Save Trees Save Earth

শেষ সুযোগ

ইতিমধ্যেই লাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে, তাদের কথা না-শোনার অভিযোগে। উন্নয়নশীল দেশগুলি আরও অর্থসাহায্যের দাবি করেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঐকমত্যে পৌঁছেছে প্রায় একশো নব্বইটি দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এই নীল গ্রহের ৩০ শতাংশ স্থল এবং সমুদ্ররক্ষার চুক্তিকে ঘিরে। ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। চুক্তিটির পোশাকি নাম কুনমিং-মন্ট্রিয়ল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক। চুক্তির স্থান মন্ট্রিয়লে রাষ্ট্রপুঞ্জের সহায়তায় জীববৈচিত্র রক্ষার বিষয়ে আয়োজিত সম্মেলন সিওপি ১৫, যেখানে পৃথিবী রক্ষার পাশাপাশি ভয়ঙ্কর হারে জীববৈচিত্র হ্রাসের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের শপথ নেওয়া হয়েছে। বস্তুত, এই সঙ্কটে লাগাম পরানো না হলে ভবিষ্যতে বহু উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্পদের অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত হবে। সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে পৃথিবীর খাদ্য এবং জলের জোগান। আশঙ্কা, পৃথিবী সেই দিকেই এগোচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে জীববৈচিত্র যে বিপুল হারে হ্রাস পাচ্ছে, তা মানব ইতিহাসে কখনও দেখা যায়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রনেতাদের সহমত হওয়ার গুরুত্ব সহজে অনুমেয়।

Advertisement

যে সমস্ত দেশ এই চুক্তি মানবে, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে কুড়ির অধিক পরিবেশ বিষয়ক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শপথ নিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সম্মেলনের মতো এই সিওপি ১৫-এও উন্নত দেশগুলিকে বলা হয়েছে আপাতত বাৎসরিক ২০ বিলিয়ন ডলার করে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রদানের জন্য, যাতে তারা নিজেদের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে পারে। সমগ্র বিশ্বের জীববৈচিত্রের এক বৃহৎ অংশের ঠিকানা গ্লোবাল সাউথ-এর দেশগুলি। অথচ, বাস্ততন্ত্রের যথাযথ সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থ এই দেশগুলির হাতে নেই। সুতরাং, চুক্তির একটি সুস্পষ্ট এবং দীর্ঘকালীন লক্ষ্যমাত্রা আছে। প্রসঙ্গত, জীববৈচিত্র ধ্বংসের জন্য নানাবিধ কারণ দায়ী। কিন্তু প্রতিটিই মনুষ্যকৃত। জমির ক্ষেত্রে যেমন কৃষিকাজের প্রসার, ঠিক তেমনই সমুদ্রের ক্ষেত্রে অত্যধিক হারে মাছ শিকার। এ ছাড়াও চোরাশিকার, খনন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় তো আছেই। এই চুক্তি এ-হেন নানাবিধ কারণের মোকাবিলা করবে, এমনটাই আশা। যেমন বলা হয়েছে, কীটনাশক, এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। জীববৈচিত্র ধ্বংসের ক্ষেত্রে এই দুইয়ের ‘অবদান’ বহু আলোচিত।

কিন্তু, চুক্তির লক্ষ্যমাত্রাগুলি শুনতে যত আকর্ষক, বাস্তব প্রয়োগ ততই কঠিন। ইতিমধ্যেই লাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে, তাদের কথা না-শোনার অভিযোগে। উন্নয়নশীল দেশগুলি আরও অর্থসাহায্যের দাবি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’-এর প্রশ্নটিতে যেমন উন্নত বিশ্বের অনিচ্ছুক মনোভাব প্রকট হয়েছে, সেই পুনরাবৃত্তি এ ক্ষেত্রেও দেখা দিলে জীববৈচিত্র সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্যটি ব্যর্থ হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনগুলির ফলাফল দেখলেও সিওপি-১৫ নিয়ে বিশেষ আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই। কার্বন নিঃসরণ রোখার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত, কার্যকর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার পরিবর্তে উন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্ব যে ভাবে দায় চাপানোর বৃত্তে নিরন্তর আবর্তিত, এ ক্ষেত্রেও তেমনটা দেখা যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। মন্ট্রিয়লের সম্মেলনটিকে বলা হচ্ছে, প্রকৃতিকে সারিয়ে তোলার ‘শেষ সুযোগ’। সেই সুযোগ আদৌ কাজে আসবে কি না, আগামী সময়ই তা স্থির করবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement