণতন্ত্রকে দুর্বল করিয়া আধিপত্য বিস্তারই কুৎসিত এবং মারাত্মক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের এই আক্রমণের প্রকৃত লক্ষ্য। গোলযোগ সৃষ্টির জন্য দুর্গাপূজার উপলক্ষটিকে নির্বাচন করিবার মধ্যেও তাহার ছাপ স্পষ্ট। বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বরাবর বহু দুর্গোৎসবের আয়োজন হইয়া আসিতেছে। ধর্মপরিচয়ের অপেক্ষা না রাখিয়া বহু নাগরিক সেই উৎসবের আনন্দ ভাগ করিয়া লন। সাম্প্রতিক কালে এই স্বাভাবিক উদ্যাপনের ধারায় এক ধরনের স্বাভাবিক স্রোত দেখা গিয়াছে, আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার প্রশাসন ও রাজনীতি নিশ্চয়ই তাহার জন্য অন্তত আংশিক কৃতিত্ব দাবি করিতে পারে। এই সুস্থ প্রবণতাটিকে বানচাল করিবার উদ্দেশ্যেই বিদ্বেষের বিষে জনসমাজের স্বাভাবিক ধারাটিকে বিষাক্ত করিয়া তুলিবার এই তৎপরতা। সংখ্যালঘুর উপর এই আক্রমণ প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ। ইহার পিছনে সীমানা-অতিক্রমী, গুরুতর আকারে সক্রিয় থাকিতে পারে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও, বিশেষত আফগানিস্তানে তালিবানি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হইবার পরে। সুতরাং বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং সমাজের দায়িত্ব বিপুল।

দায়িত্ব ভারতের, বিশেষত প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গেরও। প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রসার ও প্রচারের যে কোনও অপচেষ্টাকে সর্বশক্তি দিয়া প্রতিহত করা। সেই রাজনীতির প্রচারক ও পৃষ্ঠপোষকরা তেমন চেষ্টায় মাতিতে কালক্ষেপ করে নাই, বিষকুম্ভ হইতে তাহাদের প্রকৃত পানীয় বিতরণে মাতিয়াছে, কেহ কেহ এমনকি সমস্ত আবরণ সরাইয়া দিয়া বাংলাদেশের ঘটনা হইতে পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ফসল তুলিবার উদগ্র বাসনাও প্রচার করিতেছেন। পাশাপাশি দেখা গিয়াছে এই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের আকর্ষণ করিবার জন্য হিংস্র প্রচারের তৎপরতাও। আবারও প্রকট হইতেছে সেই বহুচর্চিত সত্য যে— হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা এবং ইসলামি সাম্প্রদায়িকতা পরস্পরের পরম মিত্র; সুস্থ, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ও রাজনীতিই তাহাদের উভয়ের প্রকৃত প্রতিপক্ষ। এই কারণেই প্রতিটি শুভার্থী নাগরিকের দায়িত্ব একযোগে বিদ্বেষ এবং বিভাজনের বিরুদ্ধে সরব ও সক্রিয় হওয়া। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজে সেই সক্রিয়তার কিছু কিছু পরিচয় গত কয়েক দিনে মিলিয়াছে, ইহা সুলক্ষণ। পশ্চিমবঙ্গেও অনুরূপ লক্ষণ অনুপস্থিত নহে। কান্ডারিরা হুঁশিয়ার হইবেন কি না তাহার অপেক্ষা না করিয়া নিজেরা হুঁশিয়ার হওয়াই নাগরিকের দায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement