ABP Centenary

শতাব্দীর অঙ্গীকার

শতবর্ষ পূর্ণ করার যাত্রা আত্মবীক্ষণের বড় সুযোগ। সময় বিনম্র চিত্তে পূর্বসূরিদের স্মরণ করা এবং শিক্ষা নেওয়ার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২২ ০৫:১৮
Share:

মূল্যবোধ, আদর্শকে পাথেয় করে মাথা উঁচু করে চলা এবং আত্মানুসন্ধান প্রতি দিনের। তবে শতবর্ষ পূর্ণ করার যাত্রা আত্মবীক্ষণের বড় সুযোগ। সময় বিনম্র চিত্তে পূর্বসূরিদের স্মরণ করা এবং শিক্ষা নেওয়ার। আনন্দবাজার পত্রিকার শতবর্ষের এই পর্বে আমরা প্রণাম জানাই আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক শ্রী প্রফুল্লকুমার সরকার এবং প্রতিষ্ঠাতা শ্রী সুরেশচন্দ্র মজুমদারকে। প্রণাম জানাই শ্রী অশোককুমার সরকারকে। যিনি ভাবতে শিখিয়েছিলেন, পাঠকরাই আমাদের প্রকৃত প্রভু। প্রণাম আমাদের সকল পূর্বতন সম্পাদক এবং পূর্বতন সকল কার্যকর্তাকে। বছরের পর বছর এই সংবাদপত্রকে যাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন, সেই কিংবদন্তি সাংবাদিক এবং সাহিত্যিকদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করার পাশাপাশি আমরা মনে করতে চাই আমাদের অনামা, পূর্বসূরি সাংবাদিকদের, শতবর্ষের ইতিহাস পড়তে গিয়ে যাঁদের প্রতিবেদন আমাদের বিস্মিত করছে প্রকাশভঙ্গি এবং সাহসী লেখনীতে। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা আমাদের সকল পাঠককে, যাঁরা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন সব সময়। ভালবেসে এবং ভুল ধরিয়ে দিয়ে, তিরস্কার এবং মার্জনা করে।

Advertisement

শতবর্ষে এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, আনন্দবাজার পত্রিকা কি কেবলই অতীতচারী, ঐতিহ্যসর্বস্ব? সবিনয়ে জানাই, আন্তর্জালের যুগে, মুঠোফোনে দ্রুত গতিতে তথ্য পাওয়ার যুগে তথ্যনিষ্ঠ থেকে সংবাদের গভীরে যাওয়া এবং নিছক তথ্য ছাড়িয়ে, বিশ্লেষণ ও গভীর প্রতিবেদন পাঠককে পড়ানো এবং প্রশ্ন করার প্রতিস্পর্ধায় আমরা বিশ্বাসী। আমরা অন্তর্দৃষ্টি এবং তৃতীয় নয়নের সাধনায় ব্রতী। মুঠোফোনে পড়ব, টেলিভিশনের পর্দায় দেখব, তবে পর দিন, হ্যাঁ, পর দিন সংবাদপত্রে সেই খবর এবং অবশ্যই তার বেশি কিছু পাঠককে পড়াব, পড়াবই— এই সাধনায় আমরা নিজেদের নিয়োজিত রেখেছি। প্রকাশিত অক্ষরে কী লেখা হল? আনন্দবাজার কী বলল? পাঠকের এই আকাঙ্ক্ষাকে আমরা সম্মান করি। ভালবাসি অক্ষর, শব্দ, ভাষাকে, আস্থা রাখি লেখনীর শক্তিতে। সেই লেখনী— যা প্রশ্ন করে, যা রুখে দাঁড়ায়, যা গভীরে যায়, যা ভালবাসতে শেখায়, উত্তরণ ঘটায়। সন্দেহ নেই, যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে তা বন্ধুর হয়, পথের বাঁকে দেখা দেয় অপ্রত্যাশিত এবং প্রত্যাশিত বাধা। তা অতিক্রম করার পথও নিজেদেরই নির্মাণ করতে হয়, সত্যকে সঙ্গী করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীর্বাণী পাঠিয়েছিলেন, “স্বজাতির সিংহাসন উচ্চ করি গড়ো, সেই সঙ্গে মনে রেখো সত্য আরো বড়ো। স্বদেশেরে চাও যদি তারো ঊর্দ্ধে ওঠো, কোরো না দেশের কাছে মানুষেরে ছোটো।” কোনও ব্যক্তিবিশেষ বা রাজনৈতিক দল নয়, আমরা গণতন্ত্রের মৌলিক সূত্রটিতে বিশ্বাসী। আমরা সব ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি আমূল দায়বদ্ধ। আমরা সম্মান করি বহুত্বকে। যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি, মুক্ত মানসিকতার উদার নীতিবোধকে যথাসাধ্য শক্তিশালী করে তোলা, বিজ্ঞানচেতনার ক্রমাগত প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য। তেমনই আমাদের সাধনা বাংলা ভাষার উত্তরাধিকারকে সমৃদ্ধ করা। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে আমরা অতীতচারী। কারণ, আমাদের পূর্বসূরিরা জন্মলগ্ন থেকে সেই সুর বেঁধে দিয়েছেন। এবং তা চিরন্তন।

যেমন চিরন্তন এই পত্রিকার সঙ্গে পাঠকদের সম্পর্ক। আমাদের উপর পাঠকদের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখব, এবং প্রত্যেকটি কাজে পাঠকের সেই আস্থাকে আমরা সম্মান করে চলব, এ আমাদের অঙ্গীকার হয়ে থাকুক। আমরা যেন প্রতি মুহূর্তে স্মরণে রাখি যে, শ্রদ্ধেয় শ্রীঅশোককুমার সরকার আনন্দবাজার পত্রিকার ৫০তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “পাঠকেরা সন্তুষ্ট, এই সত্যটি সম্পাদকীয় কর্তব্যের শ্রেষ্ঠ বিচার ও পুরস্কার।” তিনি এ-ও বলেছিলেন, “সাধ থাকিলেই সাধ্য থাকে না, বাধা আসিয়াসাধ্যতা ও সফলতাকে সীমিত করিয়া দেয়। এই সাধারণ সত্যটি পত্রিকার জীবনেও একটি সত্য। কিন্তু বিবেকের কাছে আমাদের কৈফিয়ত এখনও করুণ হইবার দুর্ভাগ্য লাভ করে নাই। কারণ, আমরা যাহা সত্য বলিয়া বুঝিয়াছি, তাহাই আমাদের আত্মপ্রত্যয়ের দীপ হইয়া জ্বলিয়াছে, এবং সেই সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আমাদের সকল প্রয়াস উৎসর্গ করিয়াছি। অভিজ্ঞতার দ্বারা এই বিস্ময়কর সত্যটিও উপলব্ধি করিয়াছি যে এ ক্ষেত্রে সফলতা ও তথাকথিত বিফলতা উভয়ই পত্রিকার শক্তি বাড়াইয়াছে।” সত্যের, শব্দের, শ্রেষ্ঠত্বের সাধনায় আমরা যেন পথভ্রষ্ট না হই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement