সেবি) কোনও গাফিলতি করেছে, এমন কোনও প্রমাণ পায়নি সুপ্রিম কোর্ট। প্রতীকী চিত্র।
দিনকয়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছিল, আদানি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভারতের শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিয়োরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সংক্ষেপে এসইবিআই বা সেবি) কোনও গাফিলতি করেছে, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবস্থানটি তাৎপর্যপূর্ণ— আদানি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সেবি-র আদৌ কোনও গাফিলতি নেই, তেমন কথা বিশেষজ্ঞ দল বলেনি; তেমন গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এই মাত্র। সম্প্রতি কংগ্রেস অভিযোগ তুলল, সেবি আসলে খেলার নিয়মটিই পাল্টে দিয়েছে— ইংরেজিতে যাকে বলা হয়, গোলপোস্ট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া। ২০১৪ সালে আইন তৈরি হয়েছিল যে, কোনও সংস্থায় যদি ফরেন পোর্টফোলিয়ো ইনভেস্টমেন্ট আসে, তা হলে সেই বিনিয়োগ ‘অস্বচ্ছ’ হওয়া চলবে না— অর্থাৎ, যে টাকা ভারতীয় বাজারে কোনও বেসরকারি সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করা হচ্ছে, সেটির প্রকৃত উৎস কী, সেই তথ্য সেবি-র কাছে জমা করার পরই লগ্নি করা যাবে। ২০১৮ সালে কোনও ‘অজ্ঞাত’ কারণে শর্তটি প্রত্যাহার করে নেয় সেবি। অতঃপর, লগ্নি করার জন্য পুঁজির উৎস বিষয়ে তথ্য প্রদানের কোনও বাধ্যবাধকতা থাকল না। উল্লেখ্য যে, এ নিয়ে হইচই আরম্ভ হওয়ায় সেবি নাকি ফের সব বিদেশি পোর্টফোলিয়ো লগ্নির প্রকৃত উৎস জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তাতে অবশ্য অতীত মোছে না। পুঁজির উৎস জানতে না চাওয়ার সিদ্ধান্ত আদানি গোষ্ঠী বা অন্য কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে অন্যায় সুবিধা করে দেওয়ার জন্য, এমন কথা নিতান্তই জল্পনা; কিন্তু আদানি গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন সংস্থায় যে এই সময় থেকেই প্রভূত ‘অস্বচ্ছ’ বিদেশি লগ্নি আসতে থাকে, তা তথ্য। দুইয়ে দুইয়ে চার হবে না বাইশ, সেই বিবেচনা যার যার, আপাতত তথ্য থেকে নজর না সরলেই চলবে।
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী তেমনই কিছু তথ্য পেশ করেছে। যেমন, ছ’টি ট্যাক্স হাভেন (অর্থাৎ, এমন কোনও দেশ বা প্রশাসনিক এলাকা, যেখানে বিপুল করছাড় পাওয়া যায়, এবং টাকার উৎস প্রকাশ না করলেও সমস্যা নেই— ফলে, সেই অঞ্চলগুলি অস্বচ্ছ পুঁজির বিশ্ব-মানচিত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে) থেকে ১৩টি সংস্থা আদানি গোষ্ঠীভুক্ত সংস্থায় অন্তত ৪২ বার লগ্নি করেছে। তথ্যটি সেবি-ই জানিয়েছে। কিন্তু, সেই পুঁজি কার, সেবি-র কাছে সে তথ্য নেই— কারণ, ২০১৮ সাল থেকে সেই তথ্য রাখার বালাইটি সেবি-ই দূর করে দিয়েছে। অতএব, বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধানটির সামনে অলঙ্ঘ্য দেওয়াল। আদানি গোষ্ঠীর সংস্থা আদানি গ্রিন এনার্জি-তে এমন অস্বচ্ছ বিনিয়োগের পরিমাণ মোট লগ্নির ৩০ শতাংশের বেশি। নিতান্তই সমাপতন, না কি এফপিআই রেগুলেশন অ্যাক্ট-এর ৩২(১)(এফ) ধারাটি প্রত্যাহারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীতে এমন অস্বচ্ছ সংস্থার বিনিয়োগের প্রাবল্যের মধ্যে গভীর যোগসূত্র রয়েছে, ভারতবাসী সে কথা ভাবতেই পারেন। আপাতদৃষ্টিতে বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছিল যে, সেই রিপোর্টটি সেবি এবং আদানি গোষ্ঠীকে বেকসুর খালাস দিল, সেটিই খুলে দিয়েছে প্যান্ডোরার বাক্স।
কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রশ্ন করেছেন, সেবি-র উপর এমন কী চাপ ছিল, যাতে সংস্থাটি এ পথে হাঁটতে বাধ্য হল? সত্যিই সেবি কোনও চাপের সম্মুখে নত হয়েছে কি না, তা এখনও প্রমাণসাপেক্ষ। যে কথাটি কোনও প্রমাণের অপেক্ষা করে না, তা হল, সেবি-র মতো স্বশাসিত, স্বনিয়ন্ত্রিত, এবং ভারতীয় অর্থব্যবস্থার পক্ষে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার উপর যে চাপ তৈরি হওয়া সম্ভব, এ কথাটি দেশের মানুষ এখন বিশ্বাস করেন। সেই চাপ কে বা কারা তৈরি করতে পারেন, এবং কেনই বা তাঁরা এমন চাপ তৈরি করবেন, সে বিষয়েও সাধারণ মানুষের ধারণা রয়েছে। ভারতের দুর্ভাগ্য, এই ধারণাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনও উপায় নেই।a