বাঘাযতীনে হেলে পড়া বাড়ি ভাঙার কাজ শেষ হলেই শুরু হবে বাসিন্দাদের পুর্নবাসনের কাজ। ফাইল ছবি।
বাঘাযতীনে হেলে পড়া বহুতল ও তার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের পুনর্বাসন নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়ার পরেই কাজ শুরু হয়েছিল। পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মেয়রের নির্দেশ মেনে ভেঙে পড়া বহুতলটি সঠিক ভাবে ভাঙার কাজ সম্পন্ন হলে, ওই জমি সাফ করে সেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে। বাসিন্দাদের পুনর্বাসন এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কলকাতা পুরসভা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে।
বাঘাযতীনের ঘটনার পর পুরসভার ওপর বেজায় চাপ তৈরি হয়েছে। কারণ মেয়র পারিষদ মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ার্ডে এমন ঘটনা ঘটায় প্রকাশ্যে না বললেও, পুরসভার অভ্যন্তরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারণ গত বছর মার্চ মাসে মেয়রের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় যে ভাবে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছিল পুরসভা, তেমনটা না হলেও, পুর প্রশাসনের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে এ বারেও। তাই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর শীঘ্রই একটি নতুন নির্দেশ জারি করতে চলেছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও নির্মাণ কাজ বা পরিকাঠামোগত পরিবর্তন করতে হলে সংশ্লিষ্ট পুরসভার অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। ফলে নির্দিষ্ট শর্ত ও বিধিনিষেধ মেনে কাজ করতে হবে। এটি ছোট বড় যে কোনও ধরনের শহরের ভবিষ্যৎ নির্মাণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে বলে মত পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের একাংশের।
ইতিমধ্যে বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে কারণ তাঁরা জমির যৌথ মালিক, তবুও পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসন এই ঘটনায় মানবিক ভাবে বিবেচনা করবে বলেই জানা যাচ্ছে। আপাতত জায়গাটি সাফ করে সেখানে তাঁদের সাময়িক থাকার ব্যবস্থা করা হবে। ভবিষ্যতে আইনি বিষয় খতিয়ে দেখে নতুনভাবে বিল্ডিং তৈরির পরিকল্পনা করা হবে।
বাঘাযতীনের দুর্ঘটনার পর, কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগকে মেয়র একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন। যে কোনও পুরানো বা বিপজ্জনক বিল্ডিং চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, হেলে পড়া বা বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা বহুতলগুলির উপর কড়া নজরদারি চালানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন মেয়র। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বাঘাযতীন নয়, শহরের অন্যান্য এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বহুতলগুলির ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরসভা চাইছে, বাসিন্দারা যেন নিজেদের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হন এবং নির্মাণ বা সংস্কার কাজে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বাঘাযতীনের দুর্ঘটনা কলকাতার নির্মাণ ব্যবস্থাপনা নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই ঘটনার পর, পুনর্বাসনের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
অন্য দিকে বাঘাযতীনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতার সমস্ত বহুতলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘বিল্ডিং অডিট’ করার দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার তিনি হেলে পড়া বহুতল পরিদর্শনের পর শুভেন্দু বলেন, ‘‘বিল্ডিং অডিটের মাধ্যমে শহরের বহুতলের কাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।’’ একইসঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও তিনি ঘোষণা করেছেন।