বিষাদভোজন

মিড-ডে মিল লক্ষ লক্ষ শিশু ও তাঁহার অভিভাবকদের নিকট অত্যন্ত আকর্ষক এক প্রকল্প। বহু স্কুলেই তাহার পরিচালন সুষ্ঠু ভাবে হইতেছে, শিশুরা আনন্দ করিয়া একত্রে ভোজন করিতেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ২৩:৪০
Share:

মিড ডে মিল।

বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্নভোজনে নুন-ভাত জুটিয়াছে হুগলির একটি স্কুলের ছাত্রীদের, জানিয়া তৎপর হইয়াছে শিক্ষা দফতর। সপ্তাহের কোন দিন কী খাদ্য দেওয়া হইবে, তাহার তালিকা বিলাইয়াছে। ভাতের সহিত কবে সয়াবিনের ঝোল, কবে সব্জি, কবে ডিম, বাঁধিয়া দিয়া কর্তারা নিশ্চিন্ত হইয়াছেন। যেন তালিকা প্রস্তুত করিলেই তদনুসারে ভোজন চলিতে থাকিবে। এমন তালিকা কি পূর্বে ছিল না? ছিল বইকি। প্রতিটি জেলার সকল প্রধান শিক্ষকের নিকট সেই তালিকা রহিয়াছে। সপ্তাহে দুই দিন ডিম কিংবা মাসে এক দিন মাংস খাওয়াইবার বিধান তাঁহারা জানেন না, এমন নহে। কিন্তু টাকার অভাবে খাওয়াইতে পারেন না। অবশ্য হুগলির ওই স্কুলটিতে এক মাস শিশুদের যথাযথ খাবার জুটিল না, তাহার কারণ প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা। তাহার সমাধানও দুঃসাধ্য ছিল না, কারণ সংবাদ প্রকাশ পাইবার পর দিনই নুন-ভাত পরিবর্তিত হইয়াছে ডিম-ভাতে। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির প্রধান পরিবর্তিত হন নাই। শিশুর পুষ্টি, শিক্ষা ও আনন্দ বিধান আজ আর স্কুল কমিটির কাজের কেন্দ্রে নাই। ট্রেনের আসনে রুমাল ফেলিবার মতো, পরিচালন কমিটির আসনগুলিতে ক্ষমতাসীন দল তাহাদের কোনও এক সদস্যকে রাখিয়া দেয়। তাঁহাদের কাজ আসন দখল। ওই সদস্যরা শিশুদের প্রতিনিধি নহেন, কোনও প্রভাবশালীর প্রতিনিধি। স্কুল পরিচালনের এই বিকৃত রীতিতে কোনও পরিবর্তন হইল না। নির্বাচন করিয়া কমিটি গড়িলে পরিবর্তন হইত কি? বলা কঠিন। শিশুর প্রতি কমিটি উদাসীন, আপত্তি এখানেই।

Advertisement

মিড-ডে মিল লক্ষ লক্ষ শিশু ও তাঁহার অভিভাবকদের নিকট অত্যন্ত আকর্ষক এক প্রকল্প। বহু স্কুলেই তাহার পরিচালন সুষ্ঠু ভাবে হইতেছে, শিশুরা আনন্দ করিয়া একত্রে ভোজন করিতেছে। তাহারা শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা, পরস্পরকে সহায়তা করিবার শিক্ষাও পাইতেছে। অথচ প্রকল্পটির প্রতি সরকার অতিশয় কৃপণ। সম্প্রতি যৎসামান্য বরাদ্দ বাড়িয়াছে, কিন্তু তাহাতেও প্রাথমিক স্কুলের শিশুর ভাগ্যে পুরা পাঁচটি টাকা জোটে নাই। চার টাকা আটচল্লিশ পয়সায় কাঠ-ঘুঁটে হইতে ডাল-তরকারি-ডিম, সবেরই নাকি ব্যবস্থা হইবে। একটি ডিমের দাম পাঁচ টাকার কম নহে। অতএব সপ্তাহে দুই দিন ভাত-ডিম দেওয়া যাইবে কী রূপে, সেই দুরূহ অঙ্কটি কষিতে কর্তাদের বড়ই আপত্তি। তামিলনাড়ুতে কিন্তু রাজ্য সরকার অতিরিক্ত অনুদান দিয়া ছয় টাকারও অধিক বরাদ্দ করিয়াছে বিদ্যালয়ের শিশুর জন্য। পশ্চিমবঙ্গের শিশুর কপালে জুটিতেছে কেবল খাদ্যতালিকা, সেই সকল খাদ্য কিনিবার বরাদ্দ জোটে নাই। বহু বিদ্যালয়ে মাসে দুই বার কি এক বার ডিম জুটিতেছে। জলবৎ ডাল ও সয়াবিনের ঝোলেই শৈশবের স্বাদ বুঝিতেছে শিশু।

তবু যে কিছু শিশুর নিকট মিড-ডে মিল আনন্দভোজ হইয়া উঠিয়াছে, তাহার কৃতিত্ব শিক্ষকদের। নিজেরা চাঁদা তুলিয়া, গ্রামবাসীর নিকট অনুদান চাহিয়া, অতি সাবধানে অর্থ বাঁচাইয়া, কখনও স্কুলের মাঠে সব্জি ফলাইয়া, নানা উপায়ে তাঁহারা বাড়তি টাকা সংগ্রহ করিতেছেন। দুর্নীতির পরিণামে নুন-ভাতের দৃষ্টান্ত যেমন রহিয়াছে, তেমনই শিক্ষকের উদ্যমের জন্য সুখাদ্য ভোজনের নানা উদাহরণও রহিয়াছে। তবে শিশুর হাসিই তাঁহাদের পুরস্কার। শিক্ষা দফতর তাঁহাদের উদ্যোগের স্বীকৃতি দিবে, এমন আশা সামান্য।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement