Birth rate

আশার আলো?

অবশ্য, সমগ্র দেশের ক্ষেত্রে এই অনুপাত বৃদ্ধি পেলেও দশটি রাজ্যে পুত্র ও কন্যাসন্তানের অনুপাত পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৫
Share:

অন্ধকারে সামান্য আলোর রেখা।

অন্ধকারে সামান্য আলোর রেখা। জন্মের সময় প্রতি হাজার পুত্রসন্তান-পিছু কন্যাসন্তানের অনুপাতে কিছু উন্নতি লক্ষ করা গিয়েছে জাতীয় নমুনা সমীক্ষার এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে। ২০১৭-১৯ সালের মধ্যে যা ছিল ৯০৪, ২০১৮-২০’র মধ্যে তা-ই বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯০৭। বৃদ্ধি সামান্যই, তবুও এই ‘উন্নতি’র একটি সম্ভাব্য কারণ, দেশে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ-নির্ধারণ এবং কন্যাভ্রূণ হত্যার মলিন ছবিটির কিঞ্চিৎ পরিবর্তন। অবশ্য একই সঙ্গে সমীক্ষাটি দেখিয়েছে যে, সমগ্র দেশের ক্ষেত্রে এই অনুপাত বৃদ্ধি পেলেও দশটি রাজ্যে পুত্র ও কন্যাসন্তানের অনুপাত পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গও জায়গা পেয়েছে সেই তালিকায়। এই রাজ্যে ৯৪৪ থেকে নেমে তা দাঁড়িয়েছে ৯৩৬-এ।

Advertisement

ভারতে ১৯৯৪ সালেই কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রবণতায় দাঁড়ি টানতে গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তা সত্ত্বেও সেই কু-অভ্যাসে লাগাম পরানো যায়নি। চণ্ডীগড়ের পিজিআইএমইআর-এর চিকিৎসকেরা ২০১৭ সালেই সতর্ক করেছিলেন যে, বিভিন্ন স্থানে গভীর রাত্রিতে গোপনে গর্ভবতী মহিলাদের বাড়িতে পৌঁছে যায় মেডিক্যাল টিম। ব্যবস্থা থাকে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ এবং গৃহেই গর্ভপাতের। এই ঝুঁকিপূর্ণ, অবৈধ গর্ভপাত অনেক ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুরও কারণ। কন্যাভ্রূণ হত্যা বন্ধ করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা যে আদৌ করা হয় না, করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম— সে বিষয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ আছে। ১৯৯০ সালে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ভারত-সহ এশিয়ার দেশগুলিতে মেয়েদের দুরবস্থা বোঝাতে ‘মিসিং উইমেন’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। বত্রিশ বছর পার করেও কথাটি আজও সমান প্রাসঙ্গিক। রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০২০ সালের এক রিপোর্ট অনুসারে, বিগত ৫০ বছরে বিশ্বে চোদ্দো কোটি ছাব্বিশ লক্ষ ‘হারিয়ে যাওয়া মেয়ে’র মধ্যে প্রায় চার কোটি ষাট লক্ষ মেয়েই ভারতের।

তবে জন্মের সময় ছেলে ও মেয়েদের অনুপাতে এই অসাম্যের অন্য একটি সম্ভাব্য কারণও রয়েছে। ভারতীয় পরিবারে প্রথম সন্তান পুত্র হলে দ্বিতীয় সন্তান গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে, দ্বিতীয় সন্তান হিসাবে মেয়ের জন্মের সম্ভাবনা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমছে। কন্যাসন্তানের প্রতি এ-হেন অনীহার পিছনে এখনও পণপ্রথার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। আইন সত্ত্বেও এই প্রথার স্বমহিমায় বজায় থাকা এবং কন্যাজন্মকে পরিবারের আর্থিক বোঝা মনে করার যোগসূত্রটি অগ্রাহ্য করার নয়। এটাও লক্ষণীয় যে, অতিমারি-পরবর্তী কালে মেয়েদের কাজে যোগদানের হার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। ফলে, মেয়েদের স্বনির্ভরতার সম্ভাবনাটিও মা-বাবার চোখে ধাক্কা খেয়েছে। সুতরাং, জন্মের সময় ছেলে ও মেয়ের অনুপাতকে উন্নত করতে গেলে কন্যাভ্রূণ হত্যা সংক্রান্ত আইনটি কঠোর ভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি এই আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলিরও নিরসন গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, নজরদারি প্রয়োজন শিশুকন্যার মৃত্যুর হার এবং তাদের অপুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলিতেও। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে লাল কেল্লার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নারীর সম্মানরক্ষার প্রসঙ্গটি তুলেছেন। অথচ, সেই দেশেই আজও কন্যাসন্তানের জন্মকে অবাঞ্ছিত মনে করা হয়— এও কি সমগ্র জাতির লজ্জা নয়?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement