লন্ডন ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।
হোয়াইট হলের ওল্ড ওয়র অফিসে জমায়েত হতেন তাবড় রাজনীতিবিদ, সেনাপ্রধান, গুপ্তচররা। দুই বিশ্বযুদ্ধে কত পরিকল্পনা চলেছে সেখানে! সিগার ঠোঁটে কর্মরত উইনস্টন চার্চিল, গটমট করে বিশাল সিঁড়ি ভাঙছেন জেনারেলরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নৌসেনার গোয়েন্দা বিভাগে ছিলেন জেমস বন্ডের স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং। ১৯১৪-য় ভৌগোলিক বিভাগে আসেন টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স ওরফে ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে লর্ড কিচেনার এই দফতর থেকেই ‘ইয়োর কানট্রি নিডস ইউ’ প্রচার কর্মসূচি চালিয়ে সাড়া ফেলেন। অফিসভবনটিতে চার কিলোমিটার বিস্তৃত করিডর, হাজারেরও বেশি অফিস, চিঠিপত্র দিতে করিডরে সাইকেল চলত। এখানেই গোয়েন্দা বিভাগ এমআই ফাইভ ও সিক্সের জন্ম। বন্ডের উপন্যাসের মতো গুপ্তচরদের জন্য খিড়কিও ছিল। বিগত ১২০ বছর দফতরের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ ছিল, অন্দরমহলের খবর কাকপক্ষীতেও টের পেত না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থেকে অধিগ্রহণের পর হিন্দুজা গোষ্ঠী র্যাফেলস হোটেলগোষ্ঠীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ভবনটিকে শীর্ষ মানের হোটেলে পরিণত করেছে। ১৯০৬-এ তৈরি ভবনের ঐতিহাসিক বাতাবরণ অক্ষুণ্ণ রয়েছে, প্রকাণ্ড থাম, মূর্তিও অক্ষত। খিলানদরজার নীচ দিয়ে যেতে যেতে পানপাত্রে চুমুকের সঙ্গে এই বাড়ির ইতিহাসে প্রবেশ করতে পারবেন আজকের অতিথিরা।
ঐতিহাসিক: ‘ওল্ড ওয়র অফিস’ বা ‘ওডব্লিউও’ হোটেলের অন্দরসজ্জা। —নিজস্ব চিত্র।
নাট্যমঞ্চে কলকাতা
চার্লস ডিকেন্সের জনপ্রিয় উপন্যাস গ্রেট এক্সপেক্টেশনস-কে ভারতীয় রূপ দিয়েছেন নাট্যকার তনিকা গুপ্ত। পিপ, এস্টেলা, ম্যাগউইচ, মিস হ্যাভিশ্যামকে ভিক্টোরিয়ান যুগের লন্ডন থেকে তুলে এনেছেন ১৮৯৯-এর ব্রিটিশশাসিত বাংলায়। উঠে এসেছে ঔপনিবেশিকতা, কুসংস্কার, সাংস্কৃতিক সত্তার বিষয়গুলি। ছোট শহরের ছেলে পিপ লন্ডনে গিয়ে বড় মানুষ হতে চায়। উচ্চাকাঙ্ক্ষার এই কাহিনির আবেদন বিশ্বজনীন। চরিত্রগুলিও কালোত্তীর্ণ। নাটকে পিপের নাম বদলে হয়েছে ‘পিপলি’। শ্রেণিবৈষম্য ও ব্রিটিশশাসিত জীবনের সংগ্রাম দেখেছে সে। উপন্যাসের মতোই পিপের মোলাকাত হয় জেল পালানো কয়েদি ম্যাগউইচের সঙ্গে (নাটকে ‘মালিক’)। সাম্রাজ্যের ভগ্নপ্রায় দশার জীবন্ত নিদর্শন মিস হ্যাভিশ্যামের সঙ্গী হয় সে, দেখা হয় এস্টেলার সঙ্গে। এক গোপন সুহৃদ পিপলির কলকাতায় আসার খরচ জোগান। সে গৃহশিক্ষক পায়, পশ্চিমি পোশাক পরে, ব্রিটিশদের বৃত্তে মেলামেশা করে। ঔপনিবেশিক ভারতে ইংরেজ ভদ্রলোকের মতো আচরণ করতে শেখে। হারিয়ে ফেলে নিজের সাংস্কৃতিক শিকড়টিকে, এখন সে নিজের অতীত ও পরিবার নিয়ে লজ্জিত। নাটকটি ম্যানচেস্টারের থিয়েটারে দেখানো হচ্ছে।
জনসন ও জলটিকটিকি
প্রধানমন্ত্রীরা কি বাড়িতে সুইমিং পুলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন? মার্চে ঋষি সুনক তাঁর ইয়র্কশায়ারের প্রাসাদটির সুইমিং পুলে জল গরম করতে চাইলে দেখেন এলাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুতের জোগান নেই। তিনি আড়াই লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক গ্রিডের ব্যবস্থা করেন। পরিবেশকর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও অক্সফোর্ডশায়ারে তাঁর ৩২ লাখ পাউন্ডের বাড়ির বাইরে পুল চাইছেন। কিন্তু ওই এলাকায় বাগানের নালায়, পুকুরে ‘গ্রেট ক্রেস্টেড নিউট’দের (কিছুটা ব্যাঙ, কিছুটা টিকটিকি) বাস। এতে, নিউটগুলি বাসস্থান হারাবে বলে নগর পরিকল্পকরা আপত্তি তুলেছিলেন। জনসন জানিয়েছেন, তাঁর জমির অন্যত্র মাটি খুঁড়ে পুকুর কেটে প্রাণীগুলির প্রাকৃতিক বাসস্থান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। ‘টিকটিকি’ সংরক্ষণের অঙ্গীকারের পরে পুলের অনুমতি মিলেছে।
বিরল: গ্রেট ক্রেস্টেড নিউট। —নিজস্ব চিত্র।
হ্যারি পটারকেই দরকার
ঋষি সুনক ভোটারদের সামনে নিজেকে গৃহস্থ প্রতিপন্ন করতে আগ্রহী। দলীয় সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। অনেকের ধারণা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সুনকের এটিই প্রথম ও শেষ দলীয় সম্মেলন। জনমতে তাঁর দল পিছিয়ে। সুনকের পরিচয় দিতে গিয়ে অক্ষতা বললেন: তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, রোম্যান্টিক কমেডির ভক্ত। পরে সুনক জানিয়েছেন, দু’জনে এক সঙ্গে প্রথম পার্টিতে গিয়েছিলেন হ্যালোউইনে। তিনি হ্যারি পটারের পোশাক পরেছিলেন। পটার-জাদুর ভেল্কিতে দু’জনে শীঘ্রই ডেট করতে শুরু করেছিলেন।