মিডডে মিলে পঠন-পাঠনের ক্ষতি হয় না

শিক্ষকদের একাংশ মিডডে মিলকে সামনে রেখে ক্লাসে ফাঁকি দেন। এতে আর যাই হোক, মিডডে মিলের কোনও দোষ নেই। লিখছেন মহম্মদ জাহাঙ্গীর আলমমেনুটা আগের দিন ঠিক করে নিলেই ভাল হয়। টিম লিডার বাজার করা টিমকে কী এবং কতটা বাজার করতে হবে তা বলে দেবেন। সেই অনুযায়ী বাজার হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৫
Share:

আসুন, এক বার দেখে নেওয়া যাক, কী ভাবে মিডডে মিলের পুরো বিষয়টি চালানো যেতে পারে। মাসের প্রথমেই আন্দাজ মতো গোটা মাসের জন্য মুদিখানার শুকনো খাবারের বাজার করে নিলে সুবিধা হয়। বিশেষ করে ডাল, তেল, সয়াবিন, নুন, মশলা, পেঁয়াজ ইত্যাদি একসঙ্গে কিনলে খরচ কমে। আলু, ডিম সপ্তাহে এক দিন, আনাজ বাজার দু’দিন করলেই হয়। এক দিন আনাজ কিনলেই তিন দিন চলে। নষ্ট হয় না। সয়াবিনটা ভাল কোম্পানির কেনা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে আনাজ বিক্রেতা নিজেরাই স্কুলে মরসুমি আনাজ দিয়ে যান।

Advertisement

মেনুটা আগের দিন ঠিক করে নিলেই ভাল হয়। টিম লিডার বাজার করা টিমকে কী এবং কতটা বাজার করতে হবে তা বলে দেবেন। সেই অনুযায়ী বাজার হবে। টিম লিডার খাদ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মাসে এক বার সভা করে জানবেন, ওরা কী রকম খাবার পছন্দ করছে বা ওদের খাবার নিয়ে কোনও সমস্যা আছে কি না। যাঁরা বাজার করার দায়িত্বে আছেন তাঁরা বাজার করা দ্রব্যাদি স্টোরকিপারের হাতে তুলে দেবেন। গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বা কর্মী স্টোরকিপারকে সমস্ত গ্যাস সিলিন্ডার জমা দেবেন।

মিডডে মিল সরবরাহ

Advertisement

প্রতিদিন বিদ্যালয়ে প্রার্থনার পরে মিডডে মিলে যুক্ত অশিক্ষককর্মী খাদ্যমন্ত্রীদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে স্টোরকিপারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন। স্টোরকিপার সকাল ১০টার সময় রান্নার জন্য প্রাথমিক দ্রব্যাদি রাঁধুনিদের দেবেন। ১১টার মধ্যে রান্নার সমস্ত উপকরণ দিয়ে দিতে হবে। প্রাথমিক স্কুলে এক জন শিক্ষক এই কাজটি করবেন। সাকুল্যে দশ মিনিট সময় লাগবে।

টিফিনের ঘণ্টা পড়ার আগেই রাঁধুনিরা রান্না শেষ করে কিছুটা তরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে চাখতে দেবেন। রাঁধুনিরা খাবার দেওয়ার কাউন্টারে প্রস্তুত থাকবেন। টিফিনের ঘণ্টা পড়তেই খাদ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পড়ুয়ারা লাইন দিয়ে সাবানে হাত ও থালা ধুয়ে কাউন্টার থেকে খাবার নেবে। প্রয়োজন অনুযায়ী কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। খাবার নিয়ে পড়ুয়ারা চলে যাবে ডাইনিং হলে। ওখানে ওরা বসে খাবে। খাওয়ার পরে উচ্ছিষ্ট তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলবে। এই সময় দু’জন শিক্ষক বা শিক্ষিকা যাঁদের টিফিনের আগের ক্লাস ফাঁকা থাকবে তাঁরা পুরো খাওয়ানোর প্রক্রিয়া তদারকি করবেন। যাতে প্রত্যেক পড়ুয়া সব্জি, ডাল, ডিম ইত্যাদি ঠিক মতো পায় এবং কোনও রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

খাওয়ার পরে ডাইনিং টেবিল মোছা ও উচ্ছিষ্ট জিনিস পচনশীল খাবারের জায়গায় ফেলার জন্য আলাদা কর্মী দরকার। বারো থেকে তেরোশো পড়ুয়াকে পঁয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যে মিডডে মিল খাওয়াতে হলে চারটে খাবার দেওয়ার কাউন্টার করতে হবে। এবং ডাইনিং হলে একসঙ্গে চারশো ছেলেমেয়েকে বসে খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। রান্নাঘর যেন পরিষ্কার থাকে। রান্নার বাসনপত্র নিয়মিত পরিষ্কার থাকা জরুরি। ডাল, তেল এবং অন্য মশলা রাঁধুনিদের দেওয়ার পরে যেন নষ্ট না হয় তা দেখতে হবে। গ্যাস ব্যবহারের পরে সিলিন্ডার লক করে রাখতে হবে। গ্যাস ওভেন নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। রান্নাঘরে পোকা, আরশোলা, টিকটিকির যেন উপদ্রব না থাকে। রাঁধুনিদের মাথায় টুপি থাকা বাঞ্ছনীয়।

এ ভাবে দায়িত্ব ভাগ করে মিডডে মিল ব্যবস্থা চললে খাবার যেমন ভাল হয়, তেমনি কোনও বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সুষ্ঠু ভাবে পড়ুয়াদের খাওয়ানো যায়। পঠন-পাঠনেরও কোনও ক্ষতি হয় না। মিডডে মিলকে পড়ুয়াদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য মাসে এক দিন মরসুমি খাবারও খাওয়ানো যেতে পারে।

অনেকে প্রশ্ন তুলবেন, ফান্ড কোথায়? এই বরাদ্দে কী আর এত কিছু হয়? সত্যি কথা বলতে, বরাদ্দ টাকার সঙ্গে সদিচ্ছা থাকলেও উপায় হয়ে যায়। মুর্শিদাবাদের অনেক প্রাথমিক ও হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ এটা করে দেখাচ্ছেন। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, মিডডে মিল ব্যবস্থাকে কত সুন্দর ভাবে চালানো যায়। শুধুমাত্র কিছু স্কুলের অদক্ষ প্রধানেরা মিডডে মিলের দুর্নাম করেন এবং ফাঁকিবাজ শিক্ষকেরা মিডডে মিল ব্যবস্থাকে সামনে রেখে ক্লাসে ফাঁকি দেন। এতে আর যাই হোক, মিডডে মিলের কোনও দোষ নেই।

প্রধান শিক্ষক, লস্করপুর হাইস্কুল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement