Kolkata

অসুন্দর

উৎসব শেষে কাঠামোগুলি খোলার দায়িত্বও ন্যস্ত ডেকরেটরদের উপরেই, অথচ তার কোনও পুরসভা-নির্ধারিত সময়সীমা নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৮
Share:

উৎসবের রেশ কাটেনি এখনও।

দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা সদ্য পেরিয়েছে, উৎসবের রেশ কাটেনি এখনও। সে জন্যই কি মহানগরের আনন্দ-উদ্‌যাপনের অপরিহার্য চিহ্নগুলি— রাস্তার উপরে বা পাশে বাঁশের কাঠামো, এমনকি কোথাও কোথাও হোর্ডিং-ব্যানার ইত্যাদিও— রয়ে গিয়েছে শহরময়? দৃশ্য দূষণের কথা ছেড়েই দেওয়া যাক— পুর-কর্তৃপক্ষের নান্দনিকতাবোধের সঙ্গে শব্দ দু’টির বনিবনা নেই— কিন্তু বিপদাশঙ্কা? পথচলতি মাথার উপরে বা দুই ধারে বাঁশের কাঠামোগুলি অনেক জায়গায় হেলে পড়েছে, ঝড়বৃষ্টি বা জোর হাওয়ায় সেগুলি ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা। কাঠামোগুলি তৈরি করেন ডেকরেটররা, ব্যানার লাগানোর দায়িত্ব বিজ্ঞাপন সংস্থার। উৎসব শেষে কাঠামোগুলি খোলার দায়িত্বও ন্যস্ত ডেকরেটরদের উপরেই, অথচ তার কোনও পুরসভা-নির্ধারিত সময়সীমা নেই। কাঠামোগুলি পুরসভার তদারকি বা নজরদারিতেও তৈরি হয় না, সমস্ত প্রক্রিয়াটিই পূজা কমিটি, বিজ্ঞাপন সংস্থা ও ডেকরেটরদের পারস্পরিক সংযোগ-সম্পর্কের ফল, আর উৎসবশেষে কোথায়ই বা বিজ্ঞাপন সংস্থা, পূজা কমিটির তৎপরতাই বা কোথায়, ডেকরেটররা তো নিমিত্ত মাত্র। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় যে সঙ্গত কারণেই এসে পড়বে পুরসভার উপরে, কর্তৃপক্ষ কি তা বুঝছেন না?

Advertisement

এ তো গেল অস্থায়ী কাঠামোগুলির কথা। শহরের বিভিন্ন স্থানে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে উৎসবের উপজাত আর্বজনা, তার দায় কি একান্তই সংশ্লিষ্ট পুরসভার নয়? সল্টলেকের বহু দুর্গাপূজা সংলগ্ন পার্ক, খেলার মাঠ ও খোলা জায়গায় ছড়িয়ে আছে প্লাস্টিক, স্টাইরোফোমের থালা-প্লেট, ছেঁড়া ব্যানার, ভাঙা প্লাইউডের টুকরো ও অন্য আবর্জনা, যা শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, অস্বাস্থ্যকরও— বিশেষত এই ডেঙ্গির প্রাবল্যের সময়ে; বৃষ্টি হলে ও জল জমলে তা হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গি মশার আঁতুড়ঘর। অনেক পূজা উদ্যোক্তা বিধাননগর পুরসভাকে অনুরোধ করেছেন মাঠ ও পার্কগুলি থেকে জঞ্জাল পরিষ্কার করার, অন্য দিকে পুরসভার কর্মীদের মত— পূজা কমিটিগুলিই কেন পরিষ্কারের দায়িত্ব নেবে না, তারা তো উৎসবের সময় মাঠ ও পার্কে নানা স্টল বাবদ অর্থ পেয়েছে! জঞ্জাল পরিষ্কারে পুরসভার পরিকাঠামোর সীমাবদ্ধতাও ভাবনার বিষয়। আবার জঞ্জাল পরিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে জঞ্জাল অপসারণের স্থান-কাল’সহ সমগ্র প্রক্রিয়াটিই: সল্টলেক ও নিউটাউনের জঞ্জাল এখন কলকাতা পুরসভার জঞ্জালের সঙ্গেই ফেলা হয় ধাপায়, কিন্তু দুপুরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে তা ফেলার সুযোগ থাকে না। বিধাননগর পুরসভা তাই জঞ্জালের গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়েছে, কিন্তু পরিকাঠামো সহজ সুলভ ও উন্নততর না হলে সমাধান অধরা।

প্রতি বছর দুর্গাপূজার পরেই এই চিত্র। কলকাতা ও অন্য পুরসভাগুলি কি উৎসবের আগে থেকেই এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে পারে না, যেমন নেয় কলকাতা পুলিশ— উৎসবের শহরে যান ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে? সল্টলেকের একটি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ বছর আবর্জনার দুর্গন্ধে বিরক্ত হয়েছিলেন। পূজা ফুরানোর পরে এখন শহর পরিক্রমা করলে দেখা যেত, কলকাতা এখনও মণ্ডপের অবশেষ, বাঁশের কাঠামো, জঞ্জাল ও আবর্জনায় ভরা। মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ও পুর-কর্তারা অবিলম্বে নজর দিন, তাঁরাও তো বহু বড় পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে। শুধু উৎসবের সৌন্দর্যের নয়, জঞ্জালের দৃষ্টিকটুতার ভাগও তাঁদের নিতে হবে বইকি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement