Bharat Ratna

সম্মান-কণ্টক

অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রতিজ্ঞাপূরণের বর্ষে রাম জন্মভূমি আন্দোলন ও রথযাত্রার প্রাণপুরুষ লালকৃষ্ণ আডবাণীকে ভারতরত্ন দিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের তুষ্ট করা হল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৪
Share:

ভারতরত্ন। —ছবি : সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রাপ্তি গৌরবের। গৌরব প্রাপকের, বৃহদর্থে দেশের, দশেরও। কিন্তু সেই গৌরব তত ক্ষণই অমলিন, যত ক্ষণ না তার গায়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি এবং নির্বাচনী স্বার্থপূরণের আস্তরণ পড়ে। কারণ, এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে পুরস্কারপ্রাপকের কর্ম, নিজ ক্ষেত্রে কৃতিত্ব প্রদর্শন, দেশ ও দশের প্রতি কর্তব্য পালনের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তাঁকে কেন্দ্র করে পুরস্কারদাতা শাসক দলের আগামী দিনের হিসাবনিকাশ। সেই বিপুল এবং জটিল দলগত অঙ্ক মেলানোর সামনে ব্যক্তিমানুষের কৃতিত্বের পাল্লাটি কিঞ্চিৎ হালকা ঠেকে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই চলতি বছরে বিজেপি সরকারের ভারতরত্ন প্রদানে আগ্রহ এবং পুরস্কারপ্রাপকের ক্রমবর্ধমান তালিকাটি দেখা প্রয়োজন। এ দেশে পদ্ম-সম্মান দীর্ঘ দিন যাবৎ রাজনীতির প্রকরণ হয়ে উঠেছে। তবু মোদী শাসনের রাজনৈতিক আগ্রাসন তাকে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। এ বছর দিনকয়েকের ব্যবধানে মোট পাঁচ জনকে ভারতরত্ন খেতাব দেওয়ার মধ্যে রাজনীতির সংযোগসূত্র স্পষ্ট। ক্ষমতার লোভ এবং সর্বগ্রাসী মানসিকতা ঢাকতে বিজেপি সরকারের আর কোনও রকম লজ্জা, দ্বিধার আবরণের প্রয়োজন নেই।

Advertisement

লক্ষ্যপূরণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যও ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রতিজ্ঞাপূরণের বর্ষে রাম জন্মভূমি আন্দোলন ও রথযাত্রার প্রাণপুরুষ লালকৃষ্ণ আডবাণীকে ভারতরত্ন দিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের তুষ্ট করা হল। বিহারের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন প্রদানের কথা ঘোষণার মাধ্যমে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় ভাঙন ধরানোর কৌশলও যথেষ্ট সফল। বিহারে অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার জনক কর্পূরী ঠাকুরকে সম্মান প্রদানের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই বিজেপি শিবিরের দিকে পা বাড়িয়েছেন। একই পথে হেঁটে চৌধরি চরণ সিংহকে ভারতরত্ন প্রদানের কথা ঘোষণা তাঁর নাতি জয়ন্ত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দলের ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে বেরিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানো প্রায় নিশ্চিত করে দিয়েছে। অন্য দিকে, কৃষিক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন প্রদান কৃষক অসন্তোষের সামনে মোদীর কৃষকদরদি ভাবমূর্তিটি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তুরুপের তাস, ঠিক যেমন নির্বাচনের পূর্বে তেলঙ্গানার মন জয়ে পি ভি নরসিংহ রাও।

রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির এ-হেন নিপুণ মিশ্রণ কংগ্রেসের কালেও যথেষ্ট দেখা গিয়েছে। প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে পদ্ম-পুরস্কারের নামে হরির লুট চলত। প্রকৃত কৃতী নামের পাশে অনায়াসে বহু বিচিত্র ক্ষেত্রের কুশীলবরাও জায়গা করে নিতেন শুধুমাত্র শাসক দলের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে। সম্মান প্রদর্শনের সেই রাজনৈতিক হাতিয়ারটিকেই আরও দক্ষ ভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণের কাজে ব্যবহার করেছে নরেন্দ্র মোদীর ‘অমৃত ভারত’। অবশ্য, লক্ষ্যপূরণের মাত্রাটি এতেও শেষ কি না, বলা কঠিন। সমগ্র শিবসেনা, অকালি দল, মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টিকে ফের বিজেপিমুখী করা এখনও বাকি। অতএব পুরস্কারপ্রাপকের তালিকা আরও খানিক লম্বা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। শুধুমাত্র একটাই প্রশ্ন: এ-হেন রাজনীতি-কণ্টকিত পুরস্কার যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরা ও তাঁদের গুণগ্রাহীরা প্রকৃত সম্মানিত বোধ করছেন তো?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement