Drone Attack

স্বার্থান্বেষী

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২১ ০৪:৫৫
Share:

অতি বিষম বস্তু ড্রোন। তাহা লইয়া প্রতিপক্ষকে সহজেই আক্রমণ করা যায়, কিন্তু তাহার হাত হইতে বাঁচিবার নিশ্চিত উপায় বাহির করা কঠিন। অন্তত ভারতের পক্ষে। যে স্বয়ংক্রিয় উড়ন্ত যানের ভরসায় গত বৎসর আর্মেনিয়া ও আজ়ারবাইজানের মধ্যে আস্ত একখানি যুদ্ধ হইয়া গেল, যাহার ব্যবহারে অতি দড় হইয়া উঠিয়াছে পশ্চিম এশিয়া হইতে দক্ষিণ আমেরিকার সন্ত্রাসবাদীরা, ভারত অদ্যাবধি সেই প্রযুক্তি আয়ত্তে আনিতে পারে নাই। দুই সপ্তাহ পূর্বে দেশের ইতিহাসে প্রথম ড্রোন হামলার পর নড়িয়া বসিয়াছে সেনাবাহিনী। বাহিনীর প্রধান এম এম নরবণে জানাইয়াছেন, ড্রোন হামলা ঠেকাইতে আক্রমণ ও আত্মরক্ষা উভয় প্রযুক্তিতেই সামর্থ্য বাড়াইবার চেষ্টা চলিতেছে। উল্লেখ্য, গত দুই মাসে দুই বার জম্মুর সীমান্তে অস্ত্রধারী ড্রোনের আবির্ভাব ঘটিয়াছে। প্রযুক্তির অভাবে সেগুলিকে গুলি করিয়া নামাইয়াছে বিএসএফ। কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্তে ইহা কোনও সমাধান নহে, অস্থায়ী পরিবর্ত মাত্র। অতএব, প্রযুক্তি উন্নয়নের চেষ্টাটুকুই এখন জরুরি।

Advertisement

যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ব্যয় বণ্টনের দীর্ঘকালীন অসাম্যে সিঁদুরে মেঘ দেখিবার কারণ আছে। প্রতিরক্ষা বাজেটের অর্ধেকের বেশি অংশ বাহিনীতে বরাদ্দ হইলেও সেনাছাউনির রক্ষণাবেক্ষণ এবং কর্মীদের বেতন ও পেনশনেই তাহার অধিকাংশ খরচ হইয়া যায়। আধুনিক অস্ত্রভান্ডার বা প্রযুক্তির জন্য যৎসামান্যই পড়িয়া থাকে। অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ সরকারি লাল ফিতার ফাঁসও। সুতরাং, বিগত বৎসর সেনাবাহিনীর ব্যয়ের নিরিখে বিশ্বে তিন নম্বর স্থানে পৌঁছাইলেও একাধিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান-সহ অনেকগুলি দেশ অপেক্ষা পিছাইয়া আছে ভারত। ডিআরডিও ড্রোনের ক্ষেত্রে ‘ডিটেক্ট-অ্যান্ড-ডেস্ট্রয়’ প্রযুক্তি, অর্থাৎ চিহ্নিত করিয়া ধ্বংস করিবার পদ্ধতি নির্মাণ করিলেও, তাহা গণহারে উৎপাদনের স্তর অবধি পৌঁছাইতে পারে নাই। প্রযুক্তির কৌশলগত ব্যবহার স্থির করা যায় নাই। সরকারও কতখানি অর্থব্যয়ে প্রস্তুত, তাহাও অজ্ঞাত।

কিমাশ্চর্যম্! যে সরকার তাহার প্রতি যে কোনও অপ্রিয় প্রশ্নকে সেনাবাহিনীর শৌর্যের পাল্টা যুক্তিতে বধ করিয়া থাকে, তাহাদের আমলেও অর্থাভাবে অস্ত্রসজ্জায় ঘাটতি পড়িতেছে? বিস্ময়ের অবকাশ নাই— বিষয়টি এখন সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে আধারিত। সেনা ও সরকারের পরিচিতিকে মিলাইয়া দিবার কৌশলে মানুষের মনে বাহিনীর প্রতি সম্ভ্রমটিকে সরকারের (বস্তুত শাসক দল) দিকে টানা হইতেছে। অর্থাৎ, সেনাবাহিনীকে সমাজে সর্বাপেক্ষা সম্মাননীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠা করিবার বিপণনযজ্ঞ মুখ্যত রাজনৈতিক, বাহিনীর উন্নয়নের সহিত সম্পর্করহিত। রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষাকে রাজনৈতিক প্রকল্প বানাইবার বিপদ কিন্তু বিরাট। প্রতিরক্ষা একটি রাজনীতি-ঊর্ধ্ব রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কোনটি অধিক প্রয়োজন, অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাহার বোধ তৈরি করা একটি অতি জরুরি রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। কোনও অজুহাতেই ইহাকে পিছনে ঠেলা যায় না। যে দেশে সরকারি খরচে সেন্ট্রাল ভিস্টার খোলনলিচা বদলাইবার রাজসূয় যজ্ঞ হইতে পারে, সেখানে ড্রোন-মোকাবিলার প্রযুক্তি কিনিবার টাকা পাওয়া যায় না— এই যুক্তি যাঁহারা দেন, তাঁহাদের কর্তব্যজ্ঞানের বহর লইয়া সংশয় জন্মে। এমনকি তাঁহাদের জাতীয়তাবাদ লইয়াও প্রশ্ন উঠিতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement