United Nations' International Day of Persons with Disabilities

যাঁদের একটু বেশি যত্ন চাই

শিশু, শ্বাসকষ্টযুক্ত বা মানসিক ভাবে অস্থির ব্যক্তিদের মুখে মাস্ক রাখা যাবে না, এমনকি আপত্তি থাকলে বা চলাফেরায় স্বচ্ছন্দ না হলে বার বার হাতশুদ্ধি বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়াতেও অসুবিধে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাড়ির লোক বা শুশ্রূষাকারীকেই সতর্কতা মেনে চলতে হবে।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৪৭
Share:

রাষ্ট্রপুঞ্জ-নির্ধারিত বিভিন্ন দিবস পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য আগের বছরের তুলনায় কতটা উন্নতি হয়েছে, তার হিসেব কষা। কোভিড-আবহে অনেকগুলো দিবসই কার্যত নিয়মরক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। দু’-একটা ওয়েবিনারের খবর পাওয়া গেল। অন্যান্য বছর অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের সশরীর উপস্থিতি জনচেতনা বাড়ায়, এ বার তা হয়নি। এখনকার পরিস্থিতিতে তা মেনে নেওয়া ছাড়া গতি নেই। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের উপর অতিমারির প্রভাব কতটা পড়েছে, সেই খোঁজ নেওয়া জরুরি।

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত মে মাসে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নির্দেশাবলি প্রচার করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে সাধারণত কম বলে তাঁদের রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই পরিবারের সঙ্গে বা বিশেষ আবাসে থাকার সময় অতিরিক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু, শ্বাসকষ্টযুক্ত বা মানসিক ভাবে অস্থির ব্যক্তিদের মুখে মাস্ক রাখা যাবে না, এমনকি আপত্তি থাকলে বা চলাফেরায় স্বচ্ছন্দ না হলে বার বার হাতশুদ্ধি বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়াতেও অসুবিধে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাড়ির লোক বা শুশ্রূষাকারীকেই সতর্কতা মেনে চলতে হবে। অন্যের সাহায্য ছাড়া কোনও কাজ করতে না পারা মানুষের পক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব নয়। ফলে কোভিডের মূল সতর্কতাগুলো পালন করা যাচ্ছে না। তাঁদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, ফলে দেখা দিচ্ছে মানসিক উদ্বেগ ও অস্থিরতা বাড়ার প্রবণতা। কোভিড সংক্রান্ত সাধারণ তথ্য জানা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। লকডাউনে শুশ্রূষাকারীরা আসতে না পারায় পরিবারের উপর চাপ পড়ছে।

এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ: যথাসম্ভব বাড়ি থেকে কাজ করা, পরিবার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য নেওয়া, বাইরের লোকের কাছাকাছি আসতে না দেওয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা। দরকারি জিনিস কাউকে দিয়ে কেনানো বা অনলাইনে কেনা। লাঠি, ওয়াকার, ক্রাচ, হুইলচেয়ার, চশমা, কানে শোনার বা কথা বলার যন্ত্র জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

Advertisement

প্রতিটি দেশের সরকারকে বলা হয়েছে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য ও নির্দেশ সহজ ভাবে, চিহ্ন ও ছবির মাধ্যমে, ব্রেল ও আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে। অতিমারিতে কাজ বন্ধ থাকায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দেখাশোনায় বাড়তি খরচের কথাও ভেবেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এঁদের ও পরিবারের আয়করে ছাড়, বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা, মাইনে না কাটা, বাড়ি থেকে কাজের অনুমতি, আর্থিক অনুদান ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। স্কুলগুলোকে অনলাইন ক্লাস চালু রাখতে বলা হয়েছে; নিয়মিত যোগাযোগে উৎসাহ দেওয়া, মন ভাল রাখার সঙ্গে কোভিড-শিক্ষাও দেওয়ার কথা। প্রশাসন ও পুলিশকে বলা হয়েছে ফোনে বা মাঝেমধ্যে বাড়ি গিয়ে খোঁজ রাখতে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রতিবেশীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের মানসিক ভাবে সুস্থ রাখার কথা বলা হয়েছে। বাড়িবন্দি সব বয়সের লোকেদের মধ্যেই অবসাদ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষমতা সীমিত বলে তাঁরা সহজেই উত্তেজিত হন, অস্বাভাবিক আচরণ করেন। তাই চাই বাড়তি সতর্কতা।

এই ব্যবস্থা সব দেশে সমান ভাবে কার্যকর করায় প্রধান অন্তরায় আর্থিক বৈষম্য। কোভিড সামলানোর যথাযথ ব্যবস্থা বুঝতে ও চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে অনেকটাই দেরি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অনেক, আক্রান্ত কয়েক কোটি। শুধুমাত্র কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংখ্যা পাওয়া গেলেও এর সঙ্গে আর্থিক বৈষম্যের সম্পর্কের পরিসংখ্যান নেই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের কত জন কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত, তা-ও অজানা। এক আমেরিকান গবেষণায় জানা যাচ্ছে, প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার হার কম, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অন্য সমবয়সিদের তুলনায় প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের মৃত্যুর হার তিন গুণ বেশি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে কারা আক্রান্ত হতে পারেন, তার একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সীমিত চলাফেরার ব্যক্তিরা (শুশ্রূষাকারীদের দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন); বোধশক্তি কম থাকায় বার বার হাত ধোয়া বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে অসমর্থ ব্যক্তিরা; এবং যাঁরা নিজেদের অসুবিধে প্রকাশে অক্ষম। এ ক্ষেত্রে সেবাদানকারীদের বেশি সতর্ক থাকা দরকার।

মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত, অথচ কাজ করতেন এমন অনেকেই এখন কর্মহীন। আর্থিক ও মানসিক প্রতিকূলতা তাঁদের ঠেলে দিচ্ছে গভীর অবসাদে। বাড়ছে অস্বাভাবিক আচরণ। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো বা রক্ত পরীক্ষার অভাবে রক্তচাপ, শর্করা চেপে বসছে শরীরে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুয়েরই অবনতি হচ্ছে ক্রমে। এই অবস্থায় কোভিড আক্রান্ত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। এখন সমাজ ও রাষ্ট্রের থেকে তাঁদের একটু বেশি যত্ন প্রাপ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement