দুর্ঘটনাগ্রস্থ উন্নাওয়ের নির্যাতিতার গাড়ি।—ছবি পিটিআই।
ভয়াবহতা কতখানি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, উত্তরপ্রদেশ তার সাক্ষী হচ্ছে। বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক ভয়ঙ্কর অসম লড়াইয়ে নেমেছিলেন যিনি, একের পর এক বিপর্যয় সামলে লড়ে যাচ্ছিলেন যিনি, সেই নির্যাতিতাই এ বার ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার। ভয়ঙ্কর ‘পথ দুর্ঘটনায়’ এখন মৃত্যুর মুখোমুখি নির্যাতিতা। ঘটনাপ্রবাহের পরতে পরতে এত ঝাঁকুনি যে, লজ্জা পেয়ে যেতে পারেন বলিউডের বা দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একশন থ্রিলার বিশেষজ্ঞরাও।
উন্নাওতে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল বিধায়কের বিরুদ্ধে। প্রথমে পুলিশ অভিযোগে কর্ণপাত করতেই চাইল না, বরং অভিযোগকারিণীর পরিবারের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করল। তার পরে অভিযোগকারিণীর বাবার মৃত্যু ঘটল পুলিশ হফাজতে। ধর্ষণ কাণ্ডের সাক্ষীর রহস্যমৃত্যু ঘটে গেল। এ বার একটা তীব্র গতির ট্রাক ভয়াবহ ধাক্কা মারল সেই গাড়িতে, যাতে নির্যাতিতা নিজে ছিলেন, তাঁর আইনজীবীও ছিলেন। ঘটনা পরম্পরায় চোখ রাখলে একে নিছক দুর্ঘটনা বলে ভাবতে পারা যায় কি?
যে বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তিনি উত্তরপ্রদেশের শাসক দল বিজেপির টিকিটেই নির্বাচিত। তিনি কতটা প্রভাবশালী, তা বোঝা গিয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে পুলিশের প্রাথমিক ভূমিকা দেখেই। পরে উন্নাওয়ের এই মামলা গোটা দেশের নজরে এসেছে, তুমুল হইচই হয়েছে, পুলিশকে আইনানুগ পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত করতে হয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে কোথায়? নির্যাতিতার পরিবারের উপরে একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসছিল। এ বার নির্যাতিতা নিজেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
উন্নাওয়ের এই ধর্ষণ কাণ্ডে উত্তরপ্রদেশের প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কোনও পদক্ষেপ করেনি, এমনটা বলা যাবে না। অভিযুক্ত বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন, এখনও জেলেই কাটাচ্ছেন। নির্যাতিতার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা তথা দেহরক্ষীর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে সে সব নস্যাৎ করেই ঘটে গেল বিপর্যয়। রায়বরেলীতে একটা ট্রাক অত্যন্ত রহস্যজনক ভাবে ধাক্কা মারল নির্যাতিতার গাড়িতে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
জবাব তো উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনকেই দিতে হবে। উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে সদর্পে দাবি করছে বিজেপি। ‘ফিয়ার-ফ্রি ইউপি’ বড়াই করে এই স্লোগান বা ট্যাগ লাইন শোনানো হচ্ছে। এই তার নমুনা! বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে সপরিবার মুছে যাওয়ার পথে এক তরুণী— এই হল উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিদর্শন!
নির্যাতিতা যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, তা সত্যিই দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কিছু, তা নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা থাকলেও তাকে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টাও যে সমান তালে চলছে, এমন সন্দেহ ক্রমশ দৃঢ়মূল হচ্ছে। প্রশাসন যদি পূর্ণ মাত্রায় সক্ষম হয়, তা হলে দুষ্কৃতীরা এত শক্তিশালী বা প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে না। যে ঘটনা গোটা দেশে হইচই ফেলে দিয়েছে, যে নির্যাতিতার পাশে সব রকম ভাবে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করতে উত্তরপ্রদেশের প্রশাসন বাধ্য হয়েছে, সেখানেও ঘটনা পরম্পরার গতি দুষ্কৃতীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সংশয় তৈরি হয় কী ভাবে? দুষ্কৃতীরা এত বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে কিসের বলে?
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় আহত উন্নাওয়ের ধর্ষিতা ‘সঙ্কটজনক’, উত্তাল দেশ, খুনের মামলা বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে
রায়বরেলীতে ঘটে যাওয়া ‘দুর্ঘটনা’টা প্রশাসনকে বিরাট প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করাল। হয় প্রশাসনের সদিচ্ছা নেই, অথবা প্রশাসন অক্ষম। না হলে এ ভাবে ফিল্মি খলনায়কের ছকে দেওয়া চিত্রনাট্য মেনে এগোতে পারে না ঘটনা প্রবাহ। জনসাধারণের বিশ্বাস কী ভাবে ফেরাবেন, উত্তরপ্রদেশের প্রশাসকরাই ভেবে দেখুন।