জলবৎ

আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে গ্রামীণ গৃহস্থালিতে নলবাহিত জল পৌঁছাইবার নীতি জলের গ্রাহকদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

ছবি পিটিআই।

দিদিকে সমস্যার কথা বলিতে বাধা নাই। কিন্তু কী কথা বলিবার কী ফল হইবে, তাহাও ভাবিতে হইবে। সম্প্রতি বর্ধমানের কিছু গ্রামবাসী নালিশ করিয়াছিলেন, নলবাহিত জল তাঁহাদের কিনিতে হইতেছে। তাহাতে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হইয়া নির্দেশ দিয়াছেন, বিনামূল্যে জল সরবরাহ নিশ্চিত করিতে এখন হইতে নলবাহিত জল ব্যবস্থা চালাইবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এত দিন এই দায়িত্ব ছিল পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েতই পাম্প চালাইবার কর্মী নিয়োগ করিত, রক্ষণাবেক্ষণ করিত, এবং বাড়িপ্রতি মাসিক কুড়ি টাকা হইতে পঞ্চাশ টাকা শুল্ক আদায় করিত। এই টাকা দিতে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অপারগ, বা শুল্ক অনাদায়ে জলের সংযোগ বন্ধ করা হইয়াছে, গ্রামবাসী প্রতিবাদ করিতেছেন— এমন কোনও ইঙ্গিত মেলে নাই। বর্ধমানের যে বাসিন্দারা দিদির নিকট নালিশটি করিয়াছেন, গ্রামের আর পাঁচ জন তাঁহাদের সহিত সহমত কি না, তাঁহাদের তুলনায় দরিদ্রতর পরিবারগুলি সাগ্রহে এই ব্যবস্থাকে গ্রহণ করিয়াছে কি না, কিছুই অনুসন্ধান করা হয় নাই। অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি বদলাইয়া গেল, বিকেন্দ্রিত একটি ব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ ঘটিয়া গেল। কিন্তু, কিসের ভিত্তিতে? মানুষের সমস্যার প্রতি সংবেদী হইতে হইবে সরকারকে, সন্দেহ নাই। কিন্তু প্রশাসনিক নীতি প্রণয়ন বা পরিবর্তনের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াও মানিতে হইবে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে গ্রামীণ গৃহস্থালিতে নলবাহিত জল পৌঁছাইবার নীতি জলের গ্রাহকদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়াছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির অনুদানের শর্ত এই যে, শহর ও গ্রামে স্থানীয় প্রশাসন বা মানুষদের গোষ্ঠী (পুরসভা, পঞ্চায়েত প্রভৃতি) জলবণ্টন ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করিবে, এবং গ্রাহকদের নিকট উপযুক্ত মূল্য নিবে। ইহাতে স্বচালিত, স্বনির্ভর একটি ব্যবস্থা নির্মিত হইবে, এবং জলের মূল্য থাকিবার জন্য অপচয়ও নিবারিত হইবে। সম্প্রতি কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রক ‘জল জীবন মিশন’ ঘোষণা করিয়াছে, তাহাতেও পঞ্চায়েতের হাতে নলবাহিত জল ব্যবস্থার দায়িত্ব রাখিবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহার বিপরীত অবস্থান লইলেন। সম্ভবত ইহার মূলে রহিয়াছে জলের উপর শুল্ক আদায়ে তাঁহার বিরাগ। বিনামূল্যের জলে দরিদ্রের কী উপকার হইয়াছে বলা কঠিন, কারণ শহরের বস্তিবাসীও পানীয় জল কিনিয়া খান। গ্রামে মহিলারা দূর হইতে জল বহিতে ব্যয় করিতেছেন শ্রম। সুবিধা হইয়াছে ধনীদের, তাঁহারা যথেচ্ছ জল অপচয় করিতেছেন। দরিদ্রের স্বার্থেও প্রশাসনিক নীতির দৃষ্টিতে যাহা গুরুত্বপূর্ণ, তাহা যথেষ্ট জলের জোগান, এবং ঘরে ঘরে তাহার সরবরাহ।

বাড়িতে নলবাহিত জলের সরবরাহে দেশের মধ্যে সর্বাপেক্ষা লজ্জাজনক স্থানে রহিয়াছে তিনটি রাজ্য — মেঘালয়, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যগুলিতে নলসংযুক্ত বাড়ি মাত্র এক শতাংশ। গত জুন মাসে কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রকের রিপোর্ট এমনই বলিয়াছে। অতএব দুইটি প্রশ্ন না করিলেই নয়। এক, যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর নলবাহিত জল সরবরাহের প্রসার করিবার কাজে এতই পিছাইয়া আছে, তাহার ঘাড়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চাপাইবার সিদ্ধান্ত কেন? সেই দায়িত্ব সামলাইবার লোকবল, অর্থবল ওই দফতরের আছে কি? দুই, শুল্ক মাফ করায় সরকারের খরচ বাড়িল সাড়ে তিনশো কোটি টাকা। সে টাকা জোগাইবে কে? দিদিই বলুন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement