Popularity of Cricket

সব খেলার সেরা

বিশুদ্ধতাবাদীরা টি২০ সম্বন্ধে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলতে পারেন, ‘দিস ইজ় নট ক্রিকেট’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৪
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এত দিনে কি ক্রিকেটের সঙ্গে ‘বিশ্ব’কাপ কথাটি অর্থপূর্ণ ভাবে জুড়ল? সদ্যসমাপ্ত টি২০ বিশ্বকাপে প্রতিযোগী দেশের সংখ্যা ছিল ২০। নেহাত ‘দুধ-ভাত’ দল নয়— পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র; অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে, পরে সেমিফাইনালে পৌঁছল আফগানিস্তান। ২০০৭ সালে যখন টি২০ বিশ্বকাপের সূচনা হয়, তখন প্রতিযোগিতায় দলের সংখ্যা ছিল ১২। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যাবৃদ্ধির নিরিখে একে ‘ক্রিকেট বিস্ফোরণ’ বলা চলে, বিশেষত যদি এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম চারটি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রাখা হয়। ১৯৭৫ সালে সেই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার সময় অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ছিল আট— পরবর্তী তিনটি বিশ্বকাপে সেই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে। দীর্ঘ নির্বাসনপর্ব শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরত আসার পরে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা দাঁড়ায় নয়। অবশ্য, টেস্ট ক্রিকেটে দলের সংখ্যা বেড়েছিল আরও শ্লথ হারে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান টেস্ট খেলার ছাড়পত্র পায়। তার পর, ১৯৯২ সাল অবধি দীর্ঘ চার দশকে শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কা ‘টেস্ট প্লেয়িং নেশন’-এর তকমা পেয়েছিল। গত তিন দশকে আরও চারটি দেশ— জিম্বাবোয়ে, বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান— টেস্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। স্পষ্টতই, কোনও একটি বিচিত্র কারণে ক্রিকেট নামক খেলাটিকে অল্প কিছু দেশের মধ্যে সীমিত রাখার চেষ্টা হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। তাতে খেলাটির জনপ্রিয়তা বাড়েনি— সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশগুলির মধ্যে একমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশে খেলাটি সম্ভবত আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় হয়েছে; অন্য ক্রিকেট-খেলিয়ে দেশগুলিতে তরুণতর প্রজন্মের কাছে এই খেলাটির আবেদন ক্রমহ্রাসমান। সে কারণেই ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপের গুরুত্ব অপরিসীম।

Advertisement

বিশুদ্ধতাবাদীরা টি২০ সম্বন্ধে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলতে পারেন, ‘দিস ইজ় নট ক্রিকেট’। সি এল আর জেমস-এর কথাটি তাঁদের শুনিয়ে দেওয়া প্রয়োজন— তারা ক্রিকেটের কী বা জানে, যারা শুধুই ক্রিকেট জানে? টেস্ট ক্রিকেট তার যাবতীয় রোম্যান্টিক অতীত-গৌরব নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে। খেলোয়াড়দের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা কতখানি, সে প্রশ্ন ভিন্ন— কিন্তু পাঁচ দিনের ঢিমে তেতালায় চলা কোনও খেলা একুশ শতকের বাজারের কষ্টিপাথরে উত্তীর্ণ হতে পারে না। বস্তুত, গোটা দিনব্যাপী এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলাও বড়ই দীর্ঘ— বাস্কেটবল ম্যাচ চলে ৪৮ মিনিট, ফুটবল দেড় ঘণ্টা, টেনিস ম্যাচও কম-বেশি তিন ঘণ্টায় শেষ হয়। টি২০ খেলা ঠিক এই মাপে ছেঁটে নিয়েছে ক্রিকেটকে, যাতে কোনও দর্শক সারা দিন কাজ শেষ করে সন্ধেবেলা তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা খেলা দেখতে পারেন। বিশুদ্ধতাবাদীরা মর্মাহত হতে পারেন, তবে বাজারের পরীক্ষায় যদি ক্রিকেটকে টিকতে হয়, তবে এটাই তার চেহারা। ভবিষ্যতে হয়তো দশ-দশ ওভারের খেলা জনপ্রিয় হবে। বাজার কেন জরুরি, এই প্রশ্নটি কেউ ভারতীয় খো খো খেলোয়াড়দের করে দেখতে পারেন।

বাজারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষমতাকেন্দ্রটিকে নিয়ে এসেছে ভারতে। তাতে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো সাবেক ক্রিকেট-অভিজাত দেশগুলির আত্মাভিমান আহত হয়েছে; সমাজমাধ্যমকে সাক্ষী মানলে বলতে হয় যে, অন্য দু’একটি দেশের সমর্থকদেরও মর্মপীড়ার কারণ হয়েছে ভারতের এই নবার্জিত গুরুত্ব। কিন্তু, ক্রিকেটবিশ্বের শিরা-ধমনীতে রক্তসঞ্চালন ঘটে ভারত নামক হৃৎপিণ্ডটির দৌলতে। তাকে প্রাপ্য গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই বলেই আমেরিকায় ভারতের খেলা রাখা হয়েছিল সকাল আটটায়— যাতে ভারতের দর্শকরা তাঁদের অভ্যস্ত সময়েই খেলাটি দেখতে পান। তবে, ভারতের ক্রিকেট-বাজার শুধু ভারতেরই উপকার করেছে, এ কথা বললে অন্যায় হবে— আইপিএল নামক বাৎসরিক মহাপার্বণটি ক্রিকেটবিশ্বের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। যেমন, আফগানিস্তান দলের সেরা খেলোয়াড়রা পুষ্ট হয়েছেন আইপিএল-এর জলহাওয়ায়। আইপিএল আসলে ক্রিকেটের একটি বিকল্প বিশ্ববাজার খুলে দিয়েছে, যেখানে জাতীয় দলের সীমিত সুযোগের বাইরেও গোটা দুনিয়ার সামনে নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ইংল্যান্ডের ইপিএল বা স্পেনের লা লিগা ফুটবলের ক্ষেত্রে এই কাজটিই করে। ক্রিকেটকে যদি একটি বৈশ্বিক খেলায় পরিণত করতে হয়— যদি বিশ্ব বলতে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিকে বোঝার কু-অভ্যাসটি ত্যাগ করতে হয়— তবে বাজারকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দিতেই হবে। ২০২৪-এর টি২০ বিশ্বকাপে তার সূচনা হল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement