Adhir Ranjan Chowdhury

ভাতঘুমের পর

সংসদে কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী সিএজি রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি পেশ করেছেন। বেঙ্গালুরুর মহামঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য দলের নায়ক-নায়িকারা সেই উদ্যোগটুকুও করেননি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৩৩
Share:

কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

মাঝখানে স্বাধীনতা দিবসের ছুটি পড়ে গিয়েছিল। ছুটির দুপুরে ভাতঘুম দিয়ে পরের দিন কাজে যোগ দিয়েছেন দেশের বিরোধী রাজনীতিকরা। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কংগ্রেসের মুখপাত্র তীর্যক সুরে বলেছেন, ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যখন সিএজি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, তখন সব টেলিভিশন চ্যানেল ঝাঁপিয়ে পড়ত; আর এখন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশিত হওয়ার পর সেই সব চ্যানেলের সম্মিলিত নীরবতা দেখে মনে হয়, চ্যানেলওয়ালারা বুঝি ধরেই নিয়েছেন যে, নরেন্দ্র মোদী কোনও দুর্নীতি করতেই পারেন না। অভিমান দেখে মায়া হওয়া স্বাভাবিক— আহা, চ্যানেলওয়ালাই যদি সাহায্য না করে, বিরোধী রাজনীতি পায়ের তলায় মাটি পায় কী করে? টেলিভিশনের চণ্ডীমণ্ডপে কথা উঠবে, সেই ভিডিয়ো ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় পৌঁছবে, তবে না বিরোধী নেতারা সেই ক্লিপ রিটুইট করে নিজেদের প্রতিবাদ জানাবেন! নিজেদের উদ্যোগে কোনও বিষয়কে রাজনৈতিক বিরোধিতার প্রশ্নে রূপান্তরিত করা, সে বড় খাটুনির কাজ। অবশ্য, কংগ্রেসের মুখপাত্র তবু সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন, তার আগে সংসদে কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী সিএজি রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি পেশ করেছেন। বেঙ্গালুরুর মহামঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য দলের নায়ক-নায়িকারা সেই উদ্যোগটুকুও করেননি। আটটি পৃথক দুর্নীতির খোঁজ পাওয়া গেল, টাকার অঙ্কে যার কোনওটিই সামান্য নয়, অথচ বিরোধী পরিসরে কার্যত কোনও নড়াচড়া নেই। অনুমান করা চলে, দশ বছর আগের কথা তাঁদের মনে পড়েনি। টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনের ক্ষেত্রে কতখানি ক্ষতি হতে পারে, সেই কাল্পনিক সংখ্যাটি নিয়ে সংসদ অচল করে দিয়েছিল বিজেপি। শুধু প্রচারের দাপটে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে বিপুল রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করেছিল। যে লোকপালের প্রসঙ্গটি বিজেপির শাসনে নিরন্তর উপেক্ষিত হতে হতে এখন বিস্মৃতির অতলে তলিয়েছে, অণ্ণা হজারের আন্দোলনের সময় সেই প্রশ্নটিকেই বিজেপি ইউপিএ-র বিরুদ্ধে প্রবল রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছিল। দৃশ্যত, বিজেপির পাঠ্যপুস্তকের এই পাতাগুলি বর্তমান বিরোধী রাজনীতির নেতারা উল্টে দেখেননি।

Advertisement

বর্তমান আমলে দুর্নীতি সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করার বিষয়ে সিএজি-র দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে অধীর চৌধুরী যে অভিযোগ তুলেছেন, তা যথাযথ। যে ক’টি রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলিতে যে দুর্নীতির কাল্পনিক পরিসংখ্যান নেই, সেই অঙ্কগুলি বাস্তবের, এ কথাটিও কংগ্রেস মুখপাত্র ঠিক বলছেন। ভারতমালা প্রকল্পের সড়ক করিডর বা দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতির যে অঙ্ক প্রকাশ্যে এসেছে, তাও সাংঘাতিক। শুধু এটুকুতেই থেমে যাওয়ারও কোনও কারণ বিরোধী নেতাদের নেই। তাঁরা প্রশ্ন করতেই পারেন, কোভিড-এর সময় অর্থমন্ত্রী চার দিন ধরে যে ত্রাণপ্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলি চরিত্রে এমন ছিল কেন যে, তার অধিকাংশ সুফল শুধুমাত্র একটি বা দু’টি শিল্পগোষ্ঠীর কাছেই পৌঁছবে? কেন দেশের বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ হলে কার্যত একটিই গোষ্ঠী সব বরাত পায়? কেন এক জন শিল্পপতিই কার্যত দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে নির্বিকল্প মুখ হয়ে উঠলেন? অথবা, দেশের মোবাইল টেলিফোন ক্ষেত্রটি কেন ক্রমশ দেড়টি সংস্থার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে? একটি নির্দিষ্ট শিল্পগোষ্ঠী ল্যাপটপ উৎপাদন করার ঘোষণা করতেই কেন ল্যাপটপ আমদানির ক্ষেত্রে প্রবল বাধানিষেধ তৈরির পথে হাঁটতে চাইল সরকার? এমন অজস্র প্রশ্ন রয়েছে, দেশবাসীর কাছে যার উত্তর নেই। বিরোধী নেতারা মাঝেমধ্যে প্রশ্নগুলি তোলেনও বটে, কিন্তু ভাতঘুমের আকর্ষণ বড়ই প্রবল। এই প্রশ্নগুলিকে তাঁরা সাধারণ মানুষের বোধগম্য রাজনৈতিক প্রশ্নে রূপান্তরিত করতে পারবেন কি না, মাঠের রাজনীতিতে প্রশ্নগুলিকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন কি না, তার উপরই নির্ভর করছে তাঁদের সাফল্যের সম্ভাবনা। অন্য কাউকে দুষে সেই দায় এড়ানো যাবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement