Jute Bags

বিকল্পের বিপদ

প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়িলে পশ্চিমবঙ্গের চটশিল্প, এবং তাহার সহিত যুক্ত প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ বিপন্ন হইবেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৫:৪৫
Share:

ফাইল চিত্র।

যাহা আশঙ্কা ছিল, তাহাই ঘটিল। চটের বস্তার ব্যবহার কমাইতে চাহিয়াছে কেন্দ্র। আগামী রবি মরসুমে গম প্যাকেটজাত করিবার জন্য পঁয়ত্রিশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করিবার প্রস্তাব দিয়া কেন্দ্র চিঠি লিখিয়াছে রাজ্যকে। খাদ্যশস্যের জন্য চটের বস্তার ব্যবহার আইনত বাধ্যতামূলক, বিশেষ প্রয়োজনে ত্রিশ শতাংশ অবধি প্লাস্টিকের ব্যবহার অনুমোদনের সুযোগ দিয়াছে আইন। কিন্তু সংবাদে প্রকাশ, কেন্দ্র রবি মরসুমে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী। রাজ্য সরকার যথাসম্ভব চটের ব্যবহারের অনুরোধ করিয়াছে, কিন্তু তাহার সম্ভাবনা কতটুকু, সন্দেহ আছে। কেন্দ্র আপন সিদ্ধান্তের দায় পশ্চিমবঙ্গের উপরেই চাপাইয়াছে। ভারতে পশ্চিমবঙ্গই প্রধান চট উৎপাদনকারী রাজ্য, অধিকাংশ চটের বস্তার সরবরাহ করে রাজ্যের চটকলগুলি। কিন্তু কাজে তাহারা বার বার শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হইতেছে। বর্তমানে যে খরিফ মরসুম চলিতেছে, তাহার জন্য ২৪ লক্ষ বেল চটের বস্তার প্রয়োজন ছিল। পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলি ১৫ লক্ষ বেলের অধিক দিতে অক্ষম বলিয়া জানাইয়াছে। কেন্দ্রের প্রশ্ন, পরবর্তী মরসুমে যথেষ্ট বস্তা মিলিবারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? গত বৎসরও খরিফ মরসুমের শেষে জোগানে ঘাটতি হইয়াছিল, এবং রবি মরসুমের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তার অর্ধেকও দিবার নিশ্চয়তা দিতে পারেন নাই চটকল মালিকেরা। ধান-গম উঠিবার পর সরকারি ক্রয়ের জন্য বস্তার প্রয়োজন। বস্তা পাইতে বিলম্ব হইলে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হন। অতীতে নানা রাজ্যে তাঁহারা বিক্ষোভও দেখাইয়াছেন। কেন্দ্রের প্রশ্ন, এই অবস্থায় আগাম বিকল্প খুঁজিলে আশ্চর্য কী?

Advertisement

প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়িলে পশ্চিমবঙ্গের চটশিল্প, এবং তাহার সহিত যুক্ত প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ বিপন্ন হইবেন। কেন্দ্র একটি মাত্র মরসুমে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ কম চটের বস্তা ক্রয় করিবার অর্থ, রাজ্যের চটশিল্পের প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ক্ষতি। চটশিল্প বহু দিনই রুগ্ণ, তাহা কী করিয়া এই প্রবল ক্ষতির ভার সহিবে? এই সঙ্কট অপ্রত্যাশিত নহে, পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলি দীর্ঘ দিন ধরিয়া ধুঁকিতেছে। তাহার প্রযুক্তি ও কৃৎকৌশল আধুনিক শিল্পের উপযোগী নহে, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অভাবে দক্ষ শ্রমিকরা রাজ্য ছাড়িতেছেন। চটকল মালিকদের বিরুদ্ধে কাঁচা পাটের মজুতদারির অভিযোগও উঠিয়াছে। সম্প্রতি জুট কমিশনার নির্দেশ জারি করিয়া চটকলগুলির পাট মজুত করিবার সীমা ঘোষণা করিয়াছিলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলিরও অভিযোগ, পাটের অভাব ‘কৃত্রিম’। এই বৎসর পর পর বন্ধ হইয়াছে অনেকগুলি চটকল, অর্ধ লক্ষেরও অধিক মানুষ কাজ হারাইয়াছেন।

যে শিল্পের উৎপাদিত বস্তুর বাজার নিশ্চিত, চাহিদা প্রচুর, পণ্যের বিক্রয় আইন দ্বারা সুরক্ষিত, তাহার উৎপাদনে রাজ্য বার বার ব্যর্থ হইয়াছে, ইহা বড়ই আক্ষেপের বিষয়। কী করিয়া চটশিল্পের পুনরুজ্জীবন সম্ভব, তাহা লইয়া বহু আলোচনা হইয়াছে, কিন্তু কাজ কিছুই হয় নাই। চটের বিকল্প হিসাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার দুশ্চিন্তা জাগাইতে বাধ্য। চিন্তার প্রধান কারণ অবশ্যই পরিবেশ। ভারতে যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়, তাহার কিয়দংশের জন্যও প্লাস্টিক ব্যবহৃত হইলে কত যুগ ধরিয়া জীবজগৎকে বিপন্ন করিবে, কে বলিতে পারে? পাট চাষ ও চটশিল্পকে লাভজনক করিতে সক্রিয় হইতে হইবে রাজ্যকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement