মঞ্চে তখন ভাষণ দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
লক্ষ্য যে দিল্লিতে স্থির করছেন, তৃণমূল নেত্রী সে কথা এক বছর আগেই জানিয়েছিলেন। কেন লক্ষ্য দিল্লি, কী উপায়ে তার দখল নেবেন, নিজের খাস তালুকই বা কোন রণকৌশলে ধরে রাখবেন, ভেঙে ভেঙে বুঝিয়ে দিলেন এ বার। শহিদ স্মরণের ২৫ বছর পূর্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলকে লোকসভার লড়াইয়ের বিষয়ে খুব স্পষ্ট দিশা নির্দেশ দিয়ে দিলেন এ ভাবেই।
জনসম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুড়ি মেলা ভার। জনতার সঙ্গে আলাপচারিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই অত্যন্ত সাবলীল। তাই যে কোনও জনসমাবেশেই মমতার ভাষণ দীর্ঘ হয়। আর সমাবেশের তারিখ যদি হয় একুশে জুলাই এবং নাম যদি হয় শহিদ স্মরণ, তাহলে তো বিপুল জনতার উৎসাহ উদ্দীপনার ভরকেন্দ্র হয়ে দীর্ঘক্ষণ বিরাজ করাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভ্যাস। এবারও একুশের মঞ্চ থেকে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রী অনেক কথা বললেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও একুশে জুলাই যেন হয়ে উঠল এক নেত্রীর সঙ্গে তাঁর অগণিত অনুগামীর বাৎসরিক প্রাণের আলাপের পরিসর। কিন্তু সেই সমস্ত আবেগ, উদ্দীপনা, আপ্লুতি সরিয়ে রেখে মমতার ভাষণের সার কথাটা যদি বুঝে নিতে হয়, তাহলে বলতে হয়, তিনটি কথা খুব স্পষ্ট করে বলে দিলেন মমতা: প্রথমত, বিজেপিকে সরানোই মূল লক্ষ্য তাঁর, দ্বিতীয়ত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের লক্ষ্যে এগোবেন তিনি, তৃতীয়ত, বাংলায় তৃণমূল একাই লড়বে।
একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি এখন তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ, বলা যেতে পারে একমাত্র প্রতিপক্ষ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপিকে সরানোই আপাতত তৃণমূলের মূল লক্ষ্য অতএব। খুব সোজাসাপটা শব্দে এ কথা কর্মীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কী ভাবে সরাতে হবে বিজেপিকে? পথও বাতলেছেন মমতা নিজেই। বাংলায় তৃণমূল প্রধান ভূমিকা নেবে বিজেপিকে হারানোর ‘অভিযানে’। অন্যান্য রাজ্যে কোন কোন দলের উপর ভরসা রাখা হবে, তার ইঙ্গিতও নিজের ভাষণে দিয়েছেন মমতা। প্রস্তাবিত ফেডেরাল ফ্রন্টের চেহারা কী রকম হতে চলেছে, তার স্পষ্ট আভাস দিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সংসদে পথ দেখাবে তৃণমূল, শহিদ মঞ্চে ঘোষণা মমতার, বাংলায় ‘একলা চলো’
বাংলায় কারওকে দরকার নেই তৃণমূলের, তৃণমূল একাই ভাল লড়বে— এমন কথাও তৃণমূল নেত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে একুশের মঞ্চ থেকে। এ রাজ্যের রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের যে লড়াই, তাতে কংগ্রেসের বা বামেদের কোনও সাহায্যই তিনি পাচ্ছেন না, স্পষ্ট করেছেন মমতা। একুশের সমাবেশ মঞ্চ থেকেই জানিয়েছেন, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গ তাঁর প্রয়োজনও নেই। অর্থাৎ এ রাজ্যে বিজেপি বিরোধীতার পরিসরে নিজেকেই জনতার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরেছেন তৃণমূল নেত্রী।
লোকসভা নির্বাচনের অনেকটা আগেই যে ভাবে দলের বিরাট সংখ্যক কর্মীর সামনে তৃণমূলের রাজনৈতিক লাইন স্পষ্ট করে দিলেন মমতা, তাতে সংশয়ের আর কোনও বাতাবরণ রইল না। লোকসভার লড়াইয়ের জন্য কোন পথ ধরে এগোতে হবে, ঘরে ঘরে গিয়েও কী বলতে হবে, তার মূল রূপরেখা জেনে গেলেন কর্মীরা।
মমতার এই বার্তা সঙ্গী করে ২০১৯-এর নির্বাচনী রণক্ষেত্রের দিকে এখন থেকেই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ফেলতে শুরু করবেন তৃণমূল কর্মীরা— মমতা নিজে অন্তত তেমনটাই আশা করবেন। তবে প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছে বিজেপি-ও। সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা তৃণমূল কর্মীরা এবার কতটা সংগঠিতভাবে করেন, নজর থাকবে সে দিকেই।